মূল ভাষণে ওয়াং ই বলেন, বিশ্ব বর্তমানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আরেকটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী বিশ্ব কোন দিকে এগিয়ে যাবে? তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের উচিত সঠিক পথ বাছাই করা।
বৈশ্বিক পরিবর্তনের মুখে চীনের মনোভাব সম্পর্কে ওয়াং ই বলেন, শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন বিভিন্ন দেশের অভিন্ন বিষয়, এতে অবিচল থাকা প্রয়োজন। সমতা ও ন্যায্যতা বিভিন্ন দেশের যৌথ মূল্যবোধ, যা রক্ষা করা প্রয়োজন। সংহতি ও অগ্রগতি বিভিন্ন দেশের অভিন্ন বাছাই। পাশাপাশি উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতা বিভিন্ন দেশের সঠিক পথ।
ওয়াং ই বলেন, 'শান্তি ও উন্নয়ন রক্ষায় বড় দেশকে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হয়। অন্য দেশের নিরাপত্তার ছাড়া নিজ দেশের নিরাপত্তা লাভ করা যায় না এবং আধিপাত্যবাদের মাধ্যমে অন্য দেশের উন্নয়নের অধিকার নষ্ট করা যায় না। চীন অব্যাহতভাবে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিজ দেশকে অগ্রাধিকারে দেওয়া চিন্তাধারা বাদ দেওয়ার পাশাপাশি জিরো-সাম গেমের বিরোধিতা করবে।
ওয়াং ই বলেন, চীন ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধের সহযোগিতা চালাবে এবং বিশ্ব প্রশাসন সংস্কারে ইতিবাচকভাবে অংশগ্রহণ করবে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুততর হবে এবং গুণগত মানসম্পন্ন 'এক অঞ্চল, এক পথ' নির্মাণকাজ বেগবান করবে।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন তাঁর ভাষণে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিভিন্ন দেশের সন্দেহজনক ব্যবস্থার কারণে কোভিড-১৯ মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু উন্নত দেশ নিজ স্বার্থে মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। এর ফলে একতরফাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের উচিত বহুপক্ষবাদের চেতনা জোরদার করা এবং বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।
বান কি-মুন বলেন, কোভিড-১৯-এর সামনে জাতিসংঘের উচিত নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করা। এ সন্ধিক্ষণে যাবতীয় শক্তি প্রয়োগ করে বিশ্বব্যাপী সংকট মোকাবিলা করা প্রয়োজন। বিশ্বের একমাত্র আন্তর্জাতিক সংস্থা- যেখানে প্রায় সব দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, সেই সংস্থার উচিত সদস্য দেশগুলোকে বহুপক্ষবাদের চেতনা জোরদারে তাগিদ দেওয়া এবং তাদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা, যাতে বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়।
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুকুদা ইয়াসুও বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের স্থিতিশীলতা এশিয়া, এমনকি আন্তর্জাতিক সমাজের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতিসংঘ, জলবায়ু পরিবর্তন, অবাধ বাণিজ্য-সহ নানা ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আগের লক্ষ্য থেকে সরে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সমাজে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে গেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। 'কোনোভাবে আধিপত্য না-করা' হচ্ছে চীনের কূটনৈতিক কার্যক্রমের নীতি।
জানা গেছে, এ ফোরামে দেশি-বিদেশি শতাধিক বিশেষজ্ঞ 'বিশ্ব প্রশাসন ও বহুপক্ষবাদ, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনসহ নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন।