৭০ বছর আগে বসন্ত কালে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সে তুং সি পাই পো'তে তিনটা গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ পরিচালনা করেন। পরবর্তী কালে এখানেই অনুষ্ঠিত হয় 'জাতীয় ভূমি সম্মেলন'। অনেকে বলেন, নয়া চীন এসেছে সি পাই পো থেকে। সি পাই পো থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে নান ওয়েন তু নামক একটি গ্রাম আছে। ২০১৮ সালে এ গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত হয়।
নান ওয়ে তু গ্রামে প্রবেশ করলে দেখা যায় মসৃণ রাস্তা ও অসংখ্য মাছে-ভরা-পুকুর। দেখা যায় সুন্দর সুন্দর চত্বর ও প্রচুর গাছপালা। ৯৩ বছর বয়সী ফান কেং সুন বেঞ্চে বসে শান্ত ও সুখী অবসর সময় কাটাচ্ছেন। এখন জীবন নিয়ে উনি সন্তুষ্ট; বললেন, "খাওয়া-দাওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। মশা ও আবর্জনাও কমেছে। আমার বাড়িঘর ও আসবাবপত্র শহরের তুলনায় কোনো অংশে কম না।"
তার ছেলে ফান হাই মিংও জানালেন, সামপ্রতিক বছরগুলোতে গ্রামে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন, "গ্রামের পরিবেশ অনেক পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন। মাছের পুকুর আছে; আঙুরের বাগান আছে। নতুন নতুন চত্বর ও পাবলিক টয়লেটও নির্মিত হয়েছে। সবকিছু ভালর দিকে যাচ্ছে।"
পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত নান ওয়েন তু গ্রামের ২০৪টি পরিবারের ৬৮৭ জন সদস্য আছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে এই পরিবারগুলো জমি চাষ করে আসছে। তিন বছর আগেও গ্রামের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করতো। তখন হ্য পেই প্রদেশের সি চিয়া চুয়াং শহরের শিল্প ও বাণিজ্য ফেডারেশনের একটি কর্মদল গ্রামে এসে দারিদ্র্যবিমোচন কাজ শুরু করে। কর্মদলের ছাং তুয়ান শু গ্রামের সিপিসি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন এবং তখনকার গ্রামের কথা তার মনে এখনও আছে। তিনি বলেন, "জমিতে ফসল চাষ করা ছাড়া, গ্রামবাসীরা আর কিছুই করতে পারতো না। ময়লা রাস্তা, পুরাতন টয়লেট। এখন যেখানে পুকুর আছে, তখন সেখানে ছিল আবর্জনার গাদা। এই পুকুরে এখন মাছের চাষ হয়।"
গ্রামে এসে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রম পরিচালনা করা চীনা বৈশিষ্টপূর্ণ ও নির্দিষ্ট দারিদ্র্যবিমোচন পদ্ধতিগুলোর অন্যতম। নান ওয়েন তু গ্রামে ছাং তুয়ান শু ও তার দল এক এককটি করে পরিবার পরিদর্শন করে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যম দারিদ্র্যের কারণ খুঁজে বের করে। গ্রামের বাস্তবতা অনুযায়ী, তারা একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিনিয়োগ আকর্ষণ করে এবং জমি ও বনজ সম্পদ ব্যবহার সি পাই পো-তে গড়ে তোলা হয় কৃষিভিত্তিক পর্যটনকেন্দ্র।
ছাং তুয়ান শু বলেন, "আমরা বড় একটি আঙুর বাগান নির্মাণ করেছি, যার আয়তন প্রায় ৭০ হেক্টর। মাছ ও আঙুর চাষ পাশাপাশি চলছে। জমি ভাড়া, বেতন এবং কোম্পানির বার্ষিক লাভ গ্রামবাসীদের আয়ে পরিণত হয়েছে। তাই তাদের দৈনন্দিন আর্থিক জীবন এখন নিশ্চিত।"
সি পাই পো চীনের বিখ্যাত একটি বিপ্লবী স্মরণস্থান। এটি '৫এ' শ্রেণিরা দর্শনীয় অঞ্চলও বটে। নান ওয়েন তু ঠিক সি পাই পো'র কাছের একটি গ্রাম। তাই দ্রুত বিনিয়োগ গ্রামে আসে। হ্য পেই পাই সেং কৃষি উন্নয়ন কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করেছে এবং আধুনিক কৃষি-পর্যটন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যাক্তি ইয়াং কুয়াং বলেন"আমারদের বিনিয়োগের মোট পরিমাণ ১১৭ কোটি ৮০ লাখ ইউয়ান। আমরা নান ওয়েন তু গ্রামের ৩৬০ হেক্টর জমি ও বন ভাড়া নিয়েছি। বাগানের ফল পাকলে কয়েক শতাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। গ্রামবাসিন্দারা ভাল চাষবাস করতে পারে এবং এর মাধ্যমে তারা দারিদ্র্যমুক্ত হয়।"
২০১৮ সালের শেষ নাগাদ, এ প্রোগ্রাম আরও সম্প্রসারিত হয়। ৩০০০ বর্গমিটার আয়তনের একটি গ্রিনহাউস তৈরি হয়। ভিতরে আপেল, চেরি ও আঙুর গাছ চাষ করা হয়। গ্রামের পাশা দিয়ে বয়ে চলা নদী পরিষ্কার করা হয় এবং নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়। নান ওয়েন তু গ্রাম একটি চাষ ও চিত্তবিনোদনভিত্তিক আধুনিক গ্রামীন পর্যটন শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হয়।
৪৯ বছর বয়সী গ্রামবাসাঈ ফান সি চেং একজন দারিদ্র মানুষ ছিলেন। তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা ভাল না থাকায় তিনি বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারতেন না। এখন তিনি গ্রামের স্যানিটারি পরিষ্কার এবং বনের আগুন প্রতিরোধ কাজ করেন। প্রতি মাসে তার বেতন ১৮০০ ইউয়ান। পাশাপাশি, জমির ভাড়া ও কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত লাভ মিলিয়ে তার বার্ষিক আয় ২০ হাজার ইউয়ানের বেশি।
ছাং তুয়ান শু বলেন, বর্তমানে প্রতিবছর ৫০ লাখের বেশি মানুষ সি পাই পো ভ্রমণ করেন এবং নান ওয়েন তু গ্রামও এর থেকে উপকৃত হয়। এখন নান ওয়েন তু গ্রামর পাশে নতুন একটি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তাটি নির্মিত হলে সি পাই পো থেকে পর্যটকরা সরাসরি নান ওয়েন তু গ্রামে আসতে পারবে।
চীনে নির্দিষ্ট দারিদ্র্যবিমোচন নীতি চালু হবার পর বিগত ৬ বছরে দরিদ্র লোকের সংখ্যা ২০১২ সালের ৯ কোটি ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখে নেমে আসে।
২০২০ সালের মধ্যে চীনে দারিদ্র্যবিমোচন কাজ শেষ হবে। তবে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের সময়কালটি সবচেয়ে কঠিন এক পর্যায় বলে সরকার ধারণা করছে। চীন সরকারের উদ্দেশ্য হলো, ২০২০ সালের মধ্যে শিল্প, শিক্ষা, স্থানান্তর, সামাজিক নিশ্চয়তাসহ নানার ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশকে সার্বিকভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করা। (শিশির/আলিম)