পেইচিং অলিম্পিকের জন্য কয়েক লাখ স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে । এখন তারা পর্যায়ক্রমে নিজেদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন । পেইচিং রাজধানী বিমান বন্দরে বিভিন্ন জায়গায় তাদেরকে সেবাকাজ করতে দেখা যায় । তারা একই রকমের লাল টি সার্ট পরেন । বুকে ওপরে হাসি মুখের একটি চিহ্ন আছে । তারা দেশ বিদেশের পর্যটকদের আন্তরিক সেবায় নিয়োজিত ।
আপনারা যে কথা শুনছেন , তা পর্যটকককে ফ্লাইটের তথ্য সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকের ব্যাখ্যা । স্বেচ্ছাসেবকের নাম কুং ছেন । তিনি পেইচিং শহর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি ভাষা বিভাগের ফরাসী ভাষার তৃতীয় বর্ষের ছাত্র । তিন মাস আগে তিনি পেইচিং অলিম্পিকের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন । কয়েক দফা পরীক্ষার পর তিনি পেইচিং রাজধানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন অলিম্পিক স্বেচ্ছাসেবক হতে পেরেছেন । তার প্রধান দায়িত্ব হল পর্যটকদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া এবং ফরাসী ভাষাভাষী দেশগুলোর পর্যটকদেরকে ভাষা সেবা দেয়া । কেন বিমানবন্দরে একজন স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ? সংবাদদাতার এ প্রশ্নের উত্তরে কুং ছেন বলেন :
আমার মনে হয় , প্রথমত , অলিম্পিকের স্বেচ্ছাসেবকের কাজ খুব পবিত্র । দ্বিতীয়ত , এত বেশি বছরের অপেক্ষার পর পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের অধিকার পেয়েছে । আমার মনে হয় এ সুযোগ খুব মূল্যবান । বিদেশী পর্যটকের সঙ্গে বিনিময়ের মাধ্যমে আমার ফরাসী ভাষার মানও উন্নত হবে ।
পর্যটকদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কাজটা দেখতে খুব সহজ , কিন্তু বিমানবন্দরের কাজ সম্পর্কে কিছুই জানেন না এমন স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য এটি সহজ নয়। তাদের শুধু রাজধানী বিমানবন্দরের বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিকতার তথ্য মনে রাখলেই চলবে না , দেশ বিদেশের পর্যটকদেরকে আন্তরিকতার সঙ্গে বিস্তারিত উত্তরও দিতে হবে ।
বিমানবন্দরে কয়েক দিন ধরে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করার পর কুং ছেন গভীর সমস্যায় পড়া কিছু পর্যটকের উত্কন্ঠাও অনুভব করেছেন । তিনি বলেন :
আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে যে , যারা প্রথমবারের মত বিমান ভ্রমণে আসেন , তারা খুব উত্কন্ঠিত থাকেন , তারা জনেন না কি করতে হয় । এক বার একজন পর্যটক আমাকে জিজ্ঞেস করেন , লিফ্ট কোথায় ? আমি তাকে বলি :ঠিক আপনার পিছনে । তিনি আবার আমাকে জিজ্ঞেস করেন , পিছনে কোথায়? হয়তো তিনি অতিরিক্ত উদ্বেগে ভুগছিলেন।
কুং ছেন সংবাদদাতাকে জানান , কিছু কিছু পর্যটক নতুন পরিবেশে আসলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে । অলিম্পিকের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তারা পর্যটকদেরকে সহজ থাকা এবং নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সাহায্য করেন । অলিম্পিক গেমস চলাকালে বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তা , খেলোয়াড় এবং পর্যটকদের অভ্যর্থনার কাজ ভালোভাবে করার জন্য পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটি ও রাজধানী বিমানবন্দর কুং ছেনের মত বিদেশি ভাষা জানা অথবা বিদেশি ভাষা বলতে পারা এমন অনেক স্বেচ্ছাসেবক গ্রহণ করেছে । তারা সাধারণ পর্যটকদের সেবা দেয়া ছাড়া বিদেশি পর্যটকদের দোভাষী হিসেবে সেবা দেবেন ।
কুং ছেন সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , একজন ফরাসী ভাষার শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি পর্যটকদেরকে ফরাসী ভাষী সেবা দিতে খুব আগ্রহী । বিশ্বে অনেক দেশেই ফরাসী ভাষা চালু। এসব দেশের পর্যটকদের ভিন্ন রকমের ফরাসী ভাষা কুং ছেনের জন্যও চ্যালেঞ্জ । তিনি বলেন :
বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হল আমি আফ্রিকার পর্যটকদের কথা সহজে বুঝতে পারি না । কারণ আফ্রিকা অঞ্চলের ফরাসীর সঙ্গে ফ্রান্সের ফরাসী ভাষার কিছুটা পার্থক্য আছে । তাই আমি এক সময় আফ্রিকার ফরাসী ভাষা শুনি এবং অন্য সময় ফরাসীদের সাহায্য করি । মাঝে মাঝে ইংরেজী শুনি । তাই তাদেরকে উত্তর দেয়ার কাজটা ততটা সহজ নয় ।
কুং ছেনের কোনো চাকরির অভিজ্ঞতা নেই । তাই বিমানবন্দরের সেবা কাজ তাকে অতিরিক্ত ক্লান্ত করে তোলে । তবে তিনি বলেন , প্রত্যেক বার পর্যটকদের সমস্যা সমাধান করা এবং তাদেরকে সাহায্য করার পর নিজেও আনন্দ বোধ করি । বিমানবন্দরে স্বেচ্ছাসেবক কাজ থেকে নিজস্ব অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন , এ অভিজ্ঞতা শুধু নিজের বিদেশি ভাষার মান উন্নত এবং অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের সামর্থ্য বাড়িয়েছে তা নয় , বরং তা নিজের জীবনের জন্য খুব মূল্যবান একটি সম্পদও বটে ।
পেইচিং রাজধানী বিমানবন্দরের দুই নম্বর টার্মিনালের অভ্যন্তরিণ গেটে স্বেচ্ছাসেবকের ইউনিফর্ম পরা একজন নারী সংবাদদাতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । তিনি জিজ্ঞাসা কেন্দ্র ও টার্মিনালের গেটের মধ্যে পর্যটকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানর দেন এবং প্রতিবন্ধী পর্যটকদের লাগেজ সংগ্রহে সাহায্য করেন । সংবাদদাতার প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন , তিনি টার্মিনালের তথ্য বিভাগের একজন কর্মী । তার নাম লি চিয়ান সিন । ৫৮ বছর বয়সী লি চিয়ান সিন দু'বছর পর অবসর নেবেন । অলিম্পিক গেমস ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিমাবন্দরে ব্যস্ততাও বাড়ছে , অলিম্পিকে নিজের অবদান রাখার জন্য তিনি স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন । তিনি বলেন :
অলিম্পিক গেমস চীনাদের বহু বছরের আকাঙ্খা । আমার মনে হয় অলিম্পিক গেমস আমাদের দেশকে আরো সমৃদ্ধ করবে । অবসর নেওয়ার আগে আমার আরো দু'বছর সময় আছে । অবসর নেয়ার পর আমার স্বেচ্ছাসেবকের অভিজ্ঞতা এবং স্মৃতি খুব তাত্পর্যপূর্ণ হবে । আমার ছেলেমেয়ে অথবা আমার নাতি নাতনির জন্যও তা তাত্পর্যসম্পন্ন ।
লি চিয়ান সিন বলেন , তিনি বরাবরই বিমানবন্দরের টার্মিনালের তথ্য বিভাগে কাজ করেন । তাই বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গা , কার্যক্রম, তথ্য এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে খুব ভালো জানেন । বয়স একটু বেশি বলে ৱ মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে । তবে অন্যকে সাহায্য করা তার জন্য খুব সুখের ব্যাপার । তিনি বলেন :
যখন আমি অন্যকে পথ নির্দেশনা দেই , বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করি , তাদের জন্য লাগেজ গাড়িতে তুলে দেই , তখন আমার মনে হয় তাদেরকে সাহায্য করা খুব সুখের ব্যাপার ।
অলিম্পিক গেমস এগিয়ে আসার পাশাপাশি পেইচিং রাজধানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অলিম্পিক বিমান পরিবহন নিশ্চয়তার কাজও ১ জুলাই থেকে চালু হয়েছে । ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানী বিমানবন্দরের স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা থাকবে ২ হাজার ২ শ' এবং ২৪ ঘন্টার পালাক্রমিক ব্যবস্থা চালু থাকবে । এসব স্বেচ্ছাসেবক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় ,কর্মকর্তা ও তথ্য মাধ্যমের সাংবাদিকদের বিভিন্ন সেবা দেবেন , ভাষার পাশাপাশি বিভিন্ন আকস্মিক সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবেন । তারা শ্রেষ্ঠ সেবা দিয়ে ও হাসি মুখে যাত্রীদের স্বাগত জানাচ্ছেন ।
|