হয়তো আপনারা সবাই জানেন যে , চীনের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে । আসলে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে । যেমন চীন ও বাংলাদেশ । দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে । দু'দেশের অনেক মানুষ জন্য হয়তো শুধু টি ভি অনুষ্ঠান , বই বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন । গত জুন মাসে পেইচিংয়ে পরস্পরের সংস্কৃতিকে জানার জন্য এমই একটি অনুষ্ঠান হয়েছে । এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক চীনা এবং চীনে থাকা বাংলাদেশী দু'দেশের সংস্কৃতি ও শিল্প অনুভব করতে পেরেছেন । হংকংয়ের স্মার্ট এইস (smart ace)
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনে লেখাপড়া করা একজন বাংলাদেশী ছাত্রী সবাইকে বাংলাদেশের একটি লোক নৃত্য পরিবেশন করেন। যা সবার প্রশংসা পেয়েছে । ভাষা যোগাযোগের বাধা হলেও শিল্প ও সংস্কৃতিকে ভাষা বেধে রাখতে পারে না । এর কোনো সীমা নেই । সেদিন সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে দর্শকরা চীন ও বাংলাদেশের চমত্কার লোক শিল্প এবং এ দু'রকম সংস্কৃতির মিলন উপভোগ করেছেন । তাহলে এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে স্মার্ট এইসের লাভ কী ? এর জবাবে হংকং স্মার্ট এইস কোম্পানীর চেয়ারম্যান সুন লি লি সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তাদের এ অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্দেশ্য হল দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় ত্বরান্বিত করা । তিনি বলেন :
মানুষ ও মানুষের বিনিময়ের কেন্দ্র হল হৃদয়ের বিনিময় । সাংস্কৃতিক বিনিয়ের কোনো আর্থিক লক্ষ্য নেই । এমন বিনিময়ে সবাই হৃদয় উন্মুক্ত করে পরস্পরকে উপলব্ধি করতে পারে । বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে পরস্পরকে জানা ও শেখা খুব গুরুত্বপুর্ণ ।
সেদিন সন্ধ্যায় , চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদও অংশ নিয়েছেন । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন :
বাংলাদেশের জনগণ চীনের ঐতিহাসিক শিল্প ও চিত্রকর্ম সম্পর্কে জানতে খুব আগ্রহী । আমার বিশ্বাস , কুংফুসহ চীনের শ্রেষ্ঠ লোক শিল্পের প্রদর্শনী নিশ্চয়ই আরো বেশি বাংলাদেশীদের প্রশংসা পাবে । বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও উদ্ভাবনী শিল্প এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি বিনিময়ের ক্ষেত্রে আমাদের শিল্পী ও শিল্প সংস্থার নিজের ভূমিকা পালন করতে হবে । "এক্সরেরিয়েন্স বাংলাদেশ" চীন-বাংলাদেশ শিল্প ও সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রদর্শনী নিশ্চয়ই শিল্পের প্রতি বাংলাদেশীদের আগ্রহ বাড়াবে ।
স্মার্ট এইস কোম্পানী একটি বেসরকারী সংস্থা হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে । এ দিন সন্ধ্যার অনুষ্ঠান শুধু "এক্সরেরিয়েন্স বাংলাদেশ" পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ । এর মাধ্যমে দু'দেশের জনগণ পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছে । পরে তারা প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে বিশেষ করে বাংলাদেশে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে চীনের সংস্কৃতি প্রদর্শন করবে । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার টিমস (teems) কোম্পানী স্মার্ট এইসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করছে । তারা বাংলাদেশ পক্ষে ব্যবস্থাপনার কাজ করছে । এ ছাড়া , চীনের লোক শিল্পী কমিটির কাটা কাগজের ছবি শিল্প কমিশনও বাংলাদেশ যাত্রায় অংশ নিচ্ছে । দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে এ কমিশনের সচিব হুয়ান আন সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন :
আমার সাবজেক্ট হল বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার । জাতীয় সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করা হল আমার দায়িত্ব । আমি চীনের ঐতিহাসিক সংস্কৃতি ও চীনের লোক শিল্প বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই । এখন ঠিক এমন একটি সুযোগ আছে । বাংলাদেশও এর স্বাগত জানায় । আমরা এ অনুষ্ঠানের জন্য ৬'মাসের প্রস্তুতি নিয়েছি । এখন সব কিছুই সুষ্ঠুভাবে চলছে । বাংলাদেশ পক্ষও অনেক সাহায্য করেছে ।
পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে সুন লি লি বলেন :
আমরা চীনের জিনিস নিয়ে বাংলাদেশে যেতে চাই । আরো বেশি হলে আরো ভালো হবে । তাই পরবর্তী পর্যায়ে আমরা চীনের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম নিয়ে বাংলাদেশে প্রদর্শনী এবং বিক্রি করবো । আমরা প্রধানত সেখানকার গ্যালারি ও অন্যান্য জায়গায় যাবো । আমার মনে হয় বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির বিনিময় আরো সুষ্ঠু হবে । তাই যদি আরো বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয় , তাহলে আমরা হয়তো আরো বেশি জিনিস সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবো । যেমন চীনের থাইজি ফিস্ট , উ সু ও কসরতবাজি । আমরা উদ্ভাবী চিন্তাধারা উপস্থাপন করতে পারি , এরপর সব সম্পদ মিলিয়ে তা করবো । যেমন সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পদ । এর ফলে অনুষ্ঠানটি আরো সমৃদ্ধ হবে ।
এ দিন সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নাচগান ছাড়া চীনের বিভিন্ন জায়গায় আসা লোক শিল্পীরা সবাইকে অনেক চমত্কার অনুষ্ঠান দেখিয়েছেন । এসব অনুষ্ঠানে চীনা সংস্কৃতির মর্ম ও বৈশিষ্ট অন্তর্ভূক্ত রয়েছে । যেমন চীনের কাটা কাগজের ছবি , ঐতিহ্যিক ইন্সটুমেন্ট দিয়ে বাজানো সঙ্গীত এবং থাই চি ফিস্টসহ বিভিন্ন বিদেশিদের পছন্দের বিষয় ।
স্মার্ট এইস কোম্পানী একটি বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে । বেসরকারী সংস্থা দ্বিপক্ষীয় সাংস্কৃতিক বিনিময়ে অংশ নেয়ার তাত্পর্যকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশি ফিয়াজ আহমেদ স্বীকৃতি দিয়েছেন । তিনি বলেন :
সাধারণত বাংলাদেশ ও চীন দু'দেশের সরকারের স্বাক্ষরিত সংস্কৃতি চুক্তির ভিত্তিতে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখে । এবং এমন সহযোগিতা সরকারের বিভিন্ন স্তরের বিভাগেও আছে । তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্রমেই সাংস্কৃতিক বিনিময়ে অংশ নিয়েছে । ফলে মানুষ ও মানুষের যোগাযোগ সম্প্রসারণ করেছে , আগে যে ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয় নি , এসব ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়ও ত্বরান্বিত করেছে । বাংলাদেশের জনগণকে চীনের ঐতিহ্য লোক শিল্প তুলে ধরাও এমন প্রচেষ্টার প্রকাশ ।
মিস্টার ই রু ছেং গত শতাব্দীর ৮০ দশকে বাংলাদেশে চীনের দূতাবাসে কাউন্সেট ছিলেন । তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়বস্তু ও অংশগ্রণকারীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিবর্তন দেখেছেন । তিনি বলেন :
সাংস্কৃতিক বিনিময় ক্ষেত্রের পরিবর্তন ও উন্নয়ন বলতে গেলে , আমি বলতে চাই , তা হল বেসরকারী বিনিময় । আগে এটা ছিল না । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের পশাপাশি অনেক বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান দ্বিপক্ষীয় সাংস্কৃতিক বিনিময় তত্পরতায় অংশ নিয়েছে । সরকার তাদেরকে সাহায্য করে এবং এসব বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা ব্যবস্থাপনা করে । তা হল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বৃহত্তম বৈশিষ্ট । এ ক্ষেত্রে উন্নয়নের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে । অর্থনীতি সংস্কৃতিকে উন্নয়ন করে , সংস্কৃতিও অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করে । বলা যায় , তা হল সরকারী বিনিময়ের সাহায্য । বেসরকারী বিনিময়ও বেশি সমন্বয় , তাও সাংস্কৃতিক বিনিময় ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা একটি পদ্ধতি ।
|