মাওরি নৃত্য নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় আদিবাসী মাওরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য । প্রাচীনকালে যুদ্ধে যাওয়ার আগে পরিবেশিত এই নৃত্য এখন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটি সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে । নিউজিল্যান্ডের খেলোযাড়রা সাধারণতঃ আন্তর্জতিক বাস্কেটবল, ফুটবল ও রাগবি প্রতিযোগিতার আগে মাওরি নৃত্য পরিবেশন করে থাকেন ।
এই নৃত্য পরিবেশনের উদ্দেশ্য শত্রু পক্ষকে ভয় দেখানো । এটি একটি চ্যালেঞ্জ। এতে খানিকটা বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে , শত্রু পক্ষকে পরাজিত করার পুরোপুরি ক্ষমতা তাদের আছে ।
চীনে নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত টনি ব্রাউন ক্রীড়া অনুশীলন খুব পছন্দ করেন । সকল স্বদেশীর ক্রীড়া অনুশীলনের ঐতিহ্যও তার ভাল লাগে ।
ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সকল খেলোয়াড় প্রাণপনে চেষ্টা চালাবেন এবং তাদের সংগ্রামী মনোবল দেখাবেন বলে নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা কামনা করেন । নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা কখনোই পরাজয় মেনে নিতে পারেন না । তারা রয়েছেন দারুণ অধ্যবসায়ী মনোবল ।
টনি ব্রাউন বলেন , নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা অলিম্পিক গেমস নিয়ে খুবই উত্সাহী । কারণ অলিম্পিক গেমস তাদের সংগ্রামী মনোবল প্রদর্শনের একটি ভালো সুযোগ ।
অলিম্পিক গেমস নিউজিল্যান্ডের জন্য এমন এক ধরনের উপলক্ষ যার মাধমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতার সুযোগ হবে । এতে বহু বছর ধরে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের অধ্যবসায়ের সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও সংগ্রামী মনোবলের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে ।
টনি ব্রাউন বলেন , অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ নিউজিল্যান্ডের বহু মানুষের স্বপ্ন । বেশ কিছু অলিম্পিক খেলোয়াড় নিয়ে অভিজ্ঞতা ও কাহিনী লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে । ১৯৬০ সালে রোম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে ৫ হাজার মিটার দৌড়ে স্বর্ণপদক জয়ী মুরেই হালবার্গকে কিছু দিন আগে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ মর্যদা- নিউজিল্যান্ড পদক প্রদান করা হয়েছে ।
তিনি স্বর্ণপদক জয় করার পর ৪৮ বছর পার হয়ে গেছে । এখনো তিনি ব্যাপক মর্যাদা ভোগ করছেন । নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা তাকে খুব সম্মান করেন । নিউজিল্যান্ডের একটি গরীব পরিবারে তার জন্ম । তিনি অবসর সময়ে দৌড় চর্চা করেন । রোম অলিম্পিক গেমসে অধ্যবসায়ী মনোবলের জোরে সকল প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন । এটাই নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সংগ্রামী মনোবলের প্রতীক ।
এ বছর পেইচিং অলিম্পিক গেমসে ৩২০ সদস্য বিশিষ্ট নিউজিল্যান্ডের একটি ক্রীড়া প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। গত অলিম্পিক গেমসগুলোতে অলিম্পিকের পদক সংখ্যার দিক থেকে নিউজিল্যান্ডের স্থান বিশ্বের প্রথম সারিতে ছিল । এবার অলিম্পিক গেমসে নিউজিল্যান্ড আরো বেশি সাফল্য অর্জন করবে বলে রাষ্ট্রদূত টনি ব্রাউন আশা করছেন ।
নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা সাধারণতঃ নৌকা চালান ও ঘোড় দৌড়সহ বেশ কয়েকটি ইভেন্টে পারদর্শী । গত অলিম্পিক গেমসগুলোতে এ সব ক্ষেত্রে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন । গত অলিম্পিক গেমসে পুরুষদের আয়রন ম্যান ট্রাইথলন ইভেন্টে নিউজিল্যান্ড স্বর্ণপদক ও রৌপ্যপদক জয় করে । এতে নিউজিল্যান্ড খুব গর্বিত ।
এ বছর নিউজিল্যান্ডের অলিম্পিক ফুটবল দল বাছাই প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে অলিম্পিক গেমসের ফাইনাল পর্বের খেলায় অংশ নিচ্ছে । অলিম্পিক গেমস উদ্বোধনের আগের দিনের সন্ধ্যায় চীনের অলিম্পিক ফুটবল দলের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা হবে । দু'দেশের মধ্যেকার ফুটবল প্রতিযোগিতা সম্পর্কে ইন্টারনেটে নানা রকম খবর বেরিয়েছে । রাষ্ট্রদূত ব্রাউন বলেন , প্রতিযোগিতায় খেলার মনোবল নৈপুণ্যের চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ ।
তিনি আশা করেন , তখন নিউজিল্যান্ড দল যথাসাধ্য চেষ্টা করবে । অবশ্যই চীনা দলের সমর্থক বেশি । নিউজিল্যান্ড শক্তিশালী ক্রীড়া বিভাগ নয় । কিন্তু অন্যান্য দেশের মতো নিউজিল্যান্ড খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতার উত্সাহ ও সংগ্রামী মনোবলও বেশি । তারা জয় নিয়ে আশাবাদী ।
ফুটবল প্রতিযোগিতা ছাড়া রাষ্ট্রদূত ব্রাউন এই অলিম্পিক গেমসের অন্যান্য ইভেন্টের খেলার উপরও গভীরভাবে নজর রাখছেন । ব্রাউন স্বদেশ ও অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের সাফল্যের অপেক্ষায় রয়েছেন । তিনি পেইচিং মহানগরকে খুব পছন্দ করেন । ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে তিনি পেইচিংয়ে প্রথম বার আসেন । তখনকার তুলনায় পেইচিংয়ের অনেক পরিবর্তন ও উন্নতি হয়েছে ।
তখন পেইচিংয়ে জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৫৫ লাখ । সর্বোচ্চ অট্টালিকা ছিল পেইচিং হোটেল , ব্যক্তিগত মোটর গাড়ি একেবারে ছিল না । পেইচিংয়ের প্রধান বড় সড়ক ছাং আনে ঘোড়া ও গাধা চালিত গাড়িও দেখা যেতো । ৪ বছর আগে চীনে নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি পেইচিংয়ে আবার আসেন । তখন পেইচিং অতি দ্রুত গতির উন্নয়ন পর্বে প্রবেশ করেছে । পেইচিং অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়াম ও ইনডোর স্টেডিয়ামগুলোর নির্মানকাজ ও চালু করায় পেইচিংয়ের অসাধারণ গতি প্রতিফলিত হয়েছে ।
পেইচিং অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়াম ও ইনডোর স্টেডিয়ামগুলোর নির্মাণকাজ একটি মহা প্রকল্প । সকল স্টেডিয়াম ও ইনডোর স্টেডিয়াম এর নির্মাণকাজ অলিম্পিক গেমস উদ্বোধনের কয়েক মাস আগে সম্পন্ন হয়েছে । বার্ড নেস্ট ও ওয়াটার কিউব স্থাপত্যশৈলির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে ।
নিউজিল্যান্ডের উদ্যোগে মাঝে মাঝে নানা রকম বড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় । এ দেশে পাহাড় ও হ্রদ বেশি । প্রতি বছর উন্মুক্ত গলফ প্রতিযোগিতা , মোটর রেস ও নৌকা চালানোসহ বিবিধ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় । রাষ্ট্রদূত ব্রাউন বলেন , আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে দেশও উপকৃত হয় ।
নানা রকম ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনগণের ক্রীড়া অনুশীলনের উদ্দীপনাও বেড়ে যাবে । নিউজিল্যাডের ক্রীড়া অনুশীলনের উত্সাহ বেশি । নিউজিল্যান্ডে নানা ক্রীড়া প্রতিয়োগিতায় অংশ নেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়দেরকেও স্বাগত জানানো হচ্ছে । তখন নিউজিল্যান্ডের ক্রীড়া অনুরাগীদের উত্সাহ আরো বাড়বে । নিউজিল্যান্ডের জনগণ নিজ দেশের খেলোয়াড়দের খুব পছন্দ করেন । যখন খেলোয়াড়রা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন , তখন নিউজিল্যান্ডের বহু অনুরাগী তাদের সঙ্গে যান । তারা নিজ দেশের খেলোয়াড়দের উত্সাহ দেন ।
ব্রাউন আরো বলেন , অন্যান্য অলিম্পিক গেমসের মতো পেইচিং অলিম্পিক গেমসে চিত্তাকর্ষক প্রতিযোগিতা ছাড়া স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে তার বিপুল সংখ্যক স্টেডিয়াম ও ইনডোর স্টেডিয়ামও মূল্যবান উত্তরাধিকারে পরিণত হবে । অলিম্পিক গেমসের পর সেগুলো জনসাধারণের শরীর চর্চা ও ক্রীড়া অনুশীলনের ক্ষেত্রেও যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করবে ।
(থান ইয়াও খাং) |