চীনের উচ্চ মানসম্পন্ন রেলগাড়ি: 'ফু সিং'
  2017-07-20 08:58:12  cri



গত ২৬ জুন 'ফু সিং' নামক উচ্চ মানসম্পন্ন রেলগাড়ি বেইজিংয়ের দক্ষিণ রেলস্টেশন ও শাংহাইয়ের হোং ছিয়াও রেলস্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। এ রেলগাড়িটি চীনের রেল কোম্পানি তৈরি করেছে একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তি ও মেধা ব্যবহার করে। ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এর নামকরণ করা হয় 'ফু সিং'। 'ফু সিং' মানে 'পুনরুত্থান'।

'ফু সিং' রেলগাড়িতে যাত্রীরা আরামদায়ক ভ্রমণের অনুভূতি পাবেন। এ রেলগাড়িতে ওয়াইফাই ইন্টারনেট ও ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা আছে। গাড়িতে নানান রকমের আলোর ব্যবস্থা আছে। যাত্রীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী আলোর তীব্রতা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন। তা ছাড়া, রেলগাড়িতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে, দু'টি গাড়ি ফুল স্পিডে একে অপরের পাশ দিয়ে উল্টো দিক থেকে গেলে বা গাড়িটি কোনো লম্বা সুরঙ্গের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করলে, যাত্রীরা কানে ব্যথা অনুভব করবেন না। রেলগাড়িতে উন্নতমানের টয়লেট সংযুক্ত করা হয়েছে এবং চলন্ত গাড়িতে যাত্রীরা যাতে সহজে চলাফেরা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে রেলগাড়ির নামকরণ করা এক ধরনের চীনা ঐতিহ্য। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর স্টিমচালিত রেলগাড়ি, ডিজেলচালিত রেলগাড়ি, বিদ্যুতচালিত রেলগাড়ি এবং দ্রুতগতির রেলগাড়িকে যথাক্রমে 'চিয়ে ফাং', 'তোং ফাং', 'শাও শান', 'হো সিয়ে' নামকরণ করা হয়েছিল। এ নামগুলোতে দেশের প্রতি চীনাদের আবেগ প্রতিফলিত হয়। এবার 'সিআর৪০০এইএফ' এবং 'সিআর৪০০বিএফ' এ দুই ধরনের রেলগাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে 'ফু সিং'। চীনের রেল কম্পানির নিয়ম অনুযায়ী, নতুন ধরনের স্বতন্ত্র দ্রুতগতির রেলগাড়ির নামের প্রথমে 'সিআর' অক্ষর দুটি ব্যবহার করা হয়। 'সিআর' হলো চীনের রেল কোম্পানির ইংরেজি নামের প্রথম দু'টি অক্ষর। নামের মধ্যে সংখ্যা '৪০০' রেলগাড়ির গতি প্রকাশ করে। এর অর্থ, এ ধরনের রেলগাড়ির পরীক্ষামূলক গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে। এর স্থায়ী গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার। পরবর্তী কালে চীনের রেল কম্পানি পরিবহন বাজারের চাহিদা অনুসারে ধাপে ধাপে সিআর৩০০ এবং সিআর২০০ নামের রেলগাড়ি উত্পাদন করবে।

চীনের রেল বিজ্ঞান একাডেমির রেলগাড়ি গবেষণালয়ের গবেষক চাং পো সাংবাদিকদের বলেন, "চীনের স্ট্যান্ডার্ড রেলগাড়ি উত্পাদনের ২৫৪টি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডের মধ্যে প্রায় ৮৪ শতাংশই চীনের নিজস্ব মানদণ্ড। রেলগাড়ির কেন্দ্রীয় প্রযুক্তির সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার চীনেই তৈরি হয়। এর নকশাও চীনা বিজ্ঞানীদের করা। এর আন্তর্জাতিক পেটেন্টও করা আছে। আমাদের রেলগাড়ি উত্পাদনের প্লাটফর্মও আমাদের নিজের, ফলে মেরামত করা অনেক সুবিধাজনক। আমরা বিদেশি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করতে পারি।"

'ফু সিং' রেলগাড়িতে নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠিন। এটি এ গাড়ির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। চলন্ত রেলগাড়িতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ-ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো রেলগাড়িতে এমন ২৫০০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্ট রয়েছে। এ ব্যবস্থা ট্রেনের বেয়ারিংয়ের তাপমাত্রা, কুলিং সিস্টেম, গতিরোধক যন্ত্রের অবস্থা, বগির পরিবেশসহ বিভিন্ন দিকের ওপর কঠোর নজর রাখে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত তা এ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতিবেগ কমিয়ে ফেলতে বা রেলগাড়িটি একেবারে বন্ধ করে দিতেও পারে এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। ফু সিং রেলগাড়ির শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা পুরোপুরিভাবেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এসব পরীক্ষার মধ্যে ছিল: দু'পাশ থেকে উল্টো দিক থেকে ঘন্টায় ৪২০ কিলোমিটার গতিতে আসা দু'টি ট্রেনের একে অপরকে অতিক্রম এবং একই দিকে চলন্ত দুটি ট্রেনের মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠা। দু'টি ক্ষেত্রেই এই রেলগাড়ি বিশ্বরেকর্ড গড়েছে।

বেইজিং-সাংহাই রুটে নতুন রেলগাড়ি চালু হবার কারণ আছে। এই রুটে গত ৬ বছরে মোট ৬৩ কোটি যাত্রী যাতায়াত করেছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫ লাখ ৫ হাজার যাত্রী বেইজিং-সাংহাই রুটে দ্রুতগতির ট্রেন ব্যবহার করেন। ফু সিং রেলগাড়ি এই রুটে দ্রুতগতির ট্রেনের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়াবে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 'ফু সিং' রেলগাড়ির প্রধান যন্ত্রাংশের মেয়াদ ৩০ বছর। এটি ৬ লাখ কিলোমিটার পথ চলতে পারবে।

বর্তমানে চীনের দ্রুতগতির রেলগাড়ি দ্রুত বিকাশের যুগে প্রবেশ করেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ চীনের দ্রুতগতির রেলপথের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। বিশ্বের দ্রুতগতির রেলপথের মোট দৈর্ঘ্যের ৬০ শতাংশ এককভাবে চীনে রয়েছে। রেলপথ শুধু চীনাদের যাতায়াতের প্রধান পদ্ধতিই নয়, বরং চীনের একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এখন চীনের দ্রুতগতির রেলগাড়ি প্রযুক্তি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

২০১২ সাল থেকে চীনের রেল কম্পানির নেতৃত্বে চীনের সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থাগুলো চীনের স্ট্যান্ডার্ড রেলগাড়ি উত্পাদনের চেষ্টা শুরু করে। ২০১৫ সালে তা উত্পাদনের পর চীনের তাশি রেলপথ, চাং শু রেলপথ ও হাতা রেলপথে সফল পরীক্ষা চালানো হয়। এরপর চীনের রেল কম্পানি চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন গতির রেলপথে 'ফু সিং' নামক রেলগাড়ি চালু করবে। এতে যাত্রীরা আরও ভালো সেবা পাবে বলে আশা করা যায়। (শিশির/আলিম/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040