সম্প্রতি চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সরকারের পক্ষ থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্থানীয় তথ্যকার্যালয়ের মুখপাত্র ইলিজ আনাইতি বলেন, ধর্মীয় চরমপন্থাবাদ হল সিনচিয়াংয়ের ধারাবাহিক হিংসাত্মক তত্পরতার মূল কারণ।
আনাইতি বলেন, ধর্মীয় চরমপন্থাবাদ জাতি ও ধর্মের অজুহাতে সরকারি আইন অমান্য করে এবং মূল্যবোধ ও আধুনিক সভ্যতার সাফল্যকে নাকচ করে; যারা চরমপন্থীদের আচরণ অনুসরণ করে না, তাদেরকে 'পাষণ্ড' হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। ফলে কিছু কিছু লোকের আত্মা সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এবং তারা স্বাভাবিক মানুষ থেকে ভূতে পরিণত হয়েছে। সিনচিয়াংয়ের ধারাবাহিক সহিংসতায় ধর্মীয় চরমপন্থাবাদের প্রতিফলন দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, অতীতে চরমপন্থী শক্তি নানান পদ্ধতিতে স্কুল ও ক্যাম্পাসে ঢোকার অপচেষ্টা চালায় এবং কোনো কোনো যুবককে অপরাধ করতে উত্সাহ দেয়। কোনো কোনো বাবা-মা চরমপন্থীদের প্রভাবে নিজের বাচ্চাদের পড়াশোনায়ও বাধা দিয়েছেন।
যুবকদের ধর্মীয় চরমপন্থার বিপদ থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন স্কুলে সঠিক চিন্তাভাবনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, আইনবিষয়ক ক্লাস চালু করা হয়। পাশাপাশি, চরমপন্থীদের অপরাধ দমন করা এবং ক্যাম্পাসে চরমপন্থীদের চিন্তাধারা যাতে ঢুকতে না-পারে, তা নিশ্চিত করাও ছিল এ উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য।
সিনচিয়াংয়ের বোর্ডিং স্কুল ব্যবস্থা বিভিন্ন জাতির শিক্ষার্থীদের পিতামাতার কাজে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে
সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চীনের মূল ভূভাগের একটি বড় এলাকা, ভোগৌলিক আয়তন বড় এবং লোকসংখ্যা কম। তাই গত শতাব্দীর ৮০র দশকে সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন এলাকায় ৪০০টি বোর্ডিং স্কুল নির্মিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় বোর্ডিং স্কুলের উন্নয়নে অনেক সমর্থন দিয়েছে সরকার। বোর্ডিং স্কুলের খরচ সরকার বহন করে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের মতো বিনা খরচে বাধ্যতামূলক শিক্ষা পায় এবং স্কুলের ছাত্রাবাসে থাকে। তা ছাড়া, গ্রামাঞ্চলের বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্কুলে বছরে মাথাপিছু ১২৫০ ইউয়ান আর মাধ্যমিক স্কুলে বছরে ১৫০০ ইউয়ান ভর্তুকি পায়। শিক্ষার্থীদের পরিবারের ওপর থেকে আর্থিক বোঝা কমে যায়।
এ সম্পর্কে সিনচিয়াং সরকারি তথ্যকার্যালয়ের মুখপাত্র ইলিজ আনাইতি বলেন, বোর্ডিং স্কুল চীনের একমাত্র ব্যবস্থা নয়। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, ব্রিটেনে সর্বপ্রথম বোর্ডিং স্কুল ব্যবস্থা চালু হয়। বিশ্ববিখ্যাত ইটন কলেজ, উইনচেষ্টার কলেজ কয়েক শ বছর আগে বোর্ডিং স্কুল ব্যবস্থা চালু করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন অঞ্চলে বোর্ডিং স্কুল নির্মিত হয়। অথচ সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সিনচিয়াংয়ের বোর্ডিং স্কুল স্থানীয় শিক্ষার্থীদের তাদের বাবা-মায়ের সাথে বিচ্ছিন্ন করেছে ও এতে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক মানসিক আঘাত পাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। বলা বাহুল্য, এ মন্তব্য পুরোপুরি বাস্তবতাপরিপন্থি। এ সম্পর্কে মুখপাত্র আনাইতি বলেন, 'আমিও জানতে চাই, সিনচিয়াংয়ের কোন স্কুল বা জায়গার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের পিতামাতার বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে এবং কোন বাবা-মা তাদের বোর্ডিং স্কুলে পাঠাতে চান না!"
সিনচিয়াং হ্যথিয়ান জেলার বাগচি উপজেলার কাসপি গ্রামের বোর্ডিং স্কুলের প্রেসিডেন্ট খাইদিরদিন কেহার বলেন, "সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে ভর্তি হয়। যাদের বাসা স্কুল থেকে বেশি দূরে অবস্থিত, তারা বোর্ডিং স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারে। বোর্ডিং স্কুলে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। যদি ছাত্রছাত্রীদের বাসা স্কুলের কাছে হয়, তাহলে তারা প্রতিদিন বাড়িতে ফিরে যেতে পারে। তাই বলা যায়, স্থানীয় শিক্ষার্থীদের বোর্ডিং স্কুলে থাকা না-থাকা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা একদিকে আমাদের বোর্ডিং স্কুলব্যবস্থা সমালোচনা করে, আবার দূরবর্তী এলাকার পরিবারের বাচ্চারা বোর্ডিং স্কুলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ করে। এটা সম্পূর্ণ হাস্যকর।"
কাহার আরও বলেন, "সিনচিয়াংয়ের বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষার্থীরা সাপ্তাহিক ছুটিতে বাড়ি ফিরতে পারে এবং প্রতি সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত স্কুলে থাকে। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠান থাকলে ছুটির আবেদন করতে পারে শিক্ষার্থীরা। বাবা-মার সঙ্গে বাচ্চাদের যোগাযোগের সুবিধা দিতে বোর্ডিং স্কুলভবনে ফোন রয়েছে।"
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার অসত্য প্রতিবেদন সম্পর্কে কাহার আরও বলেন, "কয়েক সপ্তাহ আগে এ পত্রিকার সংবাদদাতা একটি স্কুলের গেটের সামনে হাঁটাহাটি করছিলেন। তিনি স্কুলে ঢোকার বা সাক্ষাত্কার নেওয়ার আবেদন করেননি। অথচ চলে যাওয়ার পর এমন প্রতিবেদন রচনা করেন। এমন প্রতিবেদন দায়িত্বহীন ও সংবাদদাতাদের পেশাগত নৈতিকতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।"
সিনচিয়াংয়ের স্থানীয় সরকারের মুখপাত্র আনাইতি আরও বলেন, "বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, বোর্ডিং স্কুল ব্যবস্থায় শিক্ষাদান ছাত্রছাত্রীদের মেধা বিকাশে সহায়ক। এতে বিভিন্ন পরিবারের ওপর আর্থিক চাপ কমেছে। এ ব্যবস্থা সিনচিয়াংয়ের শিক্ষার আধুনিকায়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনের পক্ষে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে। আর তাই এ ব্যবস্থা স্থানীয় নাগরিকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে।"
কাশির শিক্ষা বিভাগের পরিচালক আবুলিমিত বলেন, "২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯৪টি ক্যাম্পাসে গুলির ঘটনা ঘটে এবং এসব ঘটনায় ১৬৩ জন হতাহত হয়। অনেক মার্কিন স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পিউ গবেষণা কেন্দ্রের জরিপ থেকে জানা গেছে, সেই দেশের ৫৭ শতাংশ যুবক ক্যাম্পাসে গুলি হামলার আশঙ্কা করে এবং ৬৩ শতাংশের বাবা-মা নিজের বাচ্চাকে ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন।" মার্কিন সরকার স্কুলসমূহের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)