এ বছরে মিয়ানমারের জন্য ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বছর। ঘূর্নিঝড় লাগিসের আঘাতে মিয়ানমারের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে কি মিয়ানমার পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশ নেবে? এ প্রশ্ন নিয়ে সিআরআই'র সাংবাদিক চীনে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ থেইন লুয়িনেরর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন।
'সিআরআই হল চীন ও মিয়ানমারের জনগণের মধ্যে একটি সমঝোতার সেতু। অলিম্পিক গেমস সারা বিশ্বের জনগণের জন্য আড়স্বপূর্ণ ক্রীড়া অনুষ্ঠান। আমি মনে করি, পেইচিং অলিম্পিক গেমসের শ্লোগান এক বিশ্ব, এক স্বপ্নে ঐক্য, মৈত্রী, উন্নয়ন, সম্প্রীতি ও অংশগ্রহণের অলিম্পিক চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে। অলিম্পিক চেতনায় সারা বিশ্বের জনগণ আরো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ও সৌহার্দ্য তৈরি হয়েছে।'
উ থেইন লুয়িন বলেন, চীন হল মিয়ানমারের প্রতিবেশী বন্ধু দেশ। চীনকে সমর্থন করার জন্য মিয়ানমার সেদেশের ক্রীড়া মন্ত্রীর নেতৃত্বে ইতিহাসের বৃহত্তম প্রতিনিধি দলটি পেইচিং অলিম্পিক গেমসে পাঠাবে। মিয়ানমারের ক্রীড়াবিদরা এবারের অলিম্পিক গেমসের ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড, সাঁতার, শুটিং, তায়কোন্ডো,কাইয়াক, আর্চারি ও উসুতে অংশ নেবে। উ থেইন লুয়িন আশা করেন, মিয়ানমারের খেলোয়াড়রা পেইচিং অলিম্পিক গেমসে ভালো ফল করবেন। তিনি বলেন,
'মিয়ানমারের খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা কম। কিন্তু অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক পাওয়া প্রত্যেক ক্রীড়াবিদের স্বপ্ন। পেইচিং অলিম্পিক গেমসে মিয়ানমারের খেলোয়াড়রা সফল হওয়ার চেষ্টা করবেন।'
উ থেইন লুয়িন বলেন, মিয়ানমার অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে কোনো স্বর্ণপদক জেতে নি। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরে মিয়ানমার ক্রীড়া উন্নয়নের প্রতি মনোযোগ দিয়ে আসছে। বিদেশের ক্রীড়াঙ্খনের সঙ্গেও যোগাযোগ বজায় রাখছে। এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারোত্তলন, উসু ও শুটিংয়ে মিয়ানমারের মান বেশি উঁচু। এছাড়া, ফুটবল ও গলফ হল মিয়ানমারের জনপ্রিয় খেলা।
উ থেইন লুয়িনও গলফ খেলায় অগ্রহী। তিনি বলেন, তারুণ্যের দিনগুলোতে তিনি বাস্কেটবল ও ফুটবল পছন্দ করতেন। কিন্তু এখন তাঁর বয়স হয়েছে। সেজন্য এখন তিনি গলফ খেলেন।
উ থেইন লুয়িন বলেন, তিনি সবসময় টেলিভিশনে খেলা দেখেন। লিউ সিয়াং ও ইয়াও মিংসহ অনেক চীনা ক্রীড়াবিদকে তিনি পছন্দ করেন। তিনি আশা করেন, তাঁরাও পেইচিং অলিম্পিক গেমসে সফল হবে। তিনি আরো বলেন,
'বাস্কেটবল খেলোয়াড় ইয়াওমিং, ডাইভিং খেলোয়াড় উ মিন সিয়া ও কুওচিংচিং, ১১০মিটার হার্ডলসের লিউসিয়াং এবং জিমন্যাস্ট ছেংফেই মিয়ানমারের জনগণের অতি পরিচিত ও পছন্দের খেলোয়াড়।'
২০০৩ সাল থেকে উ থেইন লুয়িন পেইচিংয়ে ৫ বছরে আছেন। তিনি বলেন, এ কয়েক বছরে পেইচিংয়ের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন পেইচং আরো আধুনিক হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
'চীনা জনগণ ব্যাপক উত্সাহের সঙ্গে অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতি কাজ চালিয়েছে এবং বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আমি চীনা জনগণের জাতীয় চেতনাকে সম্মান করি।'
উ থেইন লুয়িন বলেন, এছাড়া তিনি চীনা জনগণের মনোবনের দৃঢ়তাকেও সম্মান করেন। তিনি বলেন,
'২০০৮ সালে চীনে ভয়াবহ তুষার ও ভূমিকম্প দুর্যোগ হয়েছে। কিন্তু চীনা জনগণ সাহস দিয়ে চ্যালেন্ঞ্জ মোকাবেলা করেছে। বিশেষ করে চীনের নেতারা দ্রুত দুর্গত অঞ্চলে গিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ পরিচালনা করেছেন। আমি অনেক মুগ্ধ হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, চীন সফলভাবে পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজন করবে। সারা এশিয়ার জনগণ এর জন্য গর্ব বোধ করবে।'
উ থেইন লুয়িন বলেন, রাজনীতির সঙ্গে ক্রীড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
'অলিম্পিক গেমস হল সারা বিশ্বের সবচেয়ে আড়স্বরপূর্ণ ক্রীড়া অনুষ্ঠান। অলিম্পিক গেমস রাজনীতিকরণ ও অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা ভুল। আমি বিশ্বাস করি, পেইচিং অলিম্পিক গেমস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনে সফলভাবে আয়োজিত হবে।'
উ থেইন লুয়িন পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রতি শুভেচ্ছা জানান।
'আমি আশা করি, পেইচিং অলিম্পিক গেমস সফলভাবে আয়োজিত হবে ও সারা বিশ্বের অতিথিরা একটি পরিবারের মত পেইচিংয়ে মিলিত হবে।'
|