প্রসঙ্গ: বিশ্বব্যাপী মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৪-দফা প্রস্তাব
  2020-09-27 14:18:48  cri
সেপ্টেম্বর ২৭: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) গত ২৫ সেপ্টেম্বর জেনিভায় এর সদরদপ্তরে কোভিড-১৯ প্রকোপবিষয়ক নিয়মিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেন্দ্রোস আদহানম ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ বর্তমানের কোভিড-১৯ প্রকোপ বিশ্লেষণ করেন এবং মোকাবিলার ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানান।

তেন্দ্রোস আদ্‌হানম বলেন, উত্তর গালার্ধে ফ্লু'র মৌসুম আসছে। কিছু কিছু দেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের ৭০ শতাংশ কোভিড-১৯ রোগী দশটি দেশের বাসিন্দা। এ প্রকোপ মোকাবিলা জোরদারের জন্য চারটি প্রস্তাব দেন আদ্‌হানম। তিনি বলেন, 'প্রথমত: কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার রোধ করতে হবে এবং মহামারির প্রকোপ বাড়াতে সহায়ক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে; দ্বিতীয়ত: দুর্বল মানুষদের জীবন বাঁচাতে হবে; তৃতীয়ত: স্থানীয় কমিউনিটিকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে নিজ ও আশেপাশের মানুষের জীবন বাঁচানোর অধিকার দিতে হবে; চতুর্থত: মূল কাজ ভালোভাবে পরিচালনা করতে হবে, যেমন রোগীদের খুঁজে বের করা, কোয়ারিন্টিনে রাখা, পরীক্ষা ও চিকিত্সা দেওয়া এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকা লোকদের কোয়ারিন্টিনে রাখা।'

জানা গেছে, কোভিড-১৯ প্রকোপের প্রভাবে চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতি ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সংকুচিত হবে। অনেক দেশ অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করছে। তবে এর মধ্য দিয়ে চিকিত্সাব্যবস্থার পতন ঠেকানো যায়নি। পাশাপাশি, আতংক ও অনিশ্চয়তাও ছড়িয়ে পড়ছে। তেন্দ্রোস আদ্‌হানম আরও বলেন, ভ্যাক্সিন, সনাক্তকরণ পদ্ধতি ও চিকিত্সার পদ্ধতি, কোভিড-১৯ মহামারির অবসান ঘটানো এবং বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেসব ব্যবস্থা বিভিন্ন দেশের সকল, বিশেষ করে চরম দুর্বল মানুষদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, 'প্রাণ বাঁচানোর জন্য নেওয়া বিশ্বব্যাপী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি, এ প্রকল্পের সুফল যাতে বিশ্বের সবাই পেতে পারে ও সমভাবে বণ্টিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো এ জন্য একটি বিস্তারিত দলিল প্রণয়ন করবে।'

ডক্টর তেন্দ্রোস আরও বলেন, ২০২১ সালের শেষ দিকে এ প্রকল্পের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে ২০০ কোটি ভ্যাক্সিন বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। পাশাপাশি, মাঝারি ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর কাছে ৫০ কোটি কিট এবং ২৪ কোটি ৫০ লাখ চিকিত্সা কোর্স মেটানোর ওষুধ সরবরাহ করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের ঊধ্বর্তন উপদেষ্টা ব্রুস আয়ালওয়ার্ড বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের সঙ্গে কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন নিয়ে সহযোগিতা চালানোর বিষয়ে আলোচনা করছে। তিনি বলেন, 'আমরা চীনের সঙ্গে আলোচনা করছি। বর্তমানে চীনের ৪টি ভ্যাক্সিন তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। তাই চীন এ ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আকস্মিক ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।'

সম্প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলোতে কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি প্রকল্প প্রধান মারিয়া ভ্যান কার্কোভ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'ইউরোপীয় অনেক দেশে সনাক্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যার একটি কারণ তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে। তাই টেস্টের ক্ষমতা বেড়েছে। অন্যদিকে, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আগ থেকে বর্তমানের পরিস্থিতি আলাদা হয়েছে। এখন আমরা নানান টুল আয়ত্ত করেছি, যেগুলোর মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা যায়। গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যায় ব্যবধান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা হাসপাতালে ভর্তিযোগ্য রোগীর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি সামাজিক উত্পাদন ও জীবনযাপন পুনরুদ্ধার করব এবং একই সঙ্গে ভাইরাইসের বিস্তার রোধ করব।'

প্রেস ব্রিফিংয়ে তেন্দ্রোস আদ্‌হানম আরও বলেন, সব তথ্য-উপাত্ত থেকে এটা প্রমাণিত যে, নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তি প্রকৃতিতে। (রুবি/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040