চীনের হংকং ও সিনচিয়াংয়ের শিক্ষাদান
  2018-11-19 14:35:42  cri

 

উরুমুচি শহরের ৬৬ নম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুখী জীবন

(রে ১,নারী)

'আমার নাম নাফিসা, বয়স ১৩, সবাইকে স্বাগতম।' উরুমুচি শহরের ৬৬ নম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাশি এলাকার উইগুর জাতির ছাত্রী নাফিসা আহমেদী ইংরেজি ভাষায় বিদেশি প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানায়।

তুরস্ক, মিশর, আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনসহ ৮ জন বিদেশি প্রতিনিধি এ বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে আসেন। ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি নিজের লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা ও গল্প তুলে ধরে। ভালো ইংরেজি জানা মেয়ে নাফিসা চীনা ভাষায় আরেকবার অতিথিদের স্বাগত জানায়। নাফিসা বলে,

(রে ২)

'আপনাদের চীন সফরকে স্বাগত জানাই। চীনারা অতি বন্ধুত্বপূর্ণ। ২০১৭ সালে আমি জন্মস্থান থেকে উরুমুচিতে চলে আসি। এখানে আমি উন্নতমানের শিক্ষা গ্রহণ করি। আমার চীনা ভাষা ও বিভিন্ন কোর্সের লেখাপড়া অনেক উন্নত হয়েছে। এ জন্য চীন সরকার ও আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এখানে আমাদের যে কোনো সমস্যা হলে শিক্ষকদের কাছ থেকে সহায়তা পাই। সবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বেশ চমত্কার'।

বর্তমানে ৬৬ নম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৩০০ জন, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ সংখ্যালঘু জাতির। বর্তমানে তারা প্রায় সবাই চীনা, ইংরেজি ও জাতীয় ভাষায় কথাবার্তা বলতে সক্ষম।

স্থানীয় অঞ্চলের পশুপালকদের বাচ্চাদের শিক্ষাগ্রহণ, পশুপালন এলাকা ও দূরবর্তী অঞ্চলের উন্নয়নের মান উন্নীত করার উদ্দেশ্যে ৬৬ নম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বোর্ডিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে বোর্ডিং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪০০ জন।

৬৬ নম্বর বিদ্যালয়ের প্রধান ছ্যু মিং ছাই বলেন, বোর্ডিং শিক্ষার্থীরা মূলত দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের কাশি ও তুলুফানসহ পশুপালন এলাকার সংখ্যালঘু জাতির। অঞ্চলটির অর্থনীতি ও শিক্ষা সম্পদ একটু দুর্বল। বাচ্চারা উরুমুচিতে আসার পর বিনা খরচে সিনচিয়াংয়ের সবচেয়ে উন্নতমানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বিদ্যালয় প্রধান ছ্যু মিং ছাই বলেন,

(রে ৩)

'বাচ্চারা উরুমুচিতে আমাদের বিদ্যালয়ে আসার পর চীন সরকার তাদের ওপর অনেক গুরুত্ব দেয়। তাদের জীবনযাপন ও লেখাপড়ার ব্যাপারে সরকার অনেক মনোযোগী। তারা এখানে সবচেয়ে উন্নত জীবনযাপন ও শিক্ষা গ্রহণ করে। তাদের লেখাপড়া ও জীবনযাপনের সব খরচ চীন সরকার বহন করে। এখানে তাদের জীবন অনেক সুন্দর এবং লেখাপড়ার অগ্রগতিও অনেক চমত্কার।'

বিদ্যালয় প্রধান ছ্যু বলেন, এ মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেন একটি সুষম বড় পরিবার। উইগুর, কাজাখ, হুই ও হান জাতির বাচ্চারা একসাথে জীবনযাপন, লেখাপড়া ও সুন্দর ছুটির সময় কাটায়। তিনি বলেন,

(রে ৪)

'শিক্ষার্থীরা ১০ মাস বিদ্যালয়ে থাকে। বিদ্যালয়ে তারা বসন্ত উত্সব, মধ্য-শরত্ উত্সব এবং ঈদ উত্সব পালন করে। এখানে নানান ধরনের খেলা ও কমিউনিটির অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এভাবে তাদের নিজেদের বিভিন্ন ইচ্ছা পূরণ হয় এবং সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি ও সংস্কৃতিও সম্প্রসারিত হয়'।

বিদেশি প্রতিনিধি দলের সদস্য, তুরস্কের 'মর গ্রুপের' প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম সনগুল বায়রাম আন্তরিকভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে বিনিময় করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের জীবনযাপনের বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরে অনেক আনন্দিত হন। তিনি বলেন,

(রে ৬,নারী)

'শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কথা শুনে আমি অনেক মুগ্ধ। তারা অনেক সরল ও আন্তরিক। তাদের চোখ মুখ আনন্দে ভরপুর। তাদের চোখ দেখে আমি তাদের মনের সুখ বুঝতে পারি। শিক্ষার্থীদের আনন্দে পরিপূর্ণ চোখ দেখে আমি অনেক খুশি।'

মিশরের 'বেতার ও টেলিভিশন' ম্যাগাজিনের সাধারণ সম্পাদক খালেদ হানাফে চীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত সংখ্যালঘু জাতির লোকদের কল্যাণমূলক নীতির প্রশংসা করে বলেন,

(রে ৭)

'সরকারের এ উদ্যোগে দরিদ্র এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা খরচে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রাণচঞ্চল ও আশাবাদী। তারা অবশ্যই নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।'

২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সিনচিয়াংয়ের উরুমুচি, কেলামাই, হামি, কাশি ও ইনিংসহ ১১টি শহরে এমন বিনা বেতনের ক্লাস চালু হয়। এতে সিনচিয়াংয়ের পশুপালন ও দূরবর্তী এলাকার অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী উপকৃত হয়।

কানসু প্রদেশের লিনসিয়ার বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান

২০১৭ সালের শেষ নাগাদ চীনের কানসু প্রদেশের লিনসিয়া হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণের হার দাঁড়ায় ৮৬.১৪ শতাংশে, যা চীনের গড় শিক্ষাগ্রহণের হার ৯৩.৪ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। এ ব্যবধান কমিয়ে আনা ও বাচ্চাদের বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণের জন্য ২০১৮ সালে ধারাবাহিক নতুন ব্যবস্থা চালু করে স্থানীয় সরকার।

লিনসিয়া শহরের ওয়াংপিং গ্রামের ছাত্র চাং ওয়ে বো'র বাসা অনেক দূরবর্তী পাহাড়ি এলাকায়, তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের সমন্বয়ে তার গ্রামের আরো দু'জন শিক্ষার্থী একসাথে লিনসিয়া শহরের ৩ নম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এ গল্প স্মরণ করে চাং বলে,

(রে ১)

'আমার বাসা ওয়াংপিং গ্রামের পাহাড়ি এলাকায়। পাহাড়ের পথ অনেক আঁকাবাঁকা, তাই আমি লেখাপড়া ছেড়ে দেই। পরে সুযোগ পেয়ে আমরা ৩ নম্বর বিদ্যালয়ে চলে আসি। এখানে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা অনেক ভালো। প্রতি সেমিস্টারে ভর্তুকি আছে, তাই নিজের খরচ বেশি নয়।'

লিনসিয়া শহরের ৩ নম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ২১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫০০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে বসবাস করে। আশেপাশের দূরবর্তী এলাকার শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিদ্যালয়ে ফিরে আসা সম্পর্কে বিদ্যালয়ের উপ-প্রধান সুং সিয়াও পিং বলেন,

(রে ২)

'প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে ফিরে আসা ও শিক্ষা গ্রহণের কাজ প্রতি সেমিস্টারে করতে হবে। যারা সময় মতো নিবন্ধন বা যোগাযোগ করতে না পারে আমরা তাদের বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ করি। এভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। যারা নানা কারণে বিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছে, তারা এখন স্বাভাবিকভাবে লেখাপড়ায় ফিরে আসছে।'

২০১৪ সাল থেকে কানসু প্রদেশে প্রি-স্কুল থেকে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ১৫ বছর মেয়াদি বিনা বেতনের বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং দরিদ্র পরিবারের জন্য বিশেষ সহায়তা নীতি চালু হয়েছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি ইউয়ান, যা ব্যাপকভাবে দরিদ্র পরিবারের চাপ কমিয়ে দিয়েছে এবং যা এমন পরিবারের বাচ্চাদের শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করেছে।

কানসু প্রদেশ চীনের অনুন্নত প্রদেশের অন্যতম। স্থানীয় অঞ্চলের অনেক বাচ্চা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়া করেই বড় শহরে চাকরি খোঁজা শুরু করে। এ অঞ্চলের বাচ্চাদের সময় মতো শিক্ষা গ্রহণের জন্য নানা ব্যবস্থা চালু করেছে স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ। লিনসিয়া শিক্ষা ব্যুরোর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মা স্যু বলেন,

(রে ৩)

'চীনের বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন অনুযায়ী বাচ্চাদের ৯ বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। যদি বাবা মা এ আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে স্থানীয় আদালত তাদের মামলায় অভিযুক্ত করতে পারবে। বাবা মা নিজের ভুল বুঝতে পেরে বাচ্চাকে আবার বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারবেন। এখানে সরকারের ভর্তুকি ও ঋণের মাধ্যমে শিক্ষাদানের খরচ অনেক কমানো হয়েছে, যাতে দরিদ্র পরিবারের সমস্যাও সমাধান করা যায়।'

জানা গেছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত লিনসিয়ায় মোট ১৫ হাজার ১৫ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ফিরে এসেছে। স্থানীয় দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরে আসার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়। আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

রেডিওতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা মিস করলে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা- www.bengali.cri.cn

এবার তাহলে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আবারো কথা হবে। চাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)


1  2  3  4  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040