আপনারা শুনছিলেন হুইশুই জেলার জলাধার ও পরিবেশ ব্যুরোর উপ-পরিচালক লিউ হে খুই'র কথা।
তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে হুইশুই জেলার স্থানীয় সরকার দরিদ্র বাসিন্দাদের বাইরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করে। তাদের জন্য নগরাঞ্চলে নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক প্রতিটি পরিবার একটি করে ১০০ বর্গমিটার আয়তনের বড় ফ্ল্যাট লাভ করে। কিন্তু এটা হচ্ছে দারিদ্র্যবিমোচনের শুরু। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হুইশুই জেলার সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাসিন্দাদের দারিদ্র্য দূর করার উদ্যোগ নেয়।
বাসিন্দাদের আয় বাড়ানোর জন্য তাদের জমি ভাড়া ও কৃষি ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি, বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশকেও অনুকূলে আনার প্রচেষ্টা চলে। বাসিন্দাদের জন্য ভাতা, চিকিত্সা বীমা, পেনশন বীমা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া, নতুন ব্যবস্থায় তরুণরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়; প্রবীণরা তাদের নিজস্ব অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সহজ ধরনের কাজ করার সুযোগ পায়। পাশাপাশি, বাসিন্দাদের সন্তানদের জন্য নতুন বিদ্যালয় নির্মিত হয়, নির্মিত হয় চিকিত্সাকেন্দ্র। বাসিন্দাদের বসবাস এলাকায় সুপারমার্কেট নির্মিত হয়। তাদের জন্য ওয়ান স্টপ সমাধানকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন এলাকায় যাতে তারা একটি সমাজ হিসেবে বসবাস করতে পারে, তার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করা হয়।
বাসিন্দাদের জন্য নতুন আবাসিক এলাকা নির্ধারণের সময়ই, নগর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন কেন্দ্র নির্মিত হয়। এখানে পরিবহনব্যবস্থা ভালো এবং এখানে তিন শতাধিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি। বাসিন্দারা এ শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করতে পারে। লিউ হে খুই বলেন, 'আমাদের একটি আসবাবপত্রের বাজার রয়েছে। বাসিন্দারা বাজারে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।'
হুইশুই জেলার স্থানীয় সরকার বাসিন্দাদের বয়স ও কর্মক্ষমতা নিবন্ধন করেছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও বিচার-বিশ্লেষণ করেছে। এরপর প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা বিবেচনায় রেখে বাসিন্দাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। বাসিন্দাদের কেউ এখন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান, ওয়েল্ডারস, কম্পিউটার অপারেটর, বা বাবুর্চি। স্থানীয় সরকার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এবং সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। লিউ হে খুই বলেন, 'প্রবীণরা মূলত জনবেসামূলক কাজ করেন। বাসিন্দাদের অনেকের বয়স বেশি, কিন্তু তারা সুস্থ ও পরিশ্রমী। সেজন্য আমরা তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছি।'
কোনো কোনো প্রবীণ নতুন বাসস্থানে এলেও, কৃষিজমিতে চাষ করার আনন্দ পেতে চান। তাদের জন্য নতুন জায়গাতেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাষের জমি রাখা হয়েছে। তাঁরা সেখানে সবজি ও ফলমূল চাষ করতে পারেন। স্থানীয় সরকার বাসিন্দাদের সন্তানদের জন্য বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন নির্মাণ করেছে। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি পেয়ে থাকে। লুও ইং হে হলেন হুইশুই জেলার বাইচিন থানার দৌদি গ্রাম থেকে স্থানান্তরিত মিয়াও জাতির লোক। তাঁর দু'টি সন্তান আছে। নতুন বিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমাদের দু'টি সন্তান আছে। গ্রামে থাকাকালীন তাদের স্কুল ছিল অনেক দূরে। প্রায় এক ঘন্টা সময় লেগে যেতো। কিন্তু এখানে স্কুলে যাওয়া অনেক সুবিধাজনক। স্কুল অনেক কাছে।'
লুও ইং হে'র গ্রামে ছিল মাত্র ২৪টি পরিবার। তাঁদের বাড়িঘরের পিছনেই ছিল পাহাড়। বৃষ্টির সময় পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর ধসে পড়তো। প্রায়ই ভুমিধস হতো। তাদেরকে বাস করতে হতো খুবই বিপজ্জনক পরিবেশে। অথচ নতুন জায়গায় তাদের বাসস্থান অনেক বেশি নিরাপদ ও উন্নত। তিনি বলেন, নতুন বাড়িঘর ও এখানকার পরিবেশ স্বপ্নের মত সুন্দর। তাঁর পরিবারের আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী নতুন এলাকায় কাজ পেয়েছেন। দু'জনের মাসিক বেতন মোট ৪ হাজার ইউয়ানের বেশি। দুই সন্তানকে লালন-পালন করা এখন আর তাদের জন্য কঠিন কাজ নয়।
তিনি বলেন, "আগে আমরা ডাক্তার দেখানোর জন্য কঠিন পথ অতিক্রম করতাম। এখন একদম ঘরের কাছেই চিকিত্সাকেন্দ্র। এখানে প্রতিবছর বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে পারি। আমাদের সবার চিকিত্সা বীমা আছে।"
লিউ হে খুই জানালেন, নতুন এলাকায় তারা অনেক ভালো আছেন। এখানকার লোকসংখ্যার ৬৪ শতাংশই সংখ্যালঘু। এদের অধিকাংশই আবার বুই ও মিয়াও জাতির মানুষ। স্থানীয় সরকার এখানে প্রায়ই বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এ সম্পর্কে লিউ হে খুই বলেন, 'বিভিন্ন জাতির আলাদা আলাদা ঐতিহ্যগত উত্সব আছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য বিভিন্ন জাতির লোকজনকে একটি পরিবারের মতো রাখা। তাই, প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমরা সব জাতির মানুষকে আমন্ত্রণ জানাই। এসব অনুষ্ঠানের খরচ কর্তৃপক্ষ বহন করে।"