জুলাই মাস থেকে পেইচিংয়ের ১৮টি অঞ্চল এবং জেলার ৫ শ'টিও বেশি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের শহরের স্বেচ্ছাসেবক সেবা স্টেশন যথাক্রমেই চালু হয়েছে । কয়েক লাখেরও বেশি পেইচিং অলিম্পিকের শহর স্বেচ্ছাসেবক নিজের দায়ীত্ব পালন করে দেশ বিদেশের সাংবাদিক , পর্যটক , দর্শক এবং সাধারণ নাগরিকদেরকে পেইচিংয়ের দর্শনীয় স্থান , অলিম্পিকের স্টেডিয়ামের ঠিকানা , শহরের আবহাওয়া , সংস্কৃতি , কেনাকাটা , ভাষা অনুবাদ ও জরুরী সাহায্যসহ বিভিন্ন সাহায্য দেবে ।
আপনারা যে কথা শুনচ্ছেন , তাহল স্বেচ্ছাসেবক পেইচিংয়ের ছাং পিং স্কুলের ছাত্র হো সিন স্বেচ্ছাসেবকদের নীল রঙের টি-সার্ট পরেন তিনি ১ জুলাই থেকে পর্যটকদের পথ জানানোর সেবা করতে শুরু করেন । পেইচিং ছাং পিং অঞ্চলের অলিম্পিক শহর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে হো সিন প্রধানত পেইচিং অলিম্পিক গেমসের ট্রাইথলন প্রতিযোগিতার স্টেডিয়াম এবং ছাং পিংয়ের দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার পথ জানানোর সেবা দেন । শহর স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য তিনি প্রায় দু'মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন । তিনি বলেন :
আমাদের সেবা দেয়ার জায়গা দু'টি বড় বাস স্টেশনে । এ দু'স্টেশনে অনেক স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয় । দু'মাসের প্রশিক্ষণে আমরা ছাং পিং অঞ্চলের কিছু দর্শনীয় স্থান , সড়ক , স্টেডিয়ামের জায়গা , জরুরী সাহায্য এবং বাসে যাতায়াত সম্পর্কিত অনেক তথ্য শিখেছি ।
শহর স্বেচ্ছাসেবকের সবচেয়ে প্রধান কতর্ব্য হল পথ জানানো । পেইচিংয়ের সুয়ান উ অঞ্চল নারীদের নিয়ে "বোন পথ জানানো দল" গঠন করেছে । কমিউনিটির কর্মী মাডাম চাও বিশেষ করে পেইচিংয়ের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের পথ জানানোর জন্য দায়ী । তিনি বলেন , নিজেই সেবা স্টেশনের কাছাকাছির
সবসময় অনেক বিদেশ বন্ধু আমাদের কাছ থেকে সহায়ক তথ্য জানতে চান , আমাদের সকল সদস্য উপলব্ধি করেছি যে নিজের ইংরেজী ভাষার মান জোরদার করতে হবে । তাই আমরা ইরেংজী ভাষার শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক শিখেছি । যেমন আমাদের কমিউনিটির কাছের রেস্তরাঁ , বাস স্টেশন এবং বিদেশি বন্ধুদের পছন্দের ওয়াটার কিউব , বার্ড নেস্ট , নিষিদ্ধ প্রাসাদ এবং বা তা লিং মহাপ্রাচীর ইত্যাদি ।
অনুমান করা যায় , পেইচিং অলিম্পিক চলাকালে ইউনিফার্ম পরা , ইংরেজী ভাষা বলার "বোন পথ জানানো দলের" সদস্যরা নিশ্চয়ই পেইচিং শহরের একটি সুন্দর দৃশ্যে পনিণত হবে ।
কিছু সময়ের প্রশিক্ষণের পর এখন আমরা বিদেশি বন্ধুর কথা বুঝতে পেরেছি , আমরাও পুর্ণাঙ্গ বাক্যে তাদেরকে উত্তর দিতে পারবো। যখন তারা "ধন্যবাদ" বলেন , তখন আমরা তাদের মত খুশি । বিদেশি বন্ধুদের জন্য আমরা চীনা মানুষ হিসেবে অবদান রাখার পাশপাশি নিজেরাও আনন্দ বোধ করি ।
পেইচিংয়ের বহু শহর স্বেচ্ছাসেবক স্টেশনের মধ্যে প্রতিবন্ধী স্বেচ্ছাসেবক আরো উল্লেখযোগ্য । পোলিওয়ের কারণে কাও ইয়ু হুং সাধারণ লোকের মত হাটাহাটি করতে পারেন না । তিনি হলেন পেইচিং শহরের হাই দিয়ান অঞ্চলের পথ জানানো দলের প্রধান। তিনি প্রতি সপ্তাহের ছুটিতে সার্মার পেলেসে গিয়ে দেশ বিদেশের পর্যদকের পথ জানানোর সেবা দেন । তিনি বলেন :
ছোটবেলায় আমি পোলিও আক্রান্ত হয়েছি । আমি সমাজের বিভিন্ন মহলের সাহায্য ও যত্ন পেয়েছি । সমাজকে পুরস্কৃত করার জন্য আমি দু'বছর আগে এ দল গঠন করেছি ।
মাডাম কাওয়ের প্রস্তাবে সার্মার পেলেসের পর্যটন সেবা পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে হাই দিয়ান অঞ্চলের ছিং লুং ছিয়াও কমিউনিটি সার্মার পেলেসের দরজার বাইরে পথ জানানোর স্টেশন স্থাপন করেছে । ১৪ জন স্বেচ্ছাসেবক এ দলের প্রথম কিস্তি সদস্য হয়েছে । তারা প্রতি সপ্তাহের ছুটিতে পর্যটকদের সাহায্য করেন ।
প্রথমে শুধু কয়েক ডজন লোক এতে অংশ নেন । ক্রমেই কমিউনিটির অধিবাসীরাও এতে অংশ নিয়েছেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী , সার্মার পেলেসের পুলিশরাও আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন । এখন আমাদের দলের সদস্যের সংখ্যা প্রায় এক শো ।
সার্মার পেলেস পেইচিংয়ের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হিসেবে প্রতিদিন কয়েক লাখেরও বেশী পর্যটকদের অভ্যর্থনা করে । সার্মার পেলেসের বিভিন্ন দরজার কাছের বাস স্টেশনে দেখা যায় হাই দিয়ান অঞ্চলের পথ জানানো দলের সদস্যরা । জানা গেছে , গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এ দলের সদস্যরা ৬০ হাজারেরও বেশি দেশ বিদেশের পর্যটকদের পথ জানানোর সেবা দিয়েছেন । অলিম্পিক আসার সঙ্গে সঙ্গে হাই দিয়ান পথ জানানো দলের সদস্যরা পেইচিং অলিম্পিকের শহর স্বেচ্ছাসেবকদের দলেও যোগ দিয়েছেন ।
কাজের সময় কাও ইয়ু হুং খুব কঠোর । তিনি দলের সদস্যদেরকে পর্যটকদের জন্য দায়ীত্বশীল মনোভাবে সেবা দেয়ার নির্দেশ দেন , পর্যটকদেরকে "জানি না" এমন কথা বলা নিষিদ্ধ । তিনি বলেন :
আমি আমার দলের সদস্যদেরকে "জানি না" এ কথা বলতে নিষিদ্ধ করি । যদি সত্যি উত্তর দিতে না পারি , তাহলে আমরা পর্যটকদের বলবো : সুবিধা হলে আমাদেরকে ফোন নম্বর দেন , আমরা সে তথ্য পাওয়ার পর পরই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবো ।
কাও ইয়ু হুংর কাছে পথ জানানো অন্যকে কি বাস করে গন্তব্যস্থানে পৌঁছা এমন সহজ কাজ নয় । কাছাকাছি অঞ্চলে কোথায় উইলচেয়ার ভাড়া করা যায় , কোথায় ওষুধ কেনা যায় ইত্যাদি বিষয় এ দলের সদস্যরা জানতে হবে । যদিও শরীরের সমস্যায় তার অসুবিধা হয় , তবে পর্যটকদেরকে কোথায় যেতে কত মিটার এবং কত সময় লাগে এমন তথ্য জানার জন্য তিনি নিজেই সে সব জায়গায় একবার করে গিয়েছেন।
পথ জাপানোর পাশাপাশি কাও ইয়ু হুং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রেড ক্রস সোসাইটিতে জরুরী সাহায্যের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং বধির ও বোবা স্কুলে বোবা কথা শিখেন । যাতে বিভিন্ন পর্যটকদের সাহায্য করা যায় । তিনি বলেন :
যেমন এক দিন এক ছোট মেয়ে হঠাত্ সার্মার পেলেসের দরজার সামনে মূর্ছা গেছে । রেড ক্রস সোসাইটিতে আমরা শিখেছি যে এমন ঘটনায় কিভাবে মোকাবেলা করা । তাই আমি অবিলম্বেই জরুরী সাহায্যের ফোন করেছি , এমবিউলেন্স এসে সে ছোট মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে ।
আরো ভালোভাবে অলিম্পিকে নিজের অবদান রাখার জন্য যদিও এ দলের সদসস্যের কোনো ইংরেজী ভাষার ভিত্তি নেই এবং বিদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন না , তবুও তারা বিশেষ করে ইংরেজী ভাষার শিক্ষকের সঙ্গে ইংরেজী শিখেছেন । এখন তারা দৈনন্দিন ইংরেজী বলতে পারেন । সাক্ষাত্কারে মাডাম কাও আমাদেরকে বলেন :
যদি বিদেশিরা আমাদেরকে ইংরেজী ভাষায় জিজ্ঞেস করেন :কিভাবে লামা টেম্বোলে যাই ? অথবা কিভাবে থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে যাই ? আমরা সবই বুঝতে পারি । এবং আমরা ইংরেজীতে তাদেরকে পথ জানাতেও পারবো ।
সাক্ষাত্কারে ৪৫ বছর বয়সী মাডাম কাও অনুষ্ঠেয় পেইচিং অলিম্পিক গেমস সম্পর্কে খুব আসাবাদী । তিনি বলেন :
অলিম্পিক গেমস ঘনিয়ে আসছে । বিদেশি পর্যটকও আরো বেশি হবে । আমরা বিদেশ বন্ধুদেরকে সবচেয়ে ভালো সেবা দেবো । যাতে চীনা জনগণের ভাবমূর্তি এবং চীনের স্বেচ্ছাসেবকের ভাবমূর্তি তুলে ধরা যায় ।
স্বেচ্ছাসেবকের পরিবারের সদস্য হিসেবে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের শহর স্বেচ্ছাসেবক শুধু দেশ বিদেশের পর্যটকদের পথ সম্পর্কিত তথ্য জানান তা নয় , তারা স্বেচ্ছাসেবকের মর্ম ও অলিম্পিক গেমসের তথ্য ছড়িয়ে পড়েন । এখন তারা সবাই প্রস্তুত , অলিম্পিক গেমসকে স্বাগত জানানো জন্য এবং অলিম্পিকের জন্য নিজের অবদান রাখার জন্য ।
|