হ্যালো চায়না: ৩১. বসন্ত উত্সব
বসন্ত উত্সবকে চীনা ভাষায় বলা হয় 'ছুন চিয়ে'। আর এ উত্সব উদযাপনকেবলা হয় 'কুও নিয়েন'। চীনা জাতির সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ উত্সব। এ সময়তীব্র শীতের রুক্ষতাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরকে অভিনন্দন জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গোটা জাতি। বসন্ত উত্সবের শুরুতে চীনের মানুষ ঘরবাড়ি পরিষ্কার করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার ও নতুন পোশাক কেনাকাটা করে। 'ছু সি' হলো চীনের ঐতিহ্যিক চান্দ্রপঞ্জিকার শেষ দিন। বসন্ত উত্সব ঠিক সেদিন থেকে অর্থাৎ 'ছু সি' থেকে শুরু হয়। এদিন পরিবারের সবাই মিলে বসন্ত উত্সবেরশ্লোকও উত্সবের ছবি দেয়ালে ঝুলায়, পটকা ও বাজি ফুটায় এবং রাতের জন্য বিভিন্ন রকম খাবার তৈরি করে। খাওয়া শেষে আড্ডার সঙ্গে চলে ঐতিহ্যবাহী চীনা ডাম্পলিং রান্না। বর্তমানে অবশ্য পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে বসন্ত উত্সব উপলক্ষে টেলিভিশনের বিনোদনমূলক সান্ধ্য অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সারা রাত না ঘুমিয়ে সবাই একসঙ্গে নতুন বছরের জন্য অপেক্ষা করে। একে চীনা ভাষা বলা হয় 'শৌ সুই'। পরের দিনে অর্থাৎ চীনা পঞ্জিকার প্রথম দিন, চীনারা নতুন পোশাক পরে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা করেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সাধারণত চীনা ভাষায় বলা হয় 'কুও নিয়েন হাও' ও 'কুং সি ফা ছাই'। এর মানে, 'শুভ বসন্ত উত্সব' এবং'নতুন বছর বেশি অর্থ আসুক'। পাশাপাশি বড়রা শিশুদের হাতে টাকা-পয়সাতুলে দেন। এর মাধ্যমে নতুন বছর শিশুর শান্তি ও আনন্দের সঙ্গে বেড়ে ওঠা প্রত্যাশা করা হয়। চীনের এই বসন্ত উত্সব কিভাবে এলো? হ্যাঁ, এর পেছনে একটি কাহিনী রয়েছে।
কিংবদন্তীতে রয়েছে, প্রাচীনকালে 'নিয়েন' নামে এক ভয়ঙ্কর দানব ছিলো। প্রতিবছরের শেষ দিনে এই দানব বাইরে বের হয়ে ফসলের ক্ষেত নষ্ট করত। একবার 'নিয়েন' এসব ধ্বংসযজ্ঞচালাতে বাইরে আসে। কিন্তু হঠাৎ সে ভয় পেয়ে চলে যায়। কারণ, এক পরিবার দরজার বাইরে লাল পোশাক ঝুলিয়েছিলো এবং শিশুরা পটকা ও বাজি ফোটাচ্ছিল। এ ঘটনা থেকে মানুষ জানতে পারে যে, 'নিয়েন' লাল রঙ, আগুনও আওয়াজ ভয় পায়। এরপর প্রতিবছরের শেষ দিনে নিয়ানের বাইরে আসার সময় লাল রঙের কাপড়ে বসন্ত উত্সবের শ্লোক লেখা হয় ও বসন্ত উত্সবের ছবি দেয়ালে ঝুলানো হয় এবং পটকা ও বাজি ফুটানো হয়। এ অবস্থা দেখে 'নিয়েন' ভীষণ ভয় পায় ও বাইরে আসা বন্ধ করে দেয়। দানব নিয়ানেরঅত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রতিবছর এ দিনকে উদযাপনের সময় চীনা ভাষায় 'কুও নিয়েন' বলা হয়।