চীনের ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পের ১০ বছর পর দুর্গত এলাকার বাচ্চাদের রুশ শিশু কেন্দ্রে পুন:সফর
চলতি বছর চীনের ওয়েনছুয়ানে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পের দশম বার্ষিকী। ভূমিকম্পের পর দুর্গত এলাকার বাচ্চারা রাশিয়ায় স্বল্পকালীন মানসিক চিকিত্সা গ্রহণ করে। রাশিয়ায় বাচ্চাদের ওই স্বল্পকালীন জীবন এখনো তাদের স্মৃতিতে বিরাজমান। রুশ শিক্ষক ও সহপাঠীদের সাথে তৈরি গভীর বন্ধুত্ব তাদের কাছে অবিস্মরণীয়।
স্থানীয় সময় ৯ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকে 'ওসিয়ান' শিশু কেন্দ্রে ৪০ জনেরও বেশি চীনা বন্ধুদের স্বাগত জানানো হয়। তারা ১০ বছর আগে সংঘটিত ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পের সাক্ষী হয়ে আছে। ওই ভূমিকম্পে মানসিক সমস্যা সমাধানে তারা রাশিয়ায় ২১ দিনের মতো চিকিত্সা গ্রহণ করে। এ সময় স্থানীয় চিকিত্সক ও শিক্ষকদের সাথে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয় তাদের। এ শিশু কেন্দ্রের পরিচালক আন্দ্রে বাজিলেভস্কি বলেন,
'১০ বছর আগে ২০০৮ সালে 'ওসিয়ান' শিশু কেন্দ্র চীনা বাচ্চাদের 'দ্বিতীয় বাসায়' পরিণত হয়। আজ আমি বলতে চাই 'তোমাদের বাসায় ফিরে আসাকে স্বাগতম!'
বাজিলেভস্কি আরো বলেন, ১০ বছর আগের সেই ইতিহাস কখনো ভোলা যাবে না। চীন ও রুশ যুবকদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও শ্রেষ্ঠ বন্ধুত্ব চিরদিন সম্প্রসারিত হবে।
২০০৮ সালে ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পের পর দুর্গত এলাকার ১৫০০ জনেরও বেশি চীনা শিশুকে রাশিয়ায় মানসিক চিকিত্সা গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায় রুশ সরকার। তাদের মধ্যে অর্ধেক 'ওসিয়ান' শিশু কেন্দ্রে চিকিত্সা গ্রহণ করে এবং স্থানীয় অঞ্চলের লোকদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে। বর্তমানে চীনের সিছুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী স্যুয়ে স্যুয়ে প্রথম দলের বাচ্চা হিসেবে ওই কেন্দ্রটিতে চিকিত্সা গ্রহণ করেন। ১০ বছর পর আবার সেই কেন্দ্রটিতে ফিরে তিনি অনেক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,
'যদিও রুশ ভাষা বুঝতে পারি না, তবে এ ভাষা আমার কাছে অনেক আন্তরিক ও পরিচিত, যেন জন্মস্থানের ভাষা শোনার মতো।'
শিশু কেন্দ্রটির শিক্ষকদের নির্দেশনায় সহপাঠীদের সাথে হোস্টেল, ক্লাসরুম ও ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন এলাকা পুনরায় ঘুরে দেখেন স্যুয়ে। বিভিন্ন এলাকার দৃশ্য দেখে এখানে সেই ১০ বছর আগের জীবনযাপনের কথা স্মরণ করেন তিনি। ক্যান্টিন দেখে পুরনো স্মৃতি স্মরণ করে স্যুয়ে বলেন,
'প্রতিদিন এখানে আলু, সসেজ, মাংস ও ফল খেয়েছি। খাবার শেষ করতে না পারলে তা পকেটে করে হোস্টেলে নিয়ে গিয়েছি। এখানকার লাল রঙয়ের টমেটোস্যুপ আমার খুব পছন্দের। তখন সবাই একলাইনে বসে খাবার খেয়েছি, খুবই মজার ব্যাপার।'
১০ বছর আগে ১২ বছর বয়সী চীনা মেয়ে তাই ইয়াও 'ওসিয়ান' শিশু কেন্দ্রে ২০ দিনের মতো সময় কাটান। তিনি সিছুয়ান পেশাগত প্রযুক্তি একাডেমির সংগীত বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি এখন সংগীত শিক্ষক হতে চান। এবার রাশিয়া সফর যেন তার কাছে বাড়িতে ফিরে যাবার মতো। ১০ বছর আগের মানসিক পরামর্শদাতার কথা স্মরণ করে তাই ইয়াও বলেন,
'তখন পরামর্শদাতার বয়স আমার মতো, প্রতিদিন আমাদের সাথে খেলাধুলা ও জ্ঞান দান করে। তাঁর সাহায্যেই আমি শিক্ষক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
১০ বছর আগে চীনের এসব বাচ্চা যখন রাশিয়ায় যায়, তখন তাদের বয়স ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। বর্তমানে সিছুয়ান প্রদেশে একটি পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন সিয়াও ইউ। তখনকার পরামর্শদাতা মার্শাকে স্মরণ করে সিয়াও ইউ বলেন,
'মার্শা একজন রুশ সাংবাদিক। তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে শিশু কেন্দ্রে এসে আমাদের সাহায্য করেন। তখন থেকে আমিও সাংবাদিক হতে চেয়েছি এবং বর্তমানে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাঁরা আমাদের মনে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছেন।'
১০ বছর পর ওসিয়ান শিশু কেন্দ্রের শিক্ষকরা এবং চীনা বাচ্চারা আবার একত্রে মিলিত হন। এ পুনর্মিলন আবার সবাইকে নিয়ে গেছে অতীতে। চীনা অনুবাদক সোফিয়া ১০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি তখন ওই কেন্দ্রটিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে চীনা বাচ্চাদের সাথে ২১ দিন ছিলেন। এবার পুনর্মিলনের পর সোফিয়া বলেন, ছোট মেয়েরা এখন বড় সুন্দরী হয়েছে। তাদের সুখী জীবন দেখে আমি ভীষণ খুশি। তিনি বলেন,
'ভূমিকম্পের পর বাচ্চারা অনেক আঘাত পায় এবং তাদের সাহায্যে আমরা যথাযথ প্রচেষ্টা চালাই। নিজের বাচ্চার মতো তাদের যত্ন নেই এবং তাদের সাথে খেলাধুলা করি। আমরা পরস্পরকে পরিবারের মতো দেখি।'
এবার পুনর্মিলনে 'বাসা' শব্দটি বার বার উল্লেখ করা হয়। ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা 'ভালোবাসার' কারণে 'বাসা' তৈরি করে আর পরস্পরের সাথে পরিচিত হয়। এ সম্পর্কে সিয়াও ইউ জানায়,
'যদিও ১০টি বছর পার হয়ে গেছে, তবে রাশিয়ায় জীবনযাপনের কথা আমার সবসময় মনে পড়ে। এখানে ফিরে আসা যেন বাড়ি ফিরে আসার মতো।'
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিময় বিভাগের প্রধান স্যু থাও বলেন, রুশ জনগণের সাহায্যে চীনা বাচ্চারা ভূমিকম্পের কষ্ট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। চীনা জনগণ রুশ জনগণের গভীর আবেগকে সবসময় স্মরণ করবে। যুবকদের মাধ্যমে দু'দেশের মৈত্রী আরো সম্প্রসারিত হবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে চিঠি লিখতে ভুলবেন না।
আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn, caoyanhua@cri.com.cn, আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা bengali.cri.cn, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট cribangla
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই দিনে একই সময়ে আবারো কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)