ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আসঘার ফারহাদি
  2019-12-26 14:36:36  cri

সম্প্রতি দ্বিতীয় হাইনান দ্বীপ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এ উত্সবের 'মাস্টার কার্নিভাল' কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আসঘার ফারহাদি। এতে তিনি চলচ্চিত্র অনুরাগী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে তার ছবি পরিচালনার অভিজ্ঞতা ও চলচ্চিত্র তৈরির পিছনের গল্প তুলে ধরেন। সেই সময় তিনি 'অবচেতন মনের সৃষ্টি' ধারণাটি তুলে ধরেন।

আসঘার ফারহাদি হচ্ছেন ইরানি চলচ্চিত্র জগতের একজন সমঝদার ব্যক্তি। তার শিল্পকর্মে দর্শকদের কাছে বর্তমান ইরানি সমাজের দৃশ্য তুলে ধরার পাশাপাশি, বিশ্ব চলচ্চিত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি মনে করেন, চলচ্চিত্রে ভালো গল্প বলা এবং প্রকৃত বাস্তবতা প্রকাশ করা উচিত্।

২০০৩ সালে আসঘার ফারহাদি নিজের প্রথম শিল্পকর্ম 'ড্যান্স ইন দ্য ডাস্ট' নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে আবির্ভূত হন। ২০১১ সালে তিনি 'অ্যা সেপরেশন' নামের বিখ্যাত চলচ্চিত্র এবং ২০১৬ সালে 'দ্য সেলসম্যান' নামের আরেকটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দেন। এ দুটি চলচ্চিত্র নিয়ে দু'বার অস্কার মনোনয়নের শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

তা ছাড়া, 'অ্যা সেপরেশন' চলচ্চিত্রটি ৬১তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার বা গোল্ডেন বেয়ার পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করে। 'দ্য সেলসম্যান' চলচ্চিত্রটি ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উত্সবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ইউনিটের শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার অর্জন করে।

সবার সঙ্গে শিল্পকর্ম তৈরির অভিজ্ঞতা বর্ণনার সময় আসঘার ফারহাদি বলেন, তিনি 'অবচেতন মনের সৃষ্টির' নির্দেশ অনুসরণ করেছেন। সহজ কথায় বলা হয় যে, সৃষ্টির সময় নিজের মনের কথা শোনা, বহিঃর্বিশ্বের কোনো কিছুর ওপর নির্ভর করা নয়।

তিনি বলেন,

'আমি মনে করি, আমাদের প্রত্যেকের মনে বৈচিত্র্যময়-সম্পদ মজুদ আছে। তার ভেতরে ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত পাওয়া নানা তথ্য সংরক্ষিত আছে। তবে সমস্যা হলো, এই ধন-সম্পদের ভাণ্ডার খোলার চাবি কেউ উদ্ধার করতে পারে না। তবে, সৃষ্টিশীল মানুষ এই চাবি খুঁজে পায়। কোনো কিছু সৃষ্টি করার সময় তারা মনের সেই সম্পদ থেকে নিজের চাওয়া জিনিসপত্রগুলো বাছাই করেন।'

আসঘার ফারহাদি চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও, চিত্রনাট্য তৈরির কাজ করেছিলেন। যা জীবনের বিস্তারিত তথ্য সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। তার পিতামহ আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ভাইরা কান্নাকাটি করত। সেই দৃশ্য তার মনে গভীর দাগ কেটেছিল। অবশেষে তিনি 'অ্যা সেপরেশন' নামের চলচ্চিত্রটি তৈরি করেন। সামাজিক পরিবেশ ও দৈনন্দিন জীবনের প্রতি পর্যবেক্ষণ ও বিবেচনাবোধ থেকে তিনি প্রকৃত ইরানি সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন ও চলচ্চিত্রে তুলে ধরেন। তার দেখাশোনা ও চিন্তাধারা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করতে সক্ষম হন। আসঘার ফারহাদি বলেন, পারিবারিক সম্পর্ক হলো তার চলচ্চিত্র তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ থিম। তিনি বলেন,

'বৈশ্বিক পটভূমিতে পারিবারিক সম্পর্ক হলো সবচেয়ে সাধারণ মিল। যখন আমরা পরিবারসংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে আলোচনা করি, তখন আরও ব্যাপক সামাজিক ইস্যুকে তার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারি। কারণ, একটি পরিবার সব সামাজিক সমস্যার সঙ্গে জড়িত।'

বিখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক রজার এবার্ট 'অ্যা সেপরেশন' চলচ্চিত্রটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, চলচ্চিত্রটিতে বর্তমানে ইরানের ভাবমূর্তি আঁকা হয়েছে। এতে খুব নিখুঁতভাবে একটি দেশ এবং সেই দেশের মানুষদের তুলে ধরা হয়েছে। তারা কীভাবে ভালো কাজ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন, চলচ্চিত্রে তা পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আসঘার ফারহাদির শিল্পকর্মের চরিত্রে সাধারণ শ্রমিক শ্রেণী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ দেখা যায়। তিনি সমবেদনায় ভরা মন দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সংকটাবস্থা তুলে ধরেন। তিনি বিচারক হিসেবে কখনও কথা বলেন নি, বরং তিনি বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রত্যেকের অবস্থা তুলে ধরেছেন। কার ভুল? কীভাবে তা সমাধান করা যায়? এসব প্রশ্ন দর্শকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। নিজের শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে আসঘার ফারহাদি বলেন,

'আমার শিল্পে বর্তমানে সমাজের দ্বন্দ্ব দেখানো হয়েছে। তবে আমি ভালো ও মন্দ, সঠিক ও ভুল, এমন কোনো বিচার করি নি। যেমন, ঐতিহ্য ও আধুনিকতা, কোনটা ভালো? কোন পক্ষ সঠিক? কোন পক্ষ ভুল? পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কোনোটাই আমি বিচার করি নি। এসব প্রশ্নের উত্তর দর্শকেরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিচার করবেন এবং উত্তর খুঁজে নেবেন।'

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040