১৯৭০ সালের ৯ ই অক্টোবর চৌ চিয়েনকুও শানতুং প্রদেশের থাইআন শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি পরিবারের একমাত্র ছেলে ছিলেন। পিতামাতারা আশা ছিল, তার একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত হবে এবং তার হৃদয়ে দেশ ও পরিবারের প্রতি ভালোবাসা থাকবে। তাই তার নাম রাখ হয় চিয়েনকুও, মানে "একটি দেশের প্রতিষ্ঠাতা"। বাবা-মা আশা করেছিলেন যে, চৌ চিয়েনকুও তার নিজের শহরে একজন শিক্ষক হবে, যাতে পিতামাতার সঙ্গে থাকতে পারে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করতে পারে। তবে তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা পাস করে শানতুং থেকে স্নাতক শেষ করে শানতুং বিদ্যুত্ নির্মাণ দ্বিতীয় প্রকৌশল কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। আর কাজের হাত ধরে, তিনি শুধু নিজের শহরই নয়, দেশের সীমানাও ছাড়িয়ে গেছেন। এখন তিনি সুদূর বাংলাদেশে থাকেন এবং চায়না পাওয়ার কন্সট্রাকশন গ্রুপ বিদেশি বিনিয়োগ কোম্পানি লিমিটেডের বাংলাদেশ বারেসা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের সুরক্ষা পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন।
বারেসা কোম্পানি বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন বরগুনা অঞ্চলে অবস্থিত। প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ের পুঁজি বিনিয়োগ প্রায় ৫৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি বাংলাদেশে চীনের প্রথম আইপিপি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। ২০১৮ সালে, চৌ চিয়েনকুও চীনা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের প্রথম ব্যাচ হিসাবে দুই সহকর্মী নিয়ে নির্মাণস্থানে যানে। শুরুতে সবকিছুই কঠিন ছিল। তারা ভাষার প্রতিবন্ধকতাগুলি কাটিয়ে ওঠেন, আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ান এবং অনেক সমস্যার সমাধান করেন।
তিনি বলেন,
"আমরা যখন বারেসায় প্রথম পৌঁছলাম তখন নির্মাণকাজের জায়গাটি ছিল হাস্যকর। এতে ধানের ক্ষেত ও ছোট পুকুর ছিল। খনন করার মতো কোনো সরঞ্জামও ছিল না। তাই আমরা রাজধানী ঢাকা থেকে তিনটি খননকারী যন্ত্র ভাড়া নেই।"
লাওস, নেপাল, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশে বিদ্যুৎ উত্পাদন ও উত্পাদনকারী সংস্থার প্রকল্পগুলির তুলনায়, বাংলাদেশে কাজ করা আরও কঠিন। বারেসার সাধারণ বিভাগের পরিচালক চৌ সাও হু বলেন,
"বাংলাদেশের প্রকল্পগুলি অন্যান্য দেশের তুলনায় আরও বেশি কঠিন। কারণ বাংলাদেশের প্রধান সরঞ্জাম সামগ্রীগুলি ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আমদানি করতে হয় এবং কিছু জিনিস চীন থেকে আমদানি করতে হয়। তবে পূর্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি সমাধান করা যেতে পারে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিনিয়োগ ব্যুরো এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় আমাদের অগ্রগতিতে যথেষ্ট সন্তুষ্ট।"
প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায় চৌ চিয়েনকুও এবং তার সহকর্মীরা খুব কঠিন পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করেছিলেন। দীর্ঘ সময় পর চৌ চিয়েনকুও'র গ্যাস্ট্রাইটিস ধরা পড়ে। তবে বিদেশে কাজ করা লোকজন বেশিরভাগ সময়ই পরিবারকে সুসংবাদ দিয়ে অভ্যস্ত থাকেন।
তিনি বলেন,
"যখনই আমার পরিবার ও বন্ধুরা আমাকে বিদেশের কাজ ও জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আমি প্রায়শই তাদের কাজ ও জীবনের মজার ব্যাপার, সুন্দর দৃশ্যাবলী, রীতিনীতি এবং বিদেশের স্যানিটেশন সম্পর্কে বলি। কর্মক্ষেত্রের বিপজ্জনক ও খারাপ জিনিসগুলি সাধারণত তাদের বলা হয় না। যাতে তারা উদ্বিগ্ন না হন।"
বিস্তৃত বিভাগের পরিচালক চৌ সাওহু বলেন, চৌ চিয়েনকুও বড় ভাইয়ের মতো প্রায়শই সবার জীবন ও কাজের যত্ন নেন। তিনি সবসময় প্রত্যেকের অতিরিক্ত সময়কে সমৃদ্ধ করার উপায় নিয়ে ভাবেন।
তিনি বলেন,
"আমরা মধ্য-শরৎ উত্সবের আগে মুনকেক বুকিং দিয়েছি এবং কিছু হালাল মুনকেকেরও অর্ডারও দিয়েছি। বাংলাদেশি কর্মীরা কেবল বাংলাদেশে উৎসবগুলিই উদযাপন করে না, তারা আমাদের সঙ্গে চীনা উত্সবও উদযাপন করে। বিদেশে বসবাসকারী সবাই একসঙ্গে থাকি। তাই আমি ততটা নিঃসঙ্গ অনুভব করি না।"
বারেসায় ৩ শতাধিক স্থানীয় কর্মচারী কাজ করছেন। গোলাম মোর্সেদ খান স্থানীয় প্রশাসনিক সহকারী। তিনি অল্প সময়ের জন্য বারেসায় এসেছিলেন এবং এখানকার পরিস্থিতি পছন্দ করেছেন। তিনি বলছিলেন যে, ছুটির দিনগুলিতে মি. চৌ এবং চীনা নেতারা বাংলাদেশি কর্মীদের প্রত্যেককে নতুন পোশাক ও উত্সবের খাবার দেন। মি. চৌ সবসময় হাসিখুশি থাকেন এবং তিনি সবার কাছে খুব ভালো একজন মানুষ।
তিনি বলেন,
"চীনারা আমাদের সবার সঙ্গে থেকে আনন্দিত এবং তারা আমাদের জন্য ভালো। আমি আশা করি, ভবিষ্যতেও আমি চীনাদের সঙ্গে কাজ করতে পারব।"
চৌ চিয়েনকুও বিদেশে চারটি মধ্য-শরৎ উত্সব এবং দুটি বসন্ত উত্সব কাটিয়েছেন। তিনি বলছিলেন যে, ২০২০ সালের বসন্ত উৎসবের সময় তাকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন,
"বিদেশে, আমার মতো 'এক অঞ্চল, এক পথ' বরাবর দেশগুলোতে কাজ করা চীনাদের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। তারা 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়ন ও চাইনিজ ড্রিমের দুর্দান্ত লক্ষ্যের জন্য, সংস্থার বিকাশের কৌশলগুলির জন্য, পরিবারের সঙ্গে আরও ভালো জীবন কাটানোর জন্য বিদেশের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম লাইনে কাজ করে।"
বিদেশে চীনা প্রকল্পে কাজ করা চৌ চিয়েনকুও'র মতো অনেক কর্মচারী আছে। যারা কঠোর পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে না। তারা সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হলো পরিবার ও মাতৃভূমির বিকাশ। চৌ বলেন,
"আমার মতো ৭০ দশকের লোকেরা ছোট থেকে গ্রামাঞ্চলে বড় হয়েছে। তারা সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ভালো সময়টায় বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়েছে। আমি পরীক্ষার মাধ্যমে আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছি, প্রাদেশিক রাজধানীতে প্রথম চাকরি পেয়েছি এবং একটি বাড়ি কিনেছি। সিপিসি'র শক্ত নেতৃত্ব এবং সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ ছাড়া, আজ চীনের কোনও বড় উন্নয়ন সফল হবে না।"
বিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা চৌ চিয়েনকুওকে তার পরিবার সম্পর্কে আরও চিন্তাভাবনা এবং মাতৃভূমি বিকাশে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছে।
চৌ বলেন,
"আমাদের দেশটি দ্রুত, নিরাপদে ও স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে, জনগণ শান্তিতে বাস করে ও কাজ করে। মাতৃভূমির বিদেশি প্রকৌশলীদের এটি দৃঢ় নির্ভরতা। মাতৃভূমি যত শক্তিশালী হবে, বিদেশে কাজ করে আমরা তত গর্বিত ও নিরাপদ থাকবো।"