জুলাই মাস থেকে নীয় শার্ট আর ধূসর প্যান্ট পরিহিত পেইচিং অলিম্পিকের স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের সেবাকাজ শুরু করেছেন। পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের উপ-পরিচালক মাদাম জাং হোং ১৬ জুলাই পেইচিংয়ে বলেছেন, স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ সার্বিকভাবে শুরু হচ্ছে।
পেইচিং অলিম্পিক ও প্রতিবন্ধী অলিম্পিক চালাকালে প্রতিযোগিতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১ লাখ স্বেচ্ছাসেবক সরাসরি সেবা দেবেন। এর পাশাপাশি ৪ লাখ নগর স্বেচ্ছাসেবক শহরে ও স্টেডিয়ামের পাশে তথ্য সরবরাহ, ভাষা অনুবাদ এবং জরুরী চিকিত্সা ও সাহায্য সেবা দেবেন। ১ লাখ কিংবা ৪ লাখ যাই হোক না কেন এই সংখ্যা আসন্ন অলিম্পিকে পেইচিংয়ে বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদ ও কোচের সংখ্যার চেয়েও বেশি। পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের উপ-পরিচালক জাং হোং ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবক সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে জানান, এই বিশাল সংখ্যা শুধু নাগরিকদের অলিম্পিক সেবা দেয়ার আগ্রহের কারণেই নয়, বরং এবারের স্বেচ্ছাসেবক কাজের নীতিও এতে প্রতিফলিত হয়েছে। সেটি হল সবার অংশ গ্রহণ।
"আমরা সবাই অংশ গ্রহণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই। আমাদের ৬ যোগ কাঠামোর ১ কাজে আরো বেশি স্বেচ্ছাসেবক অলিম্পিকে অংশ নিতে পারে। এমন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরাও আশা করি অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবকের কাজ সমাজের বিভিন্ন দিক প্রতিফলিত হবে।"
মাদাম জাং হোং জানান, ৬ যোগ ১ কাঠামোতে কাজ সংগঠন মানে ৬টি প্রকল্প এবং একটি অনুষ্ঠান নিয়ে গঠিত কাঠামোতে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ। এই ৬টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রতিযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবক প্রকল্প, শহর স্বেচ্ছাসেবক প্রকল্প এবং সামাজিক স্বেচ্ছাসেবক প্রকল্প। একটি অনুষ্ঠান হল "স্মাইল পেইচিং"। এমন বৈচিত্রময় স্বেচ্ছা সেবার কাজের মাধ্যমে অনেকেই অলিম্পিকের খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এসব স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে একজন হচ্ছেন ৮৪ বছর বয়স্ক শাং মু চৌ। তিনি বলেন:
"পেইচিংয়ে ২৯তম অলিম্পিক গেমস আয়োজন চীনের শত বছরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং এটি একটি অমূল্য সুযোগ। আমি মনে করি এই জীবনে যদি একবার পেইচিং অলিম্পিকের জন্য কাজ করতে পারি তাহলে আমার সারা জীবনের জন্য মূল্যবান অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।"
অলিম্পিক চলাকালে শাং মু চৌ পেইচিং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে জুডো ও তায়কুন্ডো প্রতিযোগিতার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সেবা দেবেন।
মিস্টার শাং মু চৌ'য়ের মতো স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও পেইচিং অলিম্পিক চলাকালে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের ৯৩৫জন বিদেশী স্বেচ্ছাসেবক সেবা দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের এমারসন কলেজের দ্বিতীয় ব্রুস লার্চ হলেন তাদের মধ্যে একজন। তিনি এক সপ্তাহ আগে চীনে এসেছেন।
"যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় আমি পেইচিং অলিম্পিকে স্বেচ্ছাসেবকের কাজের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। এর মধ্যে রয়েছে চীনা সংস্কৃতি জানা এবং চীনা ভাষা শেখা। একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে আমি খুব খুশি যে চীনে আসার সুযোগ পেয়েছি এবং পেইচিং কি রকম শহর তা নিজের চোখে দেখতে পারছি। আমার কলেজ, আমার দেশ, অথবা পেইচিং এবং চীনের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের সামনে পেইচিং অলিম্পিক গেমসকে তুলে ধরতে পারছি, এ নিয়ে আমি খুব গর্বিত।"
প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকের কাছে স্বেচ্ছাসেবা সংক্রান্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা খুব প্রয়োজনীয়। তাদেরকে দক্ষ প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটি ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং তাদেরকে কিছু প্রতিযোগিতায় মহড়া দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াং সু হুই অলিম্পিক চলাকলে জাতীয় সাঁতার কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবা দেবেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি বেশ কিছু বড় প্রতিযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবার কাজ করছেন।
"আমি ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে চীনের ওপেন টেনিস প্রতিযোগিতা এবং দোহা গেমসের স্বেচ্ছাসেবার কাজ করেছি। তাছাড়া চীনের সপ্তম প্রতিবন্ধী গেমসেও আমি সেবা দিয়েছি। তারপর শাংহাই বিশ্ব বিশেষ অলিম্পিক। অবশ্যই পেইচিং অলিম্পিক গেমসের বাছাই পর্বের প্রতিযোগিতায় আমি সেবা দিয়েছি। যেমন ওয়াটার কিউবে চীনের সাঁতার প্রতিযোগিতা।"
অলিম্পিক গেমস ও প্রতিবন্ধী গেমসের জন্য উচ্চ মানের স্বেচ্ছাসেবক তৈরী করার জন্য পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটি আরো অনেক কাজ করেছে। যেমন তারা জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক শিখেছে এবং সিডনি অলিম্পিকের স্বেচ্ছাসেবা কাজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ডেভিড ব্রেটকে কাজে লাগিয়েছে।
পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের পরিচালক লিউ চিয়েন বলেন, অলিম্পিকের পর পেইচিংয়ের স্বেচ্ছাসেবার মান নিশ্চয় একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হবে।
"জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবা সংস্থার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, একটি অঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা যদি মোট লোকসংখ্যার ৩০ শতাংশে দাঁড়ায়, তাহলে খুব ভাল। আমরা আশা করি পেইচিং অলিম্পিকের মাধ্যমে পেইচিং বাসীর মধ্যে ৬০ লাখ মানুষ স্বেচ্ছাসেবার কাজে নিযুক্ত হবে। এখন আমরা সেই লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছি, এটা দেখে আমি খুব খুশি।"(ইয়াং ওয়েই মিং)
|