ভাষণে বিভিন্ন দেশের প্রতি সম্মিলিতভাবে উন্মুক্ত, সহযোগিতামূলক, সৃজনশীল ও ভাগাভাগিমূলক বৈশ্বিক অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট সি। চীন বিভিন্ন দেশকে উন্নয়নের আরো বেশি সুযোগ যোগাবে এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের সমাজ গড়ে তোলার জন্য অবদান রাখবে বলে প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন।
ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, অর্থনীতির বিশ্বায়ন হলো ইতিহাসের প্রবণতা। এককভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নয়নে সম্মুখীন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন দেশের উচিত্ মানবজাতিকে অগ্রাধিকার অবস্থায় রাখা, বরং নিজের স্বার্থকে মানবজাতির স্বার্থের ওপর রাখা নয়। বিভিন্ন দেশের উচিত্ আরো উন্মুক্ত মনোভাব এবং ব্যবস্থায় যৌথভাবে বিশ্ব বাজারকে সমৃদ্ধ করা এবং অর্থনীতির বিশ্বায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
তিনি বলেন,
'দৃঢ়ভাবে বাণিজ্যের সংরক্ষণবাদ এবং একতরফাবাদের বিরোধিতা করা উচিত্। বিভিন্ন দেশের উচিত্ সৃজনশীল সহযোগিতা জোরদার করা, বিজ্ঞান ও অর্থনীতির সংযোগ ত্বরান্বিত করা, উদ্ভাবনের ফলাফল শেয়ার জোরদার করা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবাধ প্রযুক্তিগত বিনিময় ও সহযোগিতা সমর্থন করা। সহনশীল ও উভয়ের জন্য কল্যাণকর ভবিষ্যত সৃষ্টি করতে আমাদের সম্মিলিতভাবে জাতিসংঘ সনদ, লক্ষ্য ও নিয়মকে ভিত্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সুরক্ষা করা, বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থার নিয়ম মেনে চলা এবং বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগের উদারীকরণ ও সুবিধাকরণ বেগবান করা উচিত্। ফলে উন্নয়নের ফলাফলে আরো বেশি দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে।'
প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন অব্যাহতভাবে বৈদেশিক উন্মুক্ততার মৌলিক নীতিতে অবিচল থাকবে এবং উন্মুক্ততার মাধ্যমে সংস্কার, উন্নয়ন ও সৃজনশীলতা বেগবান করবে। তিনি বলেন,
'চীনের বাজার এতো বড়, এখানে দেখতে সবাইকে স্বাগত জানাই আমি। অর্থনীতির উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ ভোগের ভূমিকা জোরদার করবে চীন এবং আরো সক্রিয় ডোমেস্টিক বাজার প্রতিষ্ঠা করবে, যাতে চীনের অর্থনীতির উন্নয়নে নির্ভরতা যোগানো যাবে এবং বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখা যাবে। চীন আমদানির ওপর গুরুত্বারোপ করবে, শুল্ক ও নিয়মের খরচ হ্রাস করবে এবং বিভিন্ন দেশের গুণগতমানের পণ্যদ্রব্য ও পরিষেবার আমদানি সম্প্রসারণ করবে।'
প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীনের বৈদেশিক উন্মুক্ততা হলো সার্বিক এবং যা বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। চীন সার্বিকভাবে উন্মুক্তকরণের নতুন কাঠামো নির্মাণের জন্য চেষ্টা করছে।
চীন অব্যাহতভাবে অবাধ বাণিজ্য এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্যপেই প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকার যৌথ উন্নয়ন উন্নত করবে এবং হলুদ নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ ও উচ্চ মানের উন্নয়নের নতুন রাষ্ট্রীয় কৌশল প্রণয়ন করবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে অর্থনীতি উন্নয়নের অসঙ্গতি সমাধান করে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও এ ক্ষেত্রে সংস্কার দ্রুততর করবে চীন। তিনি বলেন,
'চীন বাজারায়ন, আইনসঙ্গত ও আন্তর্জাতিকায়ন ব্যবস্থার পরিবেশ গড়ে তুলবে, বিদেশি ব্যবসার বাজারের অনুমোদন শিথিল করবে, পুঁজি বিনিয়োগ উত্সাহ ও সংরক্ষণ করবে এবং মেধাস্বত্ত্বসহ বিভিন্ন খাতের সংরক্ষণের আইন ব্যবস্থা পূরণ করবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কারের সমর্থন করে চীন। চীন আরো বেশি দেশের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে আগ্রহী। চীন জাতিসংঘ, জি-টোয়েন্টি, এপেক এবং ব্রিক্সসহ বিভিন্ন ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে যৌথভাবে অর্থনীতির বিশ্বায়নকে ত্বরান্বিত করতে ইচ্ছুক।'
বর্তমানে বিশ্বের ১৩৭টি দেশ ও ৩০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীন। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন অব্যাহতভাবে 'এক অঞ্চল এক পথ' নির্মাণ করবে, অভিন্ন পরামর্শ, গঠন ও উপভোগের ভিত্তিতে উন্মুক্ত, সবুজ চেতনায় অবিচল থাকবে এবং উচ্চ মানদণ্ড, জনগণের কল্যাণকর ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় 'এক অঞ্চল এক পথ' গুণগতমান উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন,
'ভবিষ্যতের দিকে দাঁড়িয়ে চীন উন্নয়নের নতুন চেতনার ভিত্তিতে অব্যাহতভাবে সৃজনশীলতার মাধ্যমে উন্নয়ন বাস্তবায়নের কৌশল কার্যকর করবে এবং কাঠামো সুবিন্যস্ত করে অর্থনীতির উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবে। আমি বিশ্বাস করি, চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের ভবিষ্যত অবশ্যই আরো উজ্জ্বল হবে।'
লিলি/টুটুল