চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে ২৯তম অলিম্পিক গেমস সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। এর আগে কখনও এবারের মতো হয় নি যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি খেলোয়াড়, কোচ, ৮০টিরও বেশি রাষ্ট্র প্রধান, সরকারী নেতা ও রাজ প্রতিনিধি এবং ৩০ হাজারেরও বেশি সংবাদদাতা এবং ১০ হাজারেরও বেশি বিদেশী পর্যটক পেইচিংয়ে এসে জড় হয়েছেন।
আতিথেয়তার মধ্য দিয়ে চীনারা বিভিন্ন ভাবে নানা দেশের বন্ধুদের স্বাগত জানায়। আগস্ট মাসে পেইচিংয়ে তাঁরা কেবল চমত্কার অলিম্পিক গেমস দেখতে পেরেছে তাই নয়। বং তারা একটি বাস্তব চীনকেও দেখতে পারবেন।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইভান ভাসিউনিক এই প্রথমবার পেইচিংয়ে এসেছেন। তিনি বলেন,
"চীনে আসার আগে আমি অনেকবার এখানকার খাদ্য, পানি আর হাওয়ার সমালোচনা শুনেছি। এখানে আসার পর আমি কয়েকবার চীনা খাবার খেয়েছি। আমি বলতে চাই আসার আগে আমার কোনো চিন্তা ছিল না, আসার পরও কখনো এগুলো নিয়ে চিন্তা করি নি।"
ইভান ভাসিউনিকের মতো প্রথমবার চীনে এসে জার্মানীর মেয়ে ও খেলোয়াড় ফ্রাইডেরিক ফেইল বলেন,
"আমাকে স্বীকার করতে হবে যে, পেইচিংয়ে আশার আগে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। পেইচিংয়ের আবহাওয়া খারাপ হলে খেলোয়াড়রা দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নিতে পারবে না। কিন্তু এখানে আসার পর আমি অবাক হয়ে গেছি। আগে এখানকার আবহাওয়ার মান নিয়ে আমি যে খারাপ কথা ভেবেছিলাম, আসলে তা সঠিক নয়"।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইভান ভাসিউনিক ও জার্মানীর খেলোয়াড় ফ্রাইডেরিক ফেইলের মতো অনেক বিদেশী পেইচিংয়ে আছেন। পেইচিংয়ে আসার আগে তাঁরা যে চীনের তথ্য পেয়েছে, সেটা পেইচিংয়ে আসার পর বদলে গেছে। চীনের ছাপ ও বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে বলে তাঁরা উন্মুক্তভাবে তাদের মনের কথা ব্যক্ত করেছেন। এর কারণ দুটো:
প্রথমতঃ গত ৩০ বছর চীনে সংস্কার ও উন্মুক্ত নীতি প্রনয়ণের পর একটি উন্নয়নমূখী দেশ হিসেবে চীনে বহুল পরিবর্তন হয়েছে। চীনের এ পরিবর্তন সম্পর্ক জানা ও আত্মস্থ করতে সময় লাগবে। বিশ্বের কাছে তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
দ্বিতীয়তঃ পাশ্চাত্যের প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলোর নিয়ন্ত্রণ বা বিশ্বের জনমতকে উপেক্ষা পরিস্থিতিতে এ মাধ্যমগুলোর জনমত জনগণের মনে সত্যিকার দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরবে এবং গভীর ছাপ ফেলবে। পাশ্চাত্যের কিছু দায়িত্বহীন সংবাদ মাধ্যম নানা অজুহাত চীন সম্পর্কে অবাস্তব তথ্য প্রচার করে আসছে। ফলে চীনের ছাপ ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেজন্য বিশ্বের উচিত চীনের সঙ্গে বাস্তবতার আলোকে যোগাযোগ করা। চীনকে চিনতে বিশ্বের সুযোগেরও প্রয়োজন রয়েছে ।
চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রচার গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ছেন ওয়েই সিং মনে করেন, চীনের দ্রুত উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বের জানার জন্য পেইচিং অলিম্পিক গেমস একটি সুযোগ প্রদান করেছে। "নিজের চোখে দেখা" চীনকে জানার একটি সক্রিয় পদ্ধতি।
"বিশ্ব জনগণের মনে চীনের ভাবমূর্তির কেমন ? উন্নত দেশগুলোর প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলো তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে। কিন্তু বিদেশী বন্ধুরা চীনে আসলে চীনে স্থিতিশীলতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ অনুভাব করে চীনের প্রতি তাদের ভিন্ন ধারণা দূরীভূত হতে পারে।
চীনে একটি পুরোনো কথা আছে। অনেকবার শুনলেও একবার দেখার তুলনাই আসল। এর অর্থ হচ্ছে অন্য মানুষের কাছ থেকে একশ বার শোনার চেয়ে নিজে ঘটনা স্থলে একবার দেখা ভালো। নিজের চোখে যেটা দেখা যায়, সেটাই বাস্তব। পেইচিংয় অলিম্পিক গেমস দেখার জন্য আসা অনেক বিদেশী বন্ধুর মনে এ অনুভূতি উজ্জ্বল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সিটেনি মুর বিশেষতঃ অলিম্পিক গেমস দেখার জন্যই পেইচিং এসেছেন। তিনি বলেন,
"চীনারা অনেক ভালো এবং বন্ধুত্বপুর্ণ। তারা অন্যকে সাহায্য করতে পছন্দ করেন। পেইচিং নগর অনেক সুন্দর ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। অলিম্পিক গেমসের জন্য পেইচিং অনেক সুন্দর হয়েছে।
প্রাচ্য ও পশ্চাত্যের মধ্যে সংস্কৃতির পার্থক্য বেশি বলেই দু'পক্ষের সমঝোতা ও আদান-প্রদান জোরদার করতে হবে। চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রচার কেন্দ্রের পরিচালক ছেন ওয়েই সিং বলেন,
"বিশ্বায়ন হওয়ার কারণ হচ্ছে বিভিন্ন জাতির মানুষ ও বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে আদান-প্রদানের সময় পরস্পরের একীকরণ আবিস্কার করা। পরস্পরের যোগাযোগ থাকলে সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। সম্পর্ক থাকলে পরস্পরের সমঝোতার সম্ভাবনাও বেশি।
পেইচিং অলিম্পিক গেমস বিদেশী বন্ধুদের জন্য একটি সুযোগ প্রদান করেছে বলে তা শুধুমাত্র একটি সুযোগ নয়। আতিথেয়তা চীনা জাতির ঐতিহ্য। সংস্কার ও উন্মুক্ত নীতির কারণে বিশ্বের কাছে চীনের দরজা খোলাই থাকবে। এ সম্পর্কে পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান লিউ ছি এ গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন,
"আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি, বিদেশী বন্ধুদের মনে চীনের দীর্ঘকালীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি, প্রাণশক্তিময় শহর ও গ্রাম এবং অতিথেয়তার ছাপ গভীরভাবে পড়বে। পেইচিং সবাইকে স্বাগত জানায়।" |