হ্যনানের গ্রামাঞ্চলে মহামারী প্রতিরোধবিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র
  2020-04-08 15:59:16  cri

আজকের আলোছায়া অনুষ্ঠানে আমরা চীনের হ্যনানের গ্রামাঞ্চলে মহামারী প্রতিরোধবিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্রের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।

গ্রামের চিকিত্সকরা দরজার ফাঁক দিয়ে রুমে কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকদের থার্মোমিটার দেন। গ্রামের লাউড স্পিকারে মহামারী ঠেকানোর কথা বার বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়, কয়েকজন বাচ্চা ছোট পতাকার খুঁটি তৈরি করে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান করে। সেলফোন দিয়ে তৈরি ১৬ মিনিটব্যাপী এ প্রামাণ্যচিত্রে উহান শহর থেকে মাত্র ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হ্যনান প্রদেশের একটি সাধারণ গ্রামে মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের দৃশ্য তুলে ধরা হয়। এ প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রতি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

কোনো কোনো নেট ব্যবহারকারী মনে করেন, প্রামাণ্যচিত্রে অভিনব কিছু নেই, কোনো আকর্ষণীয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নেই, এতে মহামারীর প্রকোপের পর সত্যিকারভাবে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন তুলে ধরা হয়। কিন্তু তারপরও এটি অনেক মনোমুগ্ধকর। নেট ব্যবহারকারীরা মনে করেন, এ তথ্যচিত্রে লোকেরা মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর চীনের গ্রামাঞ্চলের প্রকৃত অবস্থা এবং নানা পরিসংখ্যানের পিছনে এক একটি প্রাণবন্ত মুখ দেখতে পারবেন।

এ তথ্যচিত্র নির্মাণকারী ছিও ইয়েন চিয়ে কল্পনাও করেন নি যে, জন্মস্থানে ফিরে গিয়ে বসন্ত উত্সব কাটানোর সময় তার চিত্রায়িত এসব উপাদান সম্পাদনার পর তা আকর্ষণীয় একটি প্রামাণ্যচিত্রের জন্ম দেবে এবং তা এত বড় প্রভাব ফেলবে। শুধু তাই নয়, এ তথ্যচিত্রটি জাতীয় পর্যায়ের পেশাদার চলচ্চিত্রের চ্যানেলে প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রামাণ্যচিত্রটি শুরু হয় মাস্ক পরে বাসার দরজার সামনে বসে থাকা এক বৃদ্ধার দৃশ্য থেকে। তিনি বলেন, এখন রোগ আছে। এর সংক্রমণে সবাই উদ্বিগ্ন। তথ্যচিত্রের নির্মাতা তাকে জিজ্ঞাস করেন যে, আপনি কি জানেন, এটা কি রোগ? তিনি উত্তরে বলেন, পোকারোগ। তার এ উত্তর শুনে সবাই হেসে ফেলেন। হ্যনান প্রদেশের সেই হুয়াং জেলার লিয়াংচুয়াং থানার চিনচুয়াং গ্রামে যদিও অনেক মানুষ 'নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া' নিয়ে খুব স্পষ্টভাবে জানেন না, তারপরও তাদের জীবনে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে।

চীনের চান্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী ২০১৯ সালের শেষ দিকে খুব সকালে গ্রামের লাউড স্পিকারে সম্প্রচারিত হয়। যারা উহান থেকে ফিরে আসেন, তারা অবিলম্বে গ্রামের অফিসে রেজিস্টার করেন। লাউড স্পিকারের কথা শুনে ছিও ইয়েন চিয়ের মনে একটি চিন্তা আসে। সেদিন বা ২৪ জানুয়ারি ছিলো উহান শহরে লকডাউন শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিন। তার জন্মস্থান বা হ্যনান প্রদেশে সব মিলিয়ে মোট ৩২জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। উহান থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে চিনচুয়াং গ্রামে ৪ জন অধিবাসী উহান থেকে ফিরে আসেন এবং বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকেন। ছিও ইয়েন চিয়ে একটি ভিডিও প্লাটফর্মে কাজ করেন। তিনি নিজের সেলফোন দিয়ে জন্মস্থানে মহামারীর ঠেকাতে নানা দৃশ্য রেকর্ড করা শুরু করেন।

চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার নববর্ষের আগের দিন থেকে ফানুস উত্সব পর্যন্ত তিনি গ্রামাঞ্চলে জনগণের দৈনন্দিন জীবন রেকর্ড করেন। যারা উহান থেকে জন্মস্থানে ফিরে আসেন, তাদের গ্রামের অফিসে রেজিস্টার করার দৃশ্য, গ্রামবাসীদের দরজার উপরে পোস্ট করা কবিতা, কবিতার বিষয় আত্মীয় ও বন্ধুদের প্রতি মহামারীর চলাকালে পরস্পরের বাসায় না যাওয়ার অনুরোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে তৈরি সুপারমার্কেট, নিজ দরজার সামনে শরীরচর্চা করা বৃদ্ধ,থানায় মানবশূন্য বাণিজ্যিক রাস্তা,গ্রামে প্রবেশের জায়গায় গভীর রাতে জেগে ওঠা কর্মকর্তা, ড্রোন দিয়ে গোটা গ্রামে জীবাণুমুক্তকরণ করার দৃশ্য প্রভৃতি।

ছিও ইয়েন চিয়ে স্বীকার করেন,আমি আশা করি, আমার এই প্রামাণ্যচিত্র একটি চলচ্চিত্রের মতো। এর সূচনা আছে, শীর্ষ আকর্ষণের স্থান আছে, পরিণতিও আছে। তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমার তৈরি এই প্রামাণ্যচিত্রে নির্দিষ্ট কোনো আকর্ষণীয় গল্প নেই। তিনি বলেন, ১৬ মিনিটব্যাপী এই প্রামাণ্যচিত্রে ১৬ দিনের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের সত্যিকার অবস্থা তুলে ধরা হয়। ইন্টারনেটে তার বিখ্যাত হওয়ার প্রধান কারণ হলো এর সত্যতা ও যথার্থতা।

গ্রামবাসীদের প্রকৃত অবস্থা রেকর্ড করার জন্য ছিও ইয়েন চিয়ে ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ভালো যন্ত্র ব্যবহার করেন নি। তিনি মনে করেন, বড় একটি মেশিন হাত ধরা দেখলে সাধারণ মানুষ নার্ভাস বোধ করবেন।

সর্বপ্রথমে তিনি সেলফোন দিয়ে রেকর্ড করেন। তবে তিনি আবিষ্কার করেন যে, গ্রামবাসীরা তার সেলফোন ব্যবহারের পদ্ধতি দেখে হঠাত্ করে বক্তৃতা দেওয়ার মতো কথা বলা শুরু করেন। কয়েকবার চেষ্টা পর তিনি আবিষ্কার করেন, তার সেলফোন বুকের অবস্থানে রেখে শুটিং করাই সবচেয়ে ভালো। এভাবে গ্রামের লোকদের উপস্থাপনা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ছিও ইয়েন চিয়ে বলেন, শুটিং করার আগে আমি গ্রামের লোকদের বলতাম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই গ্রামের সদস্য হিসেবে তিনি গ্রামের মানুষজনের কাছে খুব পরিচিত ছিলেন। তার উপর গ্রামের মানুষ অনেক আস্থা রাখেন।

শুটিং করার সময় প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর যে কাজটি প্রথমে তিনি করতেন, সেটি হলো হলো গ্রামের লাউড স্পিকারে প্রচারিত তথ্য শোনা। তিনি কলম দিয়ে সারাদিন মহামারীর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ঘটনা লিখে নিতেন। তারপর তিনি বৈদ্যুতিক সাইকেল চালিয়ে রাস্তায় ঘুরতে বের হতেন। ১৬ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রের জন্য তিনি মোট ১৬ ঘণ্টার ভিডিও রেকর্ড করেন।

'মহামারীর সময় সাধারণ মানুষের জীবন কেমন ছিল? আমার এই প্রামাণ্যচিত্রে সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে।' ছিও ইয়েন চিয়ে বলেন, আসলে এই প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে তিনি খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। তবে এর প্রভাব তার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এর মূল কারণ হয়তো এটাই যে, সব ঘটনা বাস্তব সত্য।

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040