আগামীকাল বহু প্রতীক্ষিত পেইচিং অলিম্পিক গেমস ২০০৮-এর পর্দা উঠবে । এই ঐতিহাসিক মুহূর্তিটির সময়ের জন্য চীনারা বহু বছর ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন । এ উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যক্তির চীন এবং পেইচিংকে তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন । বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ওয়াং ইউও ঢাকায় আমাদের প্রতিনিধি মাহমুদ হাশিমকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রতি তার শুভকামনা এবং শ্রোতা বন্ধুদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন । শুভেচ্ছার পাশাপাশি ওয়াং ইউ পেইচিং অলিম্পিক গেমস সম্পর্কে নিজকের মতামতও জানিয়েছেন । তিনি বলেন :
৮ আগস্ট পেইচিং অলিম্পিক গেমস উদ্বোধন হবে । এখন প্রস্তুতির সর্বশেষ পর্যায় রয়েছে পেইচিং । এ ঐতিহাসিক সময়টির জন্য সকল চীনা বিভিন্ন সমস্যা অতিক্রম করেছেন এবং সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন । ২০০১ সালের ১৩ জুলাই পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের অধিকার পায় । তখন থেকে এ সাত বছরে ২৯তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস সফল হওয়ার জন্য পেইচিং নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে । যেমন বার্ড নেস্টসহ ১২টি অলিম্পিক স্টেডিয়াম নির্মাণ, ১১টি পুরোনো স্টেডিয়াম পুনর্নির্মাণ এবং ৮টি অস্থায়ী স্টেডিয়াম নির্মাণ করা । এর পাশাপাশি অলিম্পিক গ্রাম ও অলিম্পিক পার্কসহ অন্যান্য অবকাআমোও সময়মতো নির্মিত হয়েছে । অলিম্পিক গেমস চলাকালে পেইচিংয়ে সুষ্ঠু যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য পেইচিং আনুষ্ঠানিকভাবে জোড় বেজোড় নম্বর প্লেটের গাড়িগুলোকের জন্য একদিন পর পর চলাচলের নিয়ম চালু করেছে । নতুন নির্মিত তিনটি সাবওয়ে লাইনও চালু হয়েছে । বিভিন্ন কোম্পানী ও শিল্প প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা অফিস সময়সূচী নির্ধারণ করেছে । এ ছাড়া , পেইচিংয়ের বায়ুর গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য পেইচিং সরকার ও অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটি বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে । এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে মোটর গাড়ির নির্গমন নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাপকভাবে গণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন করা ।
আমরা সবাই জানি পেইচিং অলিম্পিকের স্লোগান হল "এক বিশ্ব , এক স্বপ্ন" , এ স্লোগান সম্পর্কে ওয়াং ইউ'র নিজের উপলব্ধি হচ্ছে :
এ স্লোগান ঐক্য , মৈত্রী , অগ্রগতি , সুষম , অংশগ্রহণ এবং স্বপ্নএই অলিম্পিক চেতনাকে সার্বিকভাবে ধারণ করতে পেরেছে। এতে অলিম্পিক চেতনার অনুপ্রেরণায় বিশ্ব মানবজাতির সুন্দর ভবিষ্যত্ সৃষ্টি করার অভিন্ন আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়েছে । এ থেকে পেইচিং এবং চীনা জনগণের পক্ষ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের সঙ্গে বৃহত্তম মানব পরিবার এবং সংস্কৃতির সুফল ভাগাভাগি করার এবং হাতে হাত মিলিয়ে ভবিষ্যত্ নির্মাণের প্রত্যাশা প্রকাশিত হয়েছে এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ১৩০ কোটি চীনার অবদান রাখার সদিচ্ছা ব্যক্ত হয়েছে ।
অলিম্পিকের জন্য বাংলাদেশও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে । বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে । এ সম্পর্কে ওয়াং ইউ আমাদের জানিয়েছেন :
১৫ জুলাই চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি ও বাংলাদেশের উসু কমিটির চেয়ারম্যানের উদ্যোগে বাংলাদেশের অলিম্পিক কমিটির সক্রিয় সহযোগিতায় আমরা ঢাকায় পেইচিং অলিম্পিক গেমস সম্পর্কিত একটি আলোচনা সভা আয়োজন করি। বাংলাদেশের অনেক তথ্য মাধ্যম এবং বন্ধু আমাদের অলিম্পিক গেমসের ওপর নিবিড় দৃষ্টি রাখছেন । প্রথমে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই । বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সাহায্যে পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের অধিকার পেয়েছে।তাই এসব দেশ যাতে হতাশ না হয় সে জন্য পেইচিং সরকার , পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটি এবং পেইচিংয়ের সকল নাগরিক অনেক উদ্যোগ নিয়েছে । পরিবেশ ও যোগাযোগ উন্নয়ন এবং অলিম্পিক স্টেডিয়াম নির্মাণ ছাড়া পেইচিং সক্রিয়ভাবে হোটেল ও রেঁস্তরার সেবার মান উন্নয়ন করেছে । অলিম্পিকের স্বেচ্ছাসেবকরাও নিজ নিজ ভূমিকা পালন করছেন । পেইচিংয়ের অনেক কমিউনিটিতে অবসর নেওয়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও অলিম্পিক গেমস চলাকালে বিদেশি বন্ধুদের সাহায্যের জন্য ইংরেজী ভাষা শিখছেন । পেইচিংয়ের বিভিন্ন পর্যটন স্থানও বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে ।
এবার অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের ৩৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পেইচিংয়ে যাবে । ওয়াং ইউ এ সম্পর্কে বলেন :
এবার বাংলাদেশের অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান , যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং সাংবাদিকসহ ৩৬ জনের প্রতিনিধিদলটি পেইচিংয়ে বিভিন্নঅলিম্পিক তত্পরতায় অংশ নেবে । আমি আশা করি তাদের সফর সফল হবে । যখন তারা বাংলাদেশে ফিরে আসবেন , তখন তারা আরো বেশি বাংলাদেশী বন্ধুর সঙ্গে তাদের পেইচিং সফরের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারবেন ।
তিনি আরো বলেন , অলিম্পিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ চেতনা হল অংশগ্রহণ এবং নিজের সীমাকে চ্যালেঞ্জ করা । আমার মনে হয় , ফল ভালো হোক , কিংবা মন্দ হোক , সর্বাত্মক চেষ্টাটাই আসল ব্যাপার । চীন ও বাংলাদেশ অনেক বছর ধরে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছে । শুটিং ও সাঁতারসহ বিভিন্ন ইভেন্টে আমরা বাংলাদেশের ক্রীড়া ইন্সটিটিউটগুলোতে প্রশিক্ষক পাঠিয়েছি । বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মানও অনেক উন্নত হয়েছে । বাংলাদেশের পুরোনো বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য নিজের ভূমিকা পালন করতে পেরে আমরা খুব আনন্দিত ।
সাক্ষাত্কার শেষে ওয়াং ইউ আবারও পেইচিং অলিম্পিকের জন্য শুভকামনা করেছেন । তিনি বলেন :
(রি ৬)
একজন চীনা এবং পেইচিংয়ের একজন নাগরিক হিসেবে পেইচিংয়ে অলিম্পিক আয়োজিত হওয়ায় জন্য আমি গর্বিত । আমার আন্তরিক আশা , পেইচিং অলিম্পিক গেমস সফল হবে । আমিও আশা করি এবারকার মহামিলন মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ পেইচিংয়ে এসে এ শহরের উন্নয়ন ও সম্প্রীতি উপলব্ধি করার সুযোগ পাবেন । |