চীনের জাতীয় জিমনেস্টিক্স দল বিশ্বের একটি শক্তিশালী দল। কিন্তু চার বছর আগে এথেন্স অলিম্পিক গেমসে চীনের জাতীয় জিমনেস্টিক্স দল মাত্র একটি স্বর্ণপদক ও দু'টি রৌপ্যপদক লাভ করে। আসন্ন পেইচিং অলিম্পিক গেমসে চীনের জাতীয় জিমনেস্টিক্স দল সাফল্য লাভ করবে কিনা? এর প্রত্যুত্তরে সম্প্রতি চীনের জাতীয় জিমনেস্টিক্স চ্যাম্পিয়নশীপ ২০০৮ বা অলিম্পিক গেমসের বাছাই পর্বের প্রতিযোগিতায় চীনের জিমনেস্টিক্স ক্রীড়াবিদরা চমত্কার ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এখন শুনুন এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন।
৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত চীনের জাতীয় জিমনেস্টিক্স চ্যাম্পিয়নশীপ ২০০৮ বা অলিম্পিক গেমসের বাছাই পর্বের প্রতিযোগিতা থিয়ানচিন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের সকল জিমনেস্টিক্সের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদরা এবারের চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়নশীপের অলিম্পিক গেমসের সকল ইভেন্টে পুরোপুরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলো। এবারের চ্যাম্পিয়নশীপে পুরুষ ও নারীদের দলগত ও একক অল রাউন্ডসহ ১০টি ইভেন্টে মোট ১৪টি স্বর্ণপদক অর্জিত হয়েছে। এবারের চ্যাম্পিয়নশীপের মাধ্যমে ক্রীড়াবিদদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে ও ধারাবাহিকভাবে কঠিন অনুশীলন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে চীনের জাতীয় জিমনেস্টিক্স দলের কোচ লু শানচেন বলেন, 'আমাদের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়াবিদরা চমত্কার ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। সবাই অভিষ্ট মানে রয়েছে।'
চীনের জিমনেস্টিক্স দলের মধ্যে পেইচিংয়ের ক্রীড়াবিদ হো কেসিন বয়সে সবচেয়ে ছোট। তাঁর বয়স মাত্র ১৬ বছর। এবারের চ্যাম্পিয়নশীপের হাই-লৌ বার্সে তিনি সকল দর্শকদের প্রশংসাসূচক করতালি পেয়েছেন।
হো কেসিন প্রতিযোগিতায় চীনের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন লিয়ার নামের একটি শরীর চর্চায় অংশ নিয়েছেন। এ শরীর চর্চায় নাম হল লিয়া সাল্টো (Liya salto)। এটি হল এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ক্রিয়াকলাপ। হো কেসিন সুষ্ঠুভাবে তার দায়িত্ব করেছেন। তিনি হর এখন পর্যন্ত বিশ্বে তিনিই একমাত্র এ ধরণের শরীর চর্চা করতে পারা ক্রীড়াবিদ।
হো কেসিনের মান স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে। এ সম্পর্কে লু শানচেন বলেন, 'হো কেসিন বরাবরই উচ্চ মানেন শরীর চর্চাবিদ। সেজন্য তার এ সাফল্য লাভের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।'
হো কেসিন বলেন, তাঁর লক্ষ্য হল পেইচিং অলিম্পিক গেমসের হাই-লৌ বার্সে স্বর্ণপদক লাভ করা। তিনি আরো বলেন, 'অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক অর্জনের ব্যাপারে আমি দৃঢ় আস্থাবান। আমি এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।'
লি সিয়াওফেং চীনের জাতীয় জিমনেস্টিক্স দলের মধ্যে বয়সের দিক থেকে সবচেয়ে প্রধীন ক্রীড়াবিদ। তাঁর বয়স ২৭ বছর। তিনি ২০০০ ও ২০০৪ সালের অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছেন। তিনি দশটিরও বেশি স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। কিন্তু পায়ে আঘাত পাওয়ার কারণে গত বছর তিনি সাময়িকভাবে অনুশীলন বন্ধ রাখেন। এ বছরের বসন্তকাল থেকে তিনি পুনরায় প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। এবারের চ্যাম্পিয়নশীপ হল লি সিয়াওফেংয়ের পায়ে আঘাত পাওয়ার পর প্রথম বারের মত দেশের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এখন আমি পাঁচটি ইভেন্টে অংশ নিতে সক্ষম। আমার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ইতেপূর্বে আমি কিছু ভুল করেছিলাম। এখন থেকে আমি নিজের সমস্যা ও পরবর্তি অনুশীলনের গুরুত্ব খোঁজার চেষ্টা করবো।'
আসলে আঘাত যাতে পেতে না হয় তাহল চীনের জাতীয় জিমনেস্টিক্স দলের বর্তমান অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের জাতীয় জিমনেস্টিক্স দলের প্রধান কোচ হুয়াং ইউবিন বলেন, কোচরা অনুশীলন ও প্রতিযোগিতায় ক্রীড়াবিদদের ফিইনেস সুরক্ষার বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমাদের ক্রীড়াবিদদের অনুশীলন বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের কঠিন অনুশীলন। আমাদের ক্রীড়াবিদদের নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যাতে তারা আঘাত প্রাপ্ত না হয় এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ করা।'
এবারের চ্যাম্পিয়নশীপের পর চীনের কোনো গণ মাধ্যম মনে করে, অলিম্পিক গেমসের ১৪টি ইভেন্টে চীনা ক্রীড়াবিদদের স্বর্ণপদক লাভের সামর্থ্য রয়েছে। চীনা কোচরা মনে করেন, এখনও ততটা বেশি আশাবাদী হওয়া ঠিক নয়। পাশাপাশি ক্রীড়াবিদদেরকে বেশি চাপ দেয়া হবে না।
এবারের চ্যাম্পিয়নশীপে চীনা ক্রীড়াবিদদের কোনো কোন ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে নারী দলের যুব ক্রীড়া বিদরা একটানা তিন ও চার দিনের প্রতিযোগিতার পর ক্লান্ত হয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভূল করে ফেলেছেন। এ সম্পর্কে লু শানচেন বলেন, 'আমাদের ক্রীড়াবিদরা স্বাস্থ্যের দিক থেকে তত বেশি শক্তিশালী নয়। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সবা ক্রীড়াবিদরাই কোনো না কোন কিছু ভুল করেছেন। ক্রীড়াবিদদের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করা উচিত।'
এবারের চ্যাম্পিয়নশীপে বেশির ভাগ নারী ক্রীড়াবিদই চীনের বৈশিষ্ট্যময় সংগীত ব্যবহার করেছেন।
সংগীত
ফ্লোর এক্সসারসাইজের সময় ক্রীড়াবিদ চিয়াং ইউইউয়ান চীনের সিনচিয়াংয়ের লোকসংগীত ব্যবহার করেছেন এবং নিজের শরীর চর্চার সময় সিনচিয়াংয়ের নানা জাতির নাচের অনেক মুদ্রাই ব্যবহার করেছেন। গত মার্চ মাসে জিমনেস্টিক্স বিশ্বকাপের কাতার ধাপে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমার এ ধারাবাহিক শরীর চর্চায় সিনচিয়াংয়ের অনেক লোকনৃত্যের মুদ্রা রয়েছে। আমি নৃত্য শিক্ষকের কাছ থেকে এসব পদ্ধতি শিখেছি।'
(সংগীত হুয়াংহো)
আরেকজন নারী ক্রীড়াবিদ ছেংফেই চিয়াং ইউইউয়ানের মতই চীনের বৈশিষ্ট্যময় সংগীত ব্যবহার করেন। এছাড়া, তিনি সংগীতের সঙ্গে চীনের ঐতিহ্যিক পেইচিং ওপেরার শব্দের মিশুণ ঘটয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কঠিন অনুশীলন বজায় রাখার পাশাপাশি ফ্লোর এক্সসারসাইজে শিল্প সৃষ্টির চেষ্টা করবেন।
লু শানচেন বলেন, ক্রীড়াবিদরা পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্য চীনের বৈশিষ্ট্যময় সংগীত ও নৃত্যের মুদ্রাহুলো জিমনেস্টিক্সে যোগ দেন। এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন,
'অলিম্পিক গেমস এবার চীনে অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্য আমরা মনে করি, সকল চীনাদেরকে প্রতিযোগিতায় আরো বেশি করে চীনের ঐতিহ্যিকে তুলে ধরতে হবে।'
|