0607
|
চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ার পূর্বাঞ্চলে ছোট একটি গ্রাম আছে, যেখানে বসবাস করে ৮৪টি পরিবার। গ্রামের নাম লিয়াং ছুং ছাং। ছোট হলেও, এ গ্রামে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৩টি কৃষি সমবায় ও দুটি ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে লিয়াং ছুং ছাং দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট জেলায় এটিই একমাত্র গ্রাম, যেটি দারিদ্র্যসীমার ওপরে আছে। অনেকে এখন গ্রামে ফিরছেন এবং অন্যদের ফেরার পরামর্শ দিচ্ছেন।
চীনা ভাষায় 'লিয়াং ছুং ছাং' মানে এমন জায়গা যেখানে ভাল মানের বীজ চাষ করা হয়। লিয়াং ছুং ছাং গ্রামকমিটির দায়িত্বশীল ব্যাক্তি লি খুন ভেং বলেন, কৃষিকাজ ছাড়াও অন্য পদ্ধতিতে কৃষকরা নিজেদের আয় বাড়াতে পারে। তিনি বলেন, (রে)
"আমাদের গ্রামের ৮৪টি পরিবারের মোট লোকসংখ্যা ৩১৬ জন এবং জমির মোট আয়তন ২৭৫৬ মু (প্রায় ১৮৪ হেক্টর)। এখন সব জমি সমবায় প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দাদের কেউ কেউ সমবায়ে কাজ করেন, কেউ কেউ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনটা সমবায়ে ১৩-১৪ জন স্থায়ী এবং ১০-১২ জন অস্থায়ী কর্মী কাজ করেন। গ্রামের সবাই এখন কাজ করে অতিরিক্ত আয় করতে পারেন।"
তিনটি সমবায়ের একটির জমিতে আলু, জোয়ার ইত্যাদি চাষ করা হয়; একটি সমবায়ের জমিতে গরু, ভেড়া ইত্যাদি লালন করা হয়; এবং একটি সমবায়ে কৃষিযন্ত্রপাতির ব্যবসা করা হয়। তিনটি সমবায় প্রতিষ্ঠান একসাথে একটি শিল্প চেন তৈরি করেছে।
গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছায় সমবায়ে অংশ নিচ্ছেন। যাদের কর্মক্ষমতা নেই তারা দারিদ্র্য তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে সমবায়ের শেয়ার কিনতে পারেন এবং প্রতিবছর ১২০০ ইউয়ান পর্যন্ত বোনাস পেতে পারেন। যদি সমবায়ের মুনাফা ১৭ শতাংশের বেশি হয়, তবে বোনাসের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। গত বছর গ্রামটিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কৃষিযন্ত্রপাতি সমবায়। এ সমবায় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কৃষিসরঞ্জাম ক্রয় করে। সরঞ্জামগুলো গ্রামের চাহিদা পূরণ করে। সরঞ্জামগুলো ভাড়া দিয়ে বছরে আয় হয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ ইউয়ান। এ অর্থ সমবায়ের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যবহৃত হয়।
আয়ের ব্যাপারে গ্রামবাসীদের ধারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন সমবায় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাজে অংশ নিচ্ছে। ছাং লি চেনের পরিবার ছিল দরিদ্র। তিনি বলেন,
"আগে আমি জমিতে চাষ করে প্রতিবছর ৩০ হাজার ইউয়ান আয় করতাম। বিরূপ আবহাওয়া থাকলে আয় আরও কম হতো।"
৫৩ বছর বয়সী ছাং লি চেনের ২ হেক্টর জমি আছে। তার স্ত্রীর শরীর ভাল না। তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। উল্টো তাকে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ খেতে হয়। সমবায়ে অংশ নেওয়ার পর এখন ছাং লি চেন আর জমিতে চাষ করেন না। তিনি নিজের জমির ভাড়া বাবদ প্রতিবছর ১০ হাজার ইউয়ান করে পান। পাশাপাশি তিনি ও তার ছেলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। এখন গোটা পরিবারের বার্ষিক আয় ৭০ হাজার ইউয়ান এবং তার স্ত্রীর চিকিত্সাব্যয় নিয়ে তার আর কোনো চিন্তা নেই।
সাংবাদিকরা দেখেছেন, ছাং লি চেনের মতো পরিবারগুলোতে অন্তত একজন অসুস্থ সদস্য আছে, যাকে দীর্ঘকালীন চিকিত্সার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ ধরনের রোগীরা আয় করতে পারে না। উল্টো তাদের পেছনে ব্যয় হয়। পরিবারগুলোর দারিদ্র্যের এটা একটা বড় কারণ। এ সমস্যা মোকাবিলায় গ্রামে বীমাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। স্থানীয় চিকিত্সা-বীমা ব্যুরোর দায়িত্বশীল ব্যক্তি লি ইয়ান ছিং বলেন,
"প্রতিজন গ্রামবাসী বীমার জন্য ১৮০ ইউয়ান করে ব্যয় করে এবং সরকার ভর্তুকি দেয় ৪৫০ ইউয়ান। প্রতিজনের চিকিত্সা তহবিল ৬৩০ ইউয়ানের। তা ছাড়া, প্রবীণ, অনাথ ও প্রতিবন্ধীসহ যাদের কাজ করার সামর্থ্য নেই, তাদের প্রতিজনকে সরকার অতিরিক্ত ১৮০ ইউয়ানও ভর্তুকি দেয়।"
লিয়াং ছুং ছাং গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ভাং সুয়ে ওয়েন জানান, ২০১৭ সাল থেকে গ্রাম-কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের মাথাপিছু ১০০ ইউয়ান করে ভর্তুকি দিতে শুরু করে। ফলে চিকিত্সা-বীমার প্রিমিয়াম বাবদ দেয় ১৮০ ইউয়ানের মাত্র ৮০ ইউয়ানই ব্যক্তিকে নিজে বহন করতে হয়।
চিকিত্সা-বীমার পাশাপাশি পেনশন-বীমাও গ্রামে চালু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুয়ে ওয়েন বলেন,
"সরকার এ ব্যাপারে কৃষকদের জন্য সুবিধাজনক নীতি প্রণয়ন করেছে। প্রতিজন বাসিন্দা প্রতিমাসে ১০০ ইউয়ান করে পেনশন-বীমার প্রিমিয়াম দিলে, ৬০ বছর বয়স থেকে তারা নিয়মিত পেনশন পাবেন। আর আমাদের গ্রাম এ নীতি সহজতর করেছে। পেনশন-বীমার আওতায় এলে গ্রামবাসীরা ৫০ বছর বয়স থেকেই পেনশন পাবেন।"
জমির ভাড়া ও বীমা-সুবিধার কারণে গ্রামবাসীর আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। ২০১৬ সালে গ্রামের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ইউয়ান ছিল। গ্রামবাসীদের যেসব সদস্য বাইরে কাজ করেন, গ্রাম-কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য দুর্ঘটনা-বীমার সুযোগ দিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে ভাং সুয়ে ওয়েন বলেন,
"যারা গ্রামের বাইরে কাজ করেন, তাদের জন্য ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা-বীমার সুবিধা দেয় গ্রাম। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এ বীমা তাদের চিকিত্সার ব্যয় বহন করে।"
ভর্তুকি ও বীমা—এই দুটি ব্যবস্থার মাধ্যমে লিয়াং ছুং ছাং গ্রামের কৃষকরা শুধু দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে তা নয়, বরং এতে তাদের আয় বাড়ছে এবং তাদের জীবনমানও উন্নত হয়েছে। সূর্যাস্তের সময় গ্রামে ঢুকলে প্রায়ই শোনা যায় গ্রামবাসীদের সমবেত কণ্ঠের গান। সে সব গানে উঠে আসে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা। (শিশির/আলিম)