মার্কিন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বারাক ওবামা ২০ জুলাই আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠককালে দু'পক্ষ আফগানিস্তানের পরিস্থিতি, সন্ত্রাস দমন, মাদক দমন, পুনর্গঠন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। এর পাশাপাশি ওবামা আফগানিস্তানে মার্কিন কূটনীতিক, মার্কিন বাহিনী'র কমান্ডার ও সৈন্যদের সঙ্গে স্থানীয় পরিস্থিতি এবং মোতায়েনকৃত মার্কিন বাহিনী'র অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা জানান, বৈঠককালে ওবামা বলেন, ডেমোক্রেটিক কিংবা রিপাব্লিকান উভয় দলই আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী'র দীর্ঘ অবস্থান এবং প্রয়োজনীয় সাহায্যের বিষয়টি সমর্থন করবে। ওবামা বলেন, যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে আফগানিস্তানে সন্ত্রাস দমনে মার্কিন বাহিনী'র তত্পরতাকে অব্যাহতভাবে সমর্থন করবেন।
আফগানিস্তান থেকে রওনা হওয়ার পর এক বিবৃতিতে ওবামা বলেন, তার সফরসঙ্গী ছিলেন এমন দু'জন মার্কিন সিনেটর একই আশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, মার্কিন বাহিনী এবং ন্যাটো অব্যাহতভাবে আফগানিস্তান সরকারকে সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নত করার জন্য আরো বেশি সাহায্য দেবে। তাছাড়া, ওবামা আরো বলেন, মার্কিন সরকারের উচিত আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় থাকা সন্ত্রসীদের ওপর আঘাত হানার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আরো বেশি সাহায্য দেওয়া।
আফগানিস্তান ছাড়াও ওবামা ইরাক, জর্দান, ইসরাইল, জার্মানি, ফ্রান্স এবং বৃটেন সফরে যাবেন। গত জুন মাসে বাছাই পর্বের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি'র প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর এটাই ওবামার প্রথম বিদেশে সফর । সফরের প্রধান লক্ষ্য হল তার কুটনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে বোঝা পড়া তৈরী করা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার যে বাহিনী পরিচালনার ক্ষমতা আছে তা প্রমাণ করা। এর আগে রিপাব্লিকান পার্টি তার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা ঘাটতি আছে বলে অভিযোগ তুলেছিল। সফরের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানকে বেছে নেওয়ার কারণ হয়তো তার সন্ত্রাস দমনতার অবস্থান কতটা সুদৃঢ় তা প্রমান করা।
প্রথমত, ওবামা মনে করেন যে আফগানিস্তান সন্ত্রাস দমনের কেন্দ্র স্থাল। আফগানিস্তানে তালিবান ও আল-কায়দার ঘনিষ্ঠতা ও তাদের ব্যাপক তত্পরতার কারণে তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আফগানিস্তানে আরো বেশি সৈন্য পাঠানো এবং মার্কিন বাহিনী'র তত্পরতাকে ইরাক থেকে আফগানিস্তানে স্থানান্তরিত করা। ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, ওবামা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে ইরাক যুদ্ধের কারণে মানুষের দৃষ্টি ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলা থেকে দূরে সরে যাবে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন যুদ্ধের শক্তি অনেক কমিয়ে দেবে। এ কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আফগানিস্তান ইস্যু সম্ভবত ওবামা'র কূটনীতি'র একটি প্রধান বিষয়ে পরিণত হবে।
দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানের ওপরে গুরুত্ব দেয়ার আরেকটি কারণ হলো ভোটারদের সমর্থন অর্জন করা। অনেক মার্কিন নাগরিক ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও অর্ধেক মার্কিন নাগরিক আফগানিস্তানের সামরিক তত্পরতাকে সমর্থন করে। তাদের মতে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী'র তত্পরতার ফলাফল আছে। কেবল তালিবান এবং আল-কায়েদার সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত সাফল্য পেতে পারে। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে ওবামা ও জন ম্যাককেইনের অভিন্ন কেন্দ্রীয় ইস্যুতে হলো আফগানিস্তান ।
জনমত রয়েছে যে, সফরকালে ওবামা তার আফগানিস্তান নীতি সম্পর্কে বেশি না বললেও বুশের কার্যমেয়াদের পর যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান নীতি অবশ্যই পরিবর্তিত হবে। ইরাক যুদ্ধ নিয়ে ওবামা ও জন ম্যাককেইনের অবস্থান ভিন্ন। তবে আফগানিস্তানের ব্যাপারে তাদের মত একই ধরনের। তাদের অভিন্ন মত হল ইরাক থেকে সামরিক গুরুত্ব স্তানান্তরিত করে আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়া। আফগানিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বজায় রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই জরুরি।
আফগানিস্তানে তালিবান ও আল-কায়েদা'র তত্পরতা বেড়ে যাওয়ার পর দেশটি আবার সন্ত্রাস দমনের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। (ইয়াং ওয়েই মিং)
|