রাজধানী স্টেডিয়াম পশ্চিম পেইচিংয়ে অবস্থিত। এর পূর্ব দিকে চিড়িয়াখানা। এ স্টেডিয়ামের ঠিক পাশ দিয়ে চলে গেছে বিখ্যাত বিদ্যান গ্রীষ্মপ্রসাদের ভেতর প্রবাহিত ছাং হো নদীর । উদ্যান, নদী আর আধুনিক স্টেডিয়াম মিলে তৈরি হয়েছে অনন্য দৃশ্য।
১৯৬৮ সালে এ স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়। গত শতাব্দির ৬০ এর দশকের "সেরা ১০টি স্থাপত্যের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। বাইরে থেকে দেখতে এটি ঘন ক্ষেত্রের মতো। আয়তন ৭ হেক্টর। তাতে প্রায় ১৮হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার এ স্টেডিয়ামটি চীনের বৃহত্তম ভলিবল স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে একটি এবং পেইচিংয়ের এক মাত্র আইস হকি স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির কাঠের মেঝে ইচ্ছা করলেই উঠিয়ে নেওয়া যায়। কাঠের ফ্লোর উঠিয়ে ফেলার পর উন্মুক্ত হয় টেরাজো ফ্লোর। টেরাজো ফ্লোরে পানি ব্যবহার করলে ফ্লোরের ভেতরের হিমায়ন পাইপের মাধ্যমে সারা বছরই এখানে বরফ থাকতে পারে। গ্রীষ্মকালেও দর্শকরা আইস হকি এমনকি আইস স্কেটিং দেখতে পারেন।
৪০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এ স্টেডিয়ামের আয়তন আরও বাড়িয়ে নানা ধরণের সংস্কার করা হয়েছে। অলিম্পিক গেমসের ভলিবল প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তোলার জন্য এ মধ্যে লাইটিং ব্যবস্থাও রয়েছে। এ স্টেডিয়ামটিতে" আকাশ জুড়ে তারার" মতো লাইটিং ব্যবস্থা ছিলো, অর্থাত্ প্রতিযোগিতা স্থলের মাথার ওপরে সারি সারি হলুদ লাইট। দর্শক আসন থেকে সে দিকে তাকালে মনে হয় যেন একটির পর একটি উজ্জ্বল তারা। লাইটিংয়ের আয়োজনটি ছিল বিশাল।
কিন্তু বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার স্টেডিয়ামের মানদণ্ডের দিক দিয়ে এই পুরোনো ডিজাইনে বড় ধরণের ত্রুটি ছিল। সেটি হচ্ছে যথেষ্ট আলোর অভাব। কারণ, "আকাশ জুড়ে তারার" ইমেজ আনার জন্য শ্যাডো বাতির পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় প্রত্যক্ষ বাতি । এ প্রত্যক্ষ লাইটের দু'টি ত্রুটি আছে। প্রথমত যথেষ্ট উজ্জ্বল নয়। দ্বিতীয়ত বাতি থেকে আলো বিচ্ছুরণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা খেলোয়াড়দের দক্ষতার ওপরে প্রভাব ফলতে পারে। কিভাবে ঐতিহ্য বজায় রেখে আলোর উজ্জ্বলতা বাড়ানো যায়?
ডিজাইনার পরিশ্রমী গবেষণার পর সিদ্ধান্ত নেন যে, স্টেডিয়ামের ছাদে যে প্রত্যক্ষ লাইট আছে, সেটা ওভাবেই থাকবে। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রের চার দিকে আরও বেশি বাতি যোগ করা হবে। বার বার লাইটের গ্রুপিং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডিজাইনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। স্টেডিয়ামের ছাদে ২২০টি ৪০০ ওয়াটের তারা ব্যবহৃত হবে এবং চার দিকে ১৩২টি ১০০০ ওয়াটের লাইট ব্যবহৃত হবে। এ ধরণের গ্রুপ ডিজাইন একদিকে যথেষ্ট উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে অন্যদিক এ লাইটিং দেখতেও খুবই সুন্দর। তারার সংখ্যাও ঠিকঠিকই পুরা ছাদের চাহিদা পূরণ করেছে। চার দিকের বাতিও ঠিকমতো সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে। তাছাড়া, এ দু'টি ব্যবস্থা দু'টি পাওয়ার লাইনে সংযুক্ত। প্রতিযোগিতা চলাকালে একটি লাইন নষ্ট হলেও , অন্যটা ঠিকমতোই কাজ করবে। এতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান নিশ্চিত থাকবে।
লাইটিং ব্যবস্থার সংস্কারের পর এ স্টেডিয়াম দেখতে আরও উজ্জ্বল হয়েছে। স্টেডিয়ামের ছাদে উজ্জ্বল তারাপুঞ্জ আর অতিরিক্ত লাইটগুলো তারার চার দিকে। এ দু'টি লাইটিং ব্যবস্থা পরস্পরের পরিপূরক হয়েছে স্টেডিয়ামটি আরও আলোকিত এবং সুন্দর হয়ে উঠেছে।
রাজধানী স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা আরও আধুনিক আরও সুন্দর আরেকটি স্টেডিয়াম পেরেছি। |