নতুন আকারের অবকাঠামো ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুত্, পরিবহন ও ডিজিটাইজেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক জীবিকার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি। নতুন আকারের অবকাঠামো ব্যবস্থা উন্নত করা মানে তথ্যায়ন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার 'সেতু নির্মাণ করা'। এটি চীনা অর্থনীতির উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন বাস্তবায়নে আরও বেশি চালিকাশক্তি যোগাবে।
বর্তমানে চীনা অর্থনীতি উন্নয়নের সম্ভাবনা ভালো হলেও, কাঠামো ও ব্যবস্থাগত সমস্যাসহ বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে, চীনের বাইরে কোভিড-১৯ মহামারী জটিলতর হচ্ছে। সংরক্ষণবাদ ও একতরফাবাদ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সম্পাদকীয়তে মনে করা হয়, চীনা অর্থনীতির নতুন প্রবৃদ্ধি পদ্ধতি অন্বেষণ করা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মানুষ লক্ষ্য করেছেন যে, কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে ডিজিটাল অর্থনীতি এই নতুন আকারের অর্থনীতি এই বিশেষ সময়পর্বে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বহুমুখী অনলাইন শিল্প দ্রুতভাবে বড় হয়েছে। অনলাইনে অফিস করা সংক্রান্ত সেবাগত প্ল্যাটফর্ম, অনলাইন শিক্ষা, বিনোদন এবং অনলাইন চিকিত্সা সেবা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য ব্যবস্থার চাহিদা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্পর্কোন্নয়নও গভীরতর হয়েছে। মহামারী শেষ হলে, এই নতুন আকারের অর্থনীতি অব্যাহত থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। চীন সার্বিকভাবে ডিজিটাল অর্থনীতির যুগে পা দিতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এটি অর্থনীতির বহুমুখী উন্নয়নে নতুন সুযোগও বয়ে এনেছে।
নতুন আকারের অর্থনীতি খাতে ব্যাপক পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বর্তমানে নতুন অবকাঠামো নির্মাণকাজে পুঁজির পরিমাণ দিন দিন বেড়েছে। আন্তর্জাতিক তথ্য কোম্পানি আইডিসি'র সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, নতুন অবকাঠামো নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, শিল্প রূপান্তর ও উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই সংস্থার অনুমান, ২০২০ সালে নতুন অবকাঠামো নির্মাণকাজে পুঁজির মোট পরিমাণ ১৬৩৮ বিলিয়ন ইউয়ান হবে।
চীনা বাজার বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য এক বিশাল আকর্ষণীয় শক্তি। চীনে স্পেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাণিজ্যিক কাউন্সিলর এবং অর্থনীতিবিদ এনরিক ভানহুর বলেন, মহামারীর প্রাদুর্ভাব, বাণিজ্যবিরোধ এবং মুনাফা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল ফ্যাক্টরের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউরোপ ও আমেরিকান শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে চীনের বিশাল অগ্রগতির ভাল চোখে দেখে। এক্ষেত্রে চীনের নব্যতাপ্রবর্তনের সুযোগ এবং বৈজ্ঞানিক পুঁজির যত্ন নেয় তারা।
বৈজ্ঞানিক নব্যতাপ্রবর্তন চীনা অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে ভূমিকা পালন করেছে, তা ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হয়। ২০১৯ সালে চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৩৫.৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা জিডিপি'র ৩৬.২ শতাংশ। এটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা (ডাব্লিউআইপিও) মনে করে, চীন ইতোমধ্যেই প্রধান প্রযুক্তি ব্যবহারকারী থেকে প্রযুক্তির উত্পাদনকারীতে পরিণত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক নব্যতাপ্রবর্তন ক্রমশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, চীন সরকারের বহু বছর ধরে নব্যতাপ্রবর্তন উন্নয়নের নীতি সফল হয়েছে।
(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)