১১ অগাস্ট একটি প্রেসিডেন্ট-নির্দেশনাপত্র দেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। পত্রে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রতিরোধক কার্যক্রমে ব্যাপক অবদান রেখেছেন—এমন কয়েকজনকে রাষ্ট্রীয় পদক ও সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
২০২০ সালে সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। চীন সবার আগে এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়। আর এই মহামারীর মোকাবিলায় চীনার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে অনেক চমকপ্রদ ঘটনা। অনেকে এ কার্যক্রমে চমত্কার অবদান রেখেছেন। তাদের আন্তরিকতা, সাহস, অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, জাতীয় সংবিধান অনুসারে, সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে রাষ্ট্রীয় পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটি।
আসলে কোভিড-১৯ মহামারী সবার জন্যই ভয়ঙ্কররূপে আবির্ভূত হয়। বিশ্বের অনেক দেশে এখনও এ মহামারী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, বাড়ছে সংক্রমণ। এ বিপজ্জনক ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর টিকা ও ওষুধ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। ভাইরাসকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করতে বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিবর্গের যৌথ প্রয়াস প্রয়োজন। চীনা চিকিত্সক, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ মানুষ সরকারের সাথে যৌথ প্রয়াসে সাফল্যের সঙ্গে কম সময়ের মধ্যে এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ প্রক্রিয়ায় অনেকে ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং কেউ কেউ নিজের জীবন পর্যন্ত উত্সর্গ করেছেন। এ কার্যক্রমে চীনা জাতির সাহসী চরিত্র ও একতা প্রতিফলিত হয়েছে; প্রমাণিত হয়েছে চীনের বৈশিষ্ট্যময় সামাজিক ব্যবস্থার প্রাধান্য। সবার যৌথ প্রয়াসে এ বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে।
তবে এদের সবার মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি অবদান যারা রেখেছেন, তাদের মধ্যে মোট ৪ জনকে রাষ্ট্রীয় পদকের জন্য মনোনীত করা হয়। তাদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন।
চুং নান শানের নাম অবশ্যই সুপরিচিত। চলতি বছর চীনের কোভিড-১৯ মহামারীর প্রতিরোধক কার্যক্রমের নেতৃ-পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। ২০০৩ সালে বেইজিংয়ে সার্স মহামারীর সময়ও তিনি জনগণকে নিয়ে সার্স ভাইরাস ঠেকানোর কাজ করেছেন। জনাব চুং নান শানের বয়স এখন ৮৪ বছর। ১৯৩৬ সালের অক্টোবর মাসে তিনি ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়ামেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কুয়াংচৌ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নম্বর ১ হাসপাতালের শ্বাসরোগ গবেষণালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দীর্ঘকাল ধরে শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণ, সংশ্লিষ্ট রোগের প্রতিরোধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেন এবং ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন।
যখন কোভিড-১৯ নিউমোনিয়া অপরিচিত রোগ ও ভাইরাস হিসেবে সর্বপ্রথমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তিনি ঘোষণা করেন যে, এ সংক্রমণ মহামারী হিসেবে মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে, এ ভাইরাস কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং চীন সরকারের নেতৃবৃন্দের কাছে সংশ্লিষ্ট চিকিত্সা পদ্ধতির পরামর্শ দেন তিনি। চীনের কোভিড-১৯ মহামারীর নিয়ন্ত্রণ, গুরুতরভাবে আক্রান্তদের চিকিত্সা, সংশ্লিষ্ট কার্যকর ওষুধ নিয়ে গবেষণা ও টিকার পরীক্ষায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। উহানে কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সময়, উহানে যাওয়া-আসার যাতায়াতব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন অবস্থায় তিনি নিজে বিশেষ ট্রেনে বসে উহানে পৌঁছান এবং স্থানীয় চিকিত্সকদের সাথে দিনরাত ধরে আক্রান্তদের চিকিত্সা করেন। যদিও তাঁর বয়স ৮৪ বছর, তিনি অন্যান্য চিকিত্সকদের মতো প্রতিদিন ২০ ঘন্টার মতো কাজ করেন। কাজের ফাঁকে সময় পেলে তিনি শরীরচর্চা করতেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সিনিয়র সদস্য হিসেবে তিনি জনগণকে সেবা করার প্রতিশ্রুতি মেনে চলেন।
চাং বো লি চীনের থিয়ানচিন চীনা চিকিত্সা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিপিসি'র ভাইস সম্পাদক ও চীনের প্রকৌশল একাডেমির শিক্ষাবিদ। ১৯৪৮ সালে হ্যপেই প্রদেশের নিংজিন জেলায় জন্মগ্রহন করেন। দীর্ঘকাল ধরে চীনা ভেষজ ওষুধের আধুনিকায়ন গবেষণায় রত আছেন। চীনা ভেষজ ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও তিনি অনেক গবেষণা করেছেন। কোভিড-১৯ মহামারীর পর তিনি চীনা ভেষজ ওষুধ ও পশ্চিমা ওষুধের যৌথ প্রয়োগে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিত্সা করার চেষ্টা করেন এবং তার পদ্ধতি ব্যাপকভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়।
চাং তিং ইয়ু ১৯৬৩ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হ্যনান প্রদেশের ছ্যুয়েশানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। হুপেই প্রদেশের জনস্বাস্থ্য কমিটির উপপরিচালক এবং উহান শহরের চিনইনথান হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট। চিনইনথান হাসপাতাল এবার উহান কোভিড-১৯ আক্রান্তদের প্রধান চিকিত্সা হাসপাতাল ছিল। ২০০৮ সালে যখন সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েনছুয়ান জেলায় ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটে, তখন তিনি চিকিত্সকদল নিয়ে ওয়েনছুয়ানের আহতদের চিকিত্সায় অংশ নেন এবং ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর যখন উহানে অপরিচিত নিউমোনিয়া রোগীদের শনাক্ত করা হয়, তখন তিনি অবিলম্বে আইসোলেশান চিকিত্সা এলাকা স্থাপন করেন এবং ভাইরাসের পরীক্ষা চালু করেন। কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিন সিকোয়েন্স বের করতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। উনার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। অনেক বছর আগে তিনি ফ্রস্টবাইট রোগে আক্রান্ত হন। এ পরিস্থিতিতে তিনি নিজে হাসপাতালের কর্মীদের নিয়ে মোট ২৮০০ জনেরও বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্তকে সুস্থ করে তোলেন এবং হুপেই প্রদেশের উহান শহরের কোভিড-১৯ প্রতিরোধক যুদ্ধে ব্যাপক অবদান রাখেন।
ম্যাডাম ছেন ওয়ে চার জনের মধ্যে একমাত্র নারী। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের চেচিয়াং প্রদেশের লানসি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে তিনি সামরিক একাডেমি'র বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের গবেষক হিসেবে কাজ করেন। দীর্ঘকাল ধরে তিনি বায়োইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে গবেষণা করেছেন। ইবোলা ভাইরাসের টিকা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন তিনি। কোভিড-১৯ মহামারী ঘটার পর তিনি উহানে গিয়ে ভাইরাসের তথ্য জানার সাথে সাথে টিকা ও ওষুধের গবেষণায় নিরলস প্রচেষ্টা চালান এবং কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
আসলে কোভিড-১৯ ঠেকানোর কার্যক্রমে কোটি কোটি চীনা মানুষ যৌথভাবে কাজ করেছেন। এ সংগ্রামের মাধ্যমে চীনাদের একতা আরও জোরদার হয়েছে, চীনাদের যৌথ প্রয়াসে মহামারীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জয়ের আশাও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় পদক অর্জন করেছেন, তারা চীনাদের প্রতিনিধি হিসেবে এ মর্যাদা পেয়েছেন। এখন চীনের কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি বিভিন্ন পক্ষের যৌথ প্রয়াসে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তবে বিশ্বের অনেক দেশের অবস্থা এখনও বিপজ্জনক। টিকা নিয়ে বিভিন্ন দেশের গবেষকরা গবেষণা করছেন। আশা করা যায়, কম সময়ের মধ্যে টিকার গবেষণা সফল হয়ে যাবে এবং বিভিন্ন দেশের সহযোগিতায় অতি দ্রুত মহামারীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা সম্ভব হবে।
সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)