চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, বুধবার মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত চীনের অভ্যন্তরীণ ভূভাগে নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১১৫৩ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৬৩ জন মারা গেছেন। সুস্থ লোকের সংখ্যা মৃত লোকের প্রায় দ্বিগুণ। গত মঙ্গলবার থেকে হুপেই প্রদেশের বাইরে এই ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পর পর দিন কমেছে।
অনলাইনের দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য তুলে ধরেন চীনা মুখপাত্র। কিছু বিদেশি সংবাদমাধ্যম জানায়, উহানকে গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সাফল্য অর্জিত হচ্ছে। নভেল করোনা ভাইরাস চীনের বাইরে অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার গতি ধীরও হচ্ছে। এ সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন"চীনে 'দেশ' শীর্ষক একটি গান আছে। গানে বলা হয়েছে: 'প্রতিটি পরিবার রাষ্ট্রের ইউনিট। আর প্রতিটি রাষ্ট্র গঠিত হয় হাজার হাজার পরিবারের সমন্বয়ে।' এই কথায় কোটি কোটি চীনার মনোভাব প্রতিফলিত হয়। গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, কঠোর সংগ্রাম করে, অনেক কষ্ট সহ্য করে আজকের পর্যায়ে এসেছে চীনা জাতি। নভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও জয়ী হবে বলে চীন আস্থাবান। আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে চীন ইচ্ছুক। এটি কেবল যে চীনা নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুস্থতা রক্ষা করবে তা নয়, তা আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বহুবার উল্লেখ করেছে যে, চীনের বিরুদ্ধে পর্যটন ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা করার বিরোধিতা করে সংস্থাটি। সম্প্রতি, চীন থেকে নিজ নিজ নাগরিকদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় কিছু দেশ। এ সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন"ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর, চীনা জনগণ ও চীনে বিদেশিদের নিরাপত্তা ও সুস্থতার ওপর সমান গুরুত্ব দিয়ে আসছে চীন সরকার। ভাইরাস মোকাবিলায় সবচেয়ে কঠোর ও বহুমুখী প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিয়েছে চীন। অনেক ব্যবস্থার মানই হু'র 'আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য নিয়ম-বিধির' মানের চেয়েও উচ্চ। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা সুনিশ্চিত করতে অনেক কার্যকর ব্যবস্থাও নিয়েছে চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।"
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত, চীনে নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বিদেশির সংখ্যা ছিল ১৯ জন। এর মধ্যে ২ জন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়েছেন। ১৭ জন চিকিত্সাধীন আছেন। মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন, চীনে বিদেশিদের জন্য সহায়তা-ব্যবস্থা জোরদার করেছে চীন সরকার।
তিনি আরও বলেন, হু'র প্রস্তাব উপেক্ষা করে, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ না শুনে, চীনের সঙ্গে বিমান-যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে কিছু রাষ্ট্র। এই প্রক্রিয়ায় কিছু চীনা নাগরিক বিদেশে রয়ে যান। তাদের ফিরিয়ে আনতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চীন সরকার। এ সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন"ভাইরাসের সংক্রমণ এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনের উদ্যোগ-প্রচেষ্টাকে সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানাই আমরা। চীনের বেসামরিক বিমানগুলো আকাশে ওড়া বন্ধ করবে না। বিদেশে আটকে পড়া চীনাদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবে চীন সরকার।"
মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন, বিদেশে চীনের বিভিন্ন ভিসা সংস্থা ও বন্দর ভিসা সংস্থা স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। বিদেশিরা চীনা আইন অনুসরণ করে চীনে আসতে পারেন।(ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)