২১ জুলাই নেপালের সাংবিধানিক পরিষদের প্রতিনিধিরা দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। এতে নেপালী কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রাম বরন যাদব নেপাল প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বচিত হয়েছেন। যার ফলে নেপালের রাজনৈতিক মঞ্চে দীর্ঘ তিন মাসের অচলাবস্থার অবসান ঘটেছে। এই নির্বাচনের পর নতুন সরবার গঠনও বাস্তবায়িত হতে পারে। এ দ্বিতীয় দফা ভোটদানে ৫৯০জন প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। রাম বরন যাদব ৩০৮টি ভোট পেয়ে বড় ব্যবধানে নেপালের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দী নেপালের মাওবাদী কমিনিষ্ট পার্টির মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রাম রাজার জয়লাভ ২৮২টি ভোট পেয়েছেন। এর আগে রাম রাজার জয়লাভ করার সম্ভবনা বেশি বলে মনে করা হয়েছিল। তিনি নেপালের তৃতীয় বৃহত্তম পাটি মাধেসি জনধিকার ফোরাম মাদিসি দলের সমর্থন পেয়েছিলেন। ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রথম দফা নির্বাচনে তার বড় ব্যবধানে জয়লাভ করার কথা ছিল। কিন্তু ১৮ জুলাই মাওবাদি মেধেসিদের মনোনীত ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সমর্থন দিতে অস্বীকার করায় তারা নেপালী কংগ্রেস পাটির মনোনীত প্রার্থী রাম বরন যাদবকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে দু দফা নির্বাচনের পর পুরো নির্বাচন পরিস্থিতি বদলে যায়। অবশেষে রাম বরন যাদব নির্বাচনে জায়লাভ করেন। ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাধেসি প্রার্থী পরমানন্দ ঝাঁ নেপালের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
নির্বাচন শেষে রাম বরন যাদব বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার জয়লাভ " গণতন্ত্রের জয় , নেপালের জনগণের জয়।" তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব , স্বাধীনতা ও ভূভাগীয় অখন্ডতা রক্ষায় আত্মনিয়োজিত থাকবে। নেপালে সহিংসতার অবসান ঘটানো, গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও জাতীয় সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি নেপালের জনগণেকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। সংশ্লিষ্ট কার্য প্রণালী অনুযায়ী, নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ২২ জুলাই বিকালে শপত গ্রহণের কথা। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট শপত গ্রহণের পর নেপালের নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদিও নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় নতুন সরকার গঠনের পথ সুগম হয়েছে, তবুও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল মাওবাদীদের পরাজয় নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভবিষ্যতে অনিষ্চিয়তার ছায়া ফেলেছে।
বতর্মানে নেপালের মাওবাদী কমিউনিষ্ট পার্টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছে।প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাম বরন যাদবের জয়লাভের পর মাওবাদী কমিউনিষ্ট পার্টির চেয়ারম্যান প্রচন্ত তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে তিনি তাদের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হবে কি না সে ব্যাপারে কিছু বলেন নি। মাওবাদীরা নতুন সরকার গঠনে অস্বীকৃতি জানলে পার্লামেন্টের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম দল কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে নতুন যৌথ সরকার গঠন করতে হবে। কিন্তু পার্লামেন্টে মাওবাদীদের আসন এক তৃতীয়ংশেরও বেশী । ভবিষ্যতে সরকার কোনো নতুন নীতি প্রণয়ন বা নতুন সংবিধান সংশোধন করতে চাইলে দুই তৃতীয়াংশের সমথন দরকার হবে।
নতুন সরকার গঠনের জন্য মাওবাদী সম্মত হলেও ভবিষ্যতে নতুন সরকারের প্রশাসন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ক্ষমতার ভাগাভাগিতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতভেদ দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মাওবাদীদে রাজনৈতিক জোট প্রায় ভেঙ্গে গেছে। সুতরাং, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক পার্টির মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা বাস্তবায়িত হবে কিনা তা হল নেপালের গণতন্ত্র ও শান্তি প্রক্রিয়ার উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
|