নতুন যুগে ব্যক্তিগত অধিকার সুরক্ষার ঘোষণা
২০১৭ সালের মার্চ মাসে বেসামরিক আইন ব্যবস্থায় 'ক্ষুদ্র সংবিধান' বলে পরিচিত 'বেসামরিক আইন সাধারণ মূলনীতি' প্রণয়ন করা হয়। এতে নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পায়। নতুন এই আইন আগামী পয়লা অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে।
'বেসামরিক আইন সাধারণ মূলনীতি'তে প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে 'ব্যক্তিগত তথ্য'কে একটি 'বেসামরিক অধিকার' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ আইনে অন্যের নেটওয়ার্ক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ ও কারুর ব্যক্তিগত তথ্যাদি গোপনে বিক্রির প্রচেষ্টাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন আইনে ব্যক্তির সম্পত্তির ওপর তার অধিকারকে আগের তুলনায় অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভ্রূণের উত্তরাধিকারীর প্রশ্নটিও নতুন আইনে আলোচিত হয়েছে। অভিভাবকত্ব ব্যবস্থাও সুনির্দিষ্ট হয়েছে। প্রবীণদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল সম্পত্তিকে এক ধরনের 'বেসামরিক অধিকার' হিসেবে আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
শিশুরা আট বছর বয়স থেকে নিজস্ব মোবাইল ফোন ব্যবহারের অধিকার পাবে
শিশুরা সাধারণত পিতা-মাতার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেট থেকে গেমস্ ডাউনলোড করে বা ক্রয় করে। এর আগে ১০ বছর বয়স হবার পর এ ব্যাপারে চীনা শিশুরা স্বাধীনভাবে নিজের ফোন ব্যবহার করার অধিকার পেত। নতুন আইনে এই বয়সসীমা কমিয়ে করা হয়েছে ৮ বছর। ৮ বছর হলে একজন চীনা শিশু তার নিজের মতো করে নিজের দায়িত্ব নিতে শুরু করবে।
নির্ভয়ে ত্রাণ তত্পরতা চালানোর সুযোগ
যে কোনো দুর্যোগে এখন থেকে উদ্ধারকারীরা নির্ভয়ে ত্রাণ-তত্পরতা বা উদ্ধার-তত্পরতা চালাতে পারবে। স্বেচ্ছাসেবা দেওয়ার সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার জন্য উদ্ধারকারীদের দায়ী করা হবে না।
সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের মামলা করার অধিকার
নতুন আইনে সাধারণ নাগরিকরা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সহজে মামলা করতে পারবেন। এর আগে এ ধরনের মামলা করা এবং তা থেকে উপকৃত হওয়া খুবই কঠিন ছিল।
নতুন আইনে, এ ধরনের মামলা আদালতে উত্থাপন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নাগরিকরা অভিযোগ করতে পারবেন। এ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে অবশ্যই আদালতে উত্থাপন করতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, নতুন আইন কার্যকর হওয়ার এক বছরের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মামলার পরিমাণ ৬০ শতাংশ বেড়েছে এবং এসব মামলায় সাধারণ নাগরিকদের জয়ের হারও অনেক বেড়েছে।
দুই সন্তান নীতি
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিশনের ১৮তম সম্মেলনে জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা আইন সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে স্পষ্টভাবে 'দুই সন্তান নীতি' প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাব গৃহীত হবার ফলে চীনে ৩০ বছর ধরে চলে আসা 'এক সন্তান নীতি' বাতিল হয়।
নতুন আইন কার্যকর হওয়ায়, ইতোমধ্যেই চীনে জন্মের হার বেড়েছে। ২০১৬ সালে সারা চীনের হাসপাতালগুলোতে জীবিত শিশু জন্ম নেয় এক কোটি ৮৫ লাখ, যা ২০০০ সালের পর সর্বাধিক। নতুন আইনে বিলম্বে বিয়ে করলে বা বাচ্চা নিলে সংশ্লিষ্ট ছুটি না-দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। দুই সন্তান নীতি কার্যকর হবার পর চীনের ৩০টি প্রদেশে মাতৃত্বকালীন ছুটিও বাড়ানো হয়েছে। চীনে মাতৃত্বকালীন ছুটি ১৩৮ থেকে ১৫৮ দিন। এর মধ্যে তিব্বতে মাতৃত্বকালীন ছুটি এক বছর।