বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ছোট আকারের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ৩০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদেশের প্রতিনিধিরা টানা ৯ দিন আলোচনা করার পরও দোহা রাউন্ড আলোচনার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছতে পারেন নি । ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক প্যাস্কেল লামি অকপটে স্বীকার করেছেন যে এবারের সম্মেলন ব্যর্থ হয়েছে ।
যারা আশা করে দোহা আলোচনা সফল হলে বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতি হবে , তারা এ ফলাফল শুনে নিশ্চিতভাবেই হতাশ হয়েছেন । এতে দোহা বাণিজ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের আস্থায় আঘাত হানা হয়েছে । লামি স্বীকার করেছেন , এ ঘটনা সাত বছরব্যাপী দোহা রাউন্ড আলোচনার ওপর গুরুতর একটি আঘাত ।
সম্মেলন শেষে যুক্তরাষ্ট্র , ইইউ , ব্রাজিল ও ভারতসহ কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ সদস্যদেশের প্রতিনিধিরা এ ফলাফল সম্পর্কে হতাশ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন । তারা নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং এ ফলাফলের দায়িত্ব বহনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন । তাদের অবস্থান ভিন্ন হলেও সবাই এ ফলাফলে হতবাক হয় নি ।
আসলে এবারের আলোচনার গতি প্রবাহ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ছিল না । আলোচনা এক সপ্তাহ স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু তিন দিন পরই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আলোচনা ব্যর্থ । লামি আলোচনাটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিজের প্রভাব খাটিয়ে দু'টি "বিশেষ ব্যবস্থা"ও নিয়েছিলেন । যা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার জন্য রেকর্ড । প্রথমটি হল "জি-৭" ব্যবস্থা গঠন । যুক্তরাষ্ট্র , ইইউ , চীন , জাপান , অস্ট্রেলিয়া , ব্রাজিল ও ভারত এ সাতটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশকে নিয়ে প্রথমে একটি ছোট আকারের সম্মেলন আয়োজন করা । এতে খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পর "সবুজগৃহ সম্মেলনের" ৩৫টি সদস্যের অংশগ্রহণে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে তা দাখিল করা । এ সাতটি সদস্যদেশের মোট বাণিজ্যিক মূল্য বিশ্বের বাণিজ্যিক মূল্যের ৮০ শতাংশ । এসব দেশকে দোহা আলোচনা প্রক্রিয়ার ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব বিস্তারকারী দেশ হিসেবে মনে করা হয় । দ্বিতীয়টি হল "লামি প্রস্তাব" দাখিল । এ প্রস্তাবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত রয়েছে । এ প্রস্তাবকে আলোচনার নতুন ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় । পরে বিভিন্ন পক্ষ ২৫ জুলাই আবার আলোচনা শুরু করে ।
দোহা আলোচনার ভবিষ্যত সম্পর্কে কোনো কোনো সদস্য মনে করে খুব দ্রুত সাফল্যের সঙ্গে এটা শেষ করা উচিত । এবারের সম্মেলনে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না হলেও অনেক সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা হয়েছে । এ সম্পর্কে লামি বলেন , দোহা আলোচনার ভবিষ্যত্ নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১৫৩টি সদস্যদেশের যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।
তাহলে কেন এবারের ছোট আকারের মন্ত্রী সম্মেলন ব্যর্থ হলো ? বিশ্লেষকরা মনে করেন , এর কয়েকটি কারণ আছে ।
প্রথমত , আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নিয়মের প্রণয়নের অধিকার উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা । বর্তমানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা পাশ্চাত্য দেশগুলোর নির্ধারিত । উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি অন্যায্য বাণিজ্যিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিও জোরদার হচ্ছে । দোহা আলোচনা এ ধরনের পরিস্থিতি পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি সংস্কারমূলক উদ্যোগ । সমস্যা হলো উন্নত দেশগুলো তাদের সুবিধায় ছাড় দিতে নারাজ ।
দ্বিতীয়ত, উন্নত দেশগুলো , বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কৃষি ভর্তুকি কমানো এবং কৃষি পণ্যের শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে বাস্তবে কোনো ছাড় দেয় নি । যুক্তরাষ্ট্র কৃষি ভর্তুকি কমিয়ে ১৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি এবং ইইউ কৃষি পণ্যের শুল্ক কমিয়ে ৮০ শতাংশ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের জন্র তা যথেষ্ট লাভজনক ।
সবশেষে কয়েকটি প্রধান সদস্যদেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র , ইইউ ও ভারতের প্রতিনিধিরা দেশের অভ্যন্তরের ও ইউনিয়নের চাপের মধ্যে রয়েছে বহন করছেন । যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এগিয়ে আসছে । ইইউর কিছু সদস্য দেশ বার বার পিটার ম্যানডেলসনকে ইইউর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য তাগিদ দিয়েছে । আগামী বছর ভারতে সাধারণ নির্বাচন হবে । এসব প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক সংকট এড়ানোর জন্য বেশি ছাড় দিতে চান না । এমনকি কেউই সহজে ছাড় দিতে চান না ।
|