২০০০ সালে ভিশাল ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার ওপর উচ্চরত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছর তিনি পড়াশোনা করেন এবং তখন নিজের কোম্পানিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলার কৌশল আবিষ্কার করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমাদের উচিত বিদেশে ব্যবসা ছড়িয়ে দেওয়া। শুধু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে নয়, অন্যান্য দেশেও নিজস্ব ব্যবসাকে নিয়ে যেতে হবে। দেশে-দেশে সংস্কৃতিগত পার্থক্য আছে। কিন্তু ব্যবসার পদ্ধতি একই। তাই কোনো দেশের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করলে, ব্যবসা করা আরও সুবিধাজনক হবে।"
ভিশাল দুবাইয়ে বাজার জরিপ করেছিলেন। এ প্রক্রিয়ায় তিনি আবিষ্কার করেন যে, চীন হল টেক্সটাইল ব্যবসার জন্য একটি ভালো বাজার। ২০০২ সালে তিনি চীনে নিজের ব্যবসা নিয়ে আসেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার বাবা ও চাচা চেয়েছিলেন, আমি ব্যবসা চীনে নিয়ে আসি। সেজন্য আমি ২০০২ সালে চীনে কোম্পানির শাখা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিই। ভারতের টেক্সটাইল খুবই বিখ্যাত এবং পোশাক উত্পাদনের ক্ষেত্রে চীন অনেক এগিয়ে। তাই এ খাতে দু'দেশের সহযোগিতা দু'দেশের জন্যই লাভজনক।"
চীন সরকারের সহায়তা ও সমর্থনে ভিশাল হাংচৌ শহরে অপটাস ইন্টারন্যাশনাল নামক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, চীনে কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় কোনো বাধা ছিল না। চীন সরকার বিদেশিদের বিনিয়োগকে সমর্থন করে। মান ঠিক রাখলে, কোনো জটিলতা নেই। তিনি বলেন, "আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উন্নয়ন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করি ও নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করি। কমিশনটি স্পষ্টভাবে ১০টি মানদন্ডের কথা উল্লেখ করে। আমি আমার পরিবারের ব্যবসা ও ভারতীয় টেক্সটাইলের গুণগত মান বর্ণনা করি। সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর তাঁরা আমার আবেদন অনুমোদন করে।"
ভিশাল বলেন, ভারত হল চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেক্সটাইল ও পোষাক উত্পাদনকারী দেশ। ভারতে চমত্কার কার্পাস উত্পাদিত হয়। কিন্তু চীনের আছে অগ্রণী প্রযুক্তি। সেজন্য দু'দেশ সহযোগিতা করলে সারা বিশ্বের বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এ সম্পর্কে ভিশাল বলেন, "টেক্সটাইল হল শ্রম-ঘন শিল্প। চীন ও ভারতে যথেষ্ট শ্রমিক রয়েছে। সেজন্য দু'দেশ এ খাতে পরস্পরের খুবই ভাল অংশীদারে পরিণত হতে হবে। দু'দেশ টেক্সটাইল শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সাথে রাখতে পারে। এতে এশিয়া এ খাতে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী অঞ্চলে পরিণত হবে।"
ভিশাল বলেন, চীন সরকারের কর্মকর্তারা ও তাঁর চীনা অংশীদার তাঁকে অনেক সহায়তা করেন। যে কোনো বিদেশির চীনে বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হয়। চীনের অর্থনীতি সারা বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত। চীনা মানুষ নিজের দেশ নিয়ে গর্বিত। হাংচৌ শহর সম্পর্কে ভিশাল বলেন, "গত বছর হাংচৌতে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজিত হয়। এ সুযোগে হাংচৌয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ২০২২ সালে শহরটিতে ১৯তম এশিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হবে। আমি বিশ্বাস করি, এশিয়ান গেমসের সুযোগ ধরে হাংচৌ আরো বেশি উন্নত হবে। হাংচৌ হল চীনের বিখ্যাত পর্যটন শহর। পর্যটন শিল্প হাংচৌ শহরের বৃহত্তম শিল্প। শহরটি আধুনিক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।"
বর্তমানে ভিশালের দুবাইতে শাখা-কোম্পানি আছে। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোয় টেক্সটাইল রপ্তানি করেন। পাশাপাশি তাঁর কোম্পানি অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছে কাপড় বিক্রি করে। ভিশাল বলেন, চীন আশা পূরণের ভূমি। যে মানুষের স্বপ্ন রয়েছে, সে তা চীনে বাস্তবায়ন করতে পারেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমাদের কোম্পানি চীনে। তবে যে-কোনো দেশে আমরা কাপড় রফতানি করতে পারি। আমরা ভারত থেকে বা চীন থেকে কাপড় পাঠাতে পারি। আমরা চীন ও ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ কাপড় সারা বিশ্বে বিক্রি করতে পারি।"