ভারত সরকারের ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তির কার্যকর প্রক্রিয়ায় অনড় থাকার প্রেক্ষাপটে ৮ জুলাই ভারতের বামদলগুলো কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে মনমোহন সিং সরকার একটি কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে।
ভারত-মার্কিন পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে কয়েক মাস ধরে বামপন্থী ও ইউপিএ'র মধ্যে বিরোধ চলছে। গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক পরমাণু জ্বালানী সহযোগিতা চুক্তি প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের বামদলগুলো এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চুক্তিটিকে ভারতের জোট নিরপক্ষ পররাষ্ট্রনীতির লংঘন হিসেবে আখ্যা দেয়। সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করার সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বামদলগুলো এই চুক্তির বাস্তবায়ন এগিয়ে না নেওয়া ও আন্তর্জাতিক পরমাণুশক্তি সংস্থা আই এ ই এ'র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা না করা এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু সরবরাহকারী দেশগুলোর সমর্থন অন্বেষণ করার আহ্বান জানায়। গত ৭ জুলাই জাপানে জি-৮ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সংলাপ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তথ্য মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারত সরকার শিগগির আই এ ই এ'র সঙ্গে নিশ্চয়তা সংক্রান্ত চুক্তিতে পৌঁছবে।
৮ জুলাই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)র সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত বামপন্থী দলগুলোর যৌথ বিবৃতি পাঠ করার সময় বলেন, তাদের সঙ্গে চুক্তি বিষয়ে আলোচনা না করেই ভারত সরকার এই বক্তব্য দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বামদলগুলোর ক্ষমতাসীন পার্টিকে আর সমর্থন দেওয়া সম্ভব নয়। দু'পক্ষের মধ্যে ১০ জুলাই নির্ধারিত বৈঠকের আর কোনো তাত্পর্য নেই। বামদলগুলো সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, ৪টি বামদল ৯ জুলাই প্রেসিডেন্ট প্রতিভা পাতিলের সাথে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেবে।
বামদলগুলোর এই ঘোষণার পর ভারতের বৃহত্তম বিরোধীদল জনতা পার্টির নেতারা লোকসভার জরুরী অধিবেশনে বর্তমান সরকারের ওপর আস্থা ভোট অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার তার ভবিষ্যত নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন নয়। সরকারের ওপর থেকে বামদলগুলোর সমর্থন প্রত্যাহারের খবর জানার পর প্রধানমন্ত্রী সিং তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বামদলগুলোর এই সিদ্ধান্ত সরকারের স্থিতিশীলতা টলাতে পারবে না। ভারত সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আই এ ই এ'র সঙ্গে নিশ্চয়তা সংক্রান্ত চুক্তিতে পৌঁছবে।
একই দিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জও বলেন, ১১ আগস্ট ভারতের লোক সভার অধিবেশন আবার শুরু হবে। যদি সে সময় প্রেসিডেন্ট লোকসভাকে সরকারের প্রতি আস্থা ভোট দেয়ার অনুরোধ করে, ইউপিএ পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্রমাণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি সমাজবাদী দলের নেতা মুলাইয়াম সিং যাদব ঘোষণা করেছেন, পার্লামেন্টে আস্থা ভোট হলে সমাজবাদী দলের ৩৯জন সদস্যই ইউপিএ সরকার ও ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তিকে সমর্থন করবেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইউপিএ সমাজবাদী দলের সমর্থন পেলেও, আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পাওয়া কঠিন। তবে খুব স্বল্প ব্যবধানেও যদি তারা আস্থা ভোটে জয়ী হয় তাহলেও তাদের আই এ ই এ'র সঙ্গে নিশ্চয়তা চুক্তিতে পৌঁছানোর অধিকার আছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর।
ভারতের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ থেকে এটা স্পষ্ট যে ইউপিএ সরকার আই এ ই এ'র সঙ্গে নিশ্চয়তা চুক্তি ত্বরান্বিত এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু সরবরাহকারী দেশগুলোর সমর্থন অন্বেষণের প্রক্রিয়া থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে যাবে না। তবে এর জন্য হাতে সময় খুব কম। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রায় আসন্ন এবং কংগ্রেস অধিবেশন স্থগিত থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি সুষ্ঠুভাবে এগুবে কিনা তা দেখতে হলে আরো অপেক্ষা করতে হবে।
|