১৯৮০ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোয় ২২ তম অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয়। কল্যাণের প্রতীক রাশিয়ার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং হাপাকপা ভালুক মিশা জনগণের মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। সম্প্রতি রাশিয়ার অলিম্পিক কমিটির সম্মানসূচক চেয়ারম্যান, ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিক গেমসের সাংগঠনিক কমিটির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান ভিতালি স্মিরনভ আমাদের কাছে সেই কঠিন পরিস্থিতিতেও সফল একটি অলিম্পিক গেমসের কথা তুলে ধরেছেন।
এখন ৭৩ বছর বয়সী স্মিরনভ রাশিয়ার অলিম্পিক কমিটির সম্মানসূচক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৮০ সালের মস্কো গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসের পরিচালনা কাজে অংশ নিয়েছিলেন এবং মস্কো অলিম্পিক গেমসের সাংগঠনিক কমিটির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর দায়িত্ব ছিলো আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এবং গেমসে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ক্রীড়া সংস্থা এবং তথ্য ও প্রকাশনা মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করা। মস্কো অলিম্পিক গেমসের সাংগঠনিক কাজ ও প্রস্তুতি নেয়ার প্রক্রিয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে স্মিরনভ স্মৃতিচারণ করে বলেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭৯ সালের শেষ নাগাদ আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েক দেশ অলিম্পিক গেমস বর্জন করেছিল। এই ঘটনা সেবারের অলিম্পিক গেমসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। তিনি বলেন,
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মার্কিন প্রতিনিধি দল মস্কো অলিম্পিক গেমসে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দেন। এই বর্জন ঠেকানোর জন্য আমি ১৯৮০ সালের জানুয়ারী মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোসহ অন্যান্য দেশে গিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, অলিম্পিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ উচিত নয়। আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সৈন্য পাঠানোর সঙ্গে অলিম্পিক গেমসে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তের কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের প্রচেষ্টার পর অনেক দেশ অবশেষে অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছিল। বৃটেন ও ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশের সরকার অলিম্পিক গেমসের প্রতিরোধ করার কথা ঘোষণা করেছিলো। তা সত্ত্বেও সেসব দেশের খেলোয়াড়রা অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছিল।
স্মিরনভ মনে করেন, বর্জনও প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়ায় অনেক দেশের খেলোয়াড়রা অলিম্পিক গেমসে অংশ নেন নি। এসব খেলোয়াড়ের জন্য এটা সবচেয়ে নিষ্ঠুর ঘটনা ছিল। তিনি বলেন,
অলিম্পিক বর্জনের ফলাফল হলো খেলোয়াড়দেরকে বঞ্চিত করা। অনেক খেলোয়াড় অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে না পারায় অনুশোচনা করেছিলেন। কারণ অধিকাংশ খেলোয়াড়ের সারা ক্রীড়া জীবনে অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার সুযোগ মাত্র একবার। খুব কম অ্যাথলেট একটানা দুবার অংশ নিতে পারেন। তাই বলা যায়, যারা ১৯৮০ সালের অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে পারেন নি তাদের জন্য খুব দুঃখজনক ঘটনা ছিলো সেটি।
১৯৮০ সালের অলিম্পিক গেমসের ওপর রাজনৈতিক কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। তা সত্ত্বেও ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে আয়োজিত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেবারের অলিম্পিক গেমস প্রতিযোগিতা সফল হয়েছিল। অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়রা ভালোভাবে প্রতিযোগিতা করেছিলেন। সেই অলিম্পিক গেমসে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ৮০টি স্বর্ণ পদক, ৬৯টি রৌপ্য পদক এবং ৪৬টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে প্রথম স্থানে ছিলো। ১৯৫২ সালের পর ১৯৮০ সালের অলিম্পিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ পদক পায়। উল্লেখ্য যে, প্রতিযোগিতার আয়োজন সফল হওয়া ছাড়াও, সেবারের মস্কো অলিম্পিক গেমসের কল্যাণের প্রতীকও সার্থক হয়েছিল। স্মিরনভ বলেন,
১৯৮০ সালের অলিম্পিক গেমসের কল্যাণের প্রতীক মিশা বরাবরই ব্যাপক অভ্যর্থনা পেয়েছিল। তখন কল্যাণের প্রতীক বেছে নেয়ার আগে অনেক প্রস্তাব এসেছিল। আমরা অনেক প্রাণীকেই প্রতীক হিসেবে বেছে নিতে পারতাম। কিন্তু অবশেষে আমরা দেশের বৈশিষ্টসম্পন্ন প্রতিনিধি ভালুক বেছে নেই।
১৯৮০ সালের মস্কো অলিম্পিক গেমসের পর স্মিরনভ যথাক্রমে সোভিয়েত ইউনিয়নের অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান, দু'বার রাশিয়ার অলিম্পিক গেমস কমিটির চেয়ারম্যান এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে। বর্তমান রাশিয়ার অলিম্পিক গেমস কমিটির সম্মানসূচক চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক গেমস কমিটির সদস্য হিসেবে স্মিরনভ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক মঞ্চে সক্রিয় রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ২০০৮ সালের অলিম্পিক গেমসের কিছু ভেণ্যু পরিদর্শন করার জন্য পেইচিংয়ে এসেছেন। তিনি বলেন,
আমরা মনে করি, পেইচিং সব প্রস্তুতি কাজ শেষ করেছে। আমি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের অনেক ভেণ্যু পরিদর্শন করেছি। এর মধ্যে রয়েছে শুটিং ভেণ্যু। আমি আমাদের বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষকদেরকে জিজ্ঞেস করেছি, তারা এসব ভেণ্যুর গুণগত মান এবং প্রতিযোগিতার পরিবেশের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
সম্প্রতি কিছু দেশ ও সংস্থা পেইচিং অলিম্পিক গেমস প্রতিরোধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে স্মিরনভ বলেন,
আমি মনে করি, রাজনীতি এবং ক্রীড়ার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। যে অল্প কিছু মানুষ পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রতিরোধ করতে চায় আমরা তাদেরকে সমর্থন করি না। আমার মনে হয়, তিব্বত সমস্যা হচ্ছে চীন এবং চীনা জনগণের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। চীনা জনগণের উদ্যোগে সমাধান করা উচিত। আমরা পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সুষ্ঠুভাবে আয়োজিত হবে বলে কামনা করি। আশা করি, পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে বিশ্বকে একটি নতুন চীন এবং চীনের সফলতা প্রদর্শিত হবে। পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কর্তব্য আরো সামনে এগিয়ে যাবে। (লিলি)
|