কাজাখস্তানের বৃহত্তম শহর আলমাটি হচ্ছে বিদেশে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মশাল হস্তান্তরের প্রথম দেশ। মোট ৮০ জন মশাল বাহক ঐ মশাল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ৮০ জনের মধ্যে ৫৭ জন হচ্ছেন কাজাখস্তানের নাগরিক। তাদের মধ্যে ৪০ জন আমলামটি থেকে এবং অন্য ১৭ জন কাজাখস্তানের বাইরে থেকে এসেছেন।
ইয়েভগেনি কাগইয়াইকিন হচ্ছেন ৮০ জন মশাল বাহকের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক। এখন তাঁর বয়স ৮০ বছর। তিনি হচ্ছেন কাজাখস্তানে অলিম্পিক গেমসের মশাল হস্তান্তরে অংশগ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি। তিনি ১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণে অনুষ্ঠিত ১৬ তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে তিন হাজার ও পাঁচ হাজার মিটার দৌঁড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তা ছাড়া, তিনি পাঁচ পাঁচ বার "সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে দূরপাল্লার দৌঁড় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন" হন। অবসর নেওয়ার পর তিনি কাজাখস্তানের জাতীয় দৌঁড় ও জাম্পিং-এর প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। কাজাখস্তানের মোট ১৫০ জন তাঁর প্রশিক্ষণ পেয়ে স্বদেশে ও বিশ্বের নানা ধরণের প্রতিযোগিতায় ভাল ফলাফল পান।
কাগইয়াইকিন বলেন, আগের চেয়ে এখন অলিম্পিক গেমস আরো এগিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাজাখস্তানের ক্রীড়া ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে।
নিজে অলিম্পিক গেমসের মশাল বাহক মনোনীত হওয়ায় কাগইয়াইকিন ভীষণ আবেগাক্রান্ত। তিনি বলেন, আমার জন্মদিন ১৯২৮ সালের ৩১ আগষ্ট। পেইচিং অলিম্পিক গেমস আগষ্ট মাসে অনুষ্ঠিত হবে। এ থেকে বলা যায়, আমি খুবই ভাগ্যবান। তিনি আরো বলেন,
আলমাটি ইভনিং পত্রিকার সংবদদাতা আমাকে মশাল বাহক হওয়ার খবরটি জানিয়েছিলেন। তখন আমি অবাক এবং একই সঙ্গে খুব আনন্দিত হয়ে ছিলাম। তারপর আমি গোপনে প্রস্তুতি নিতে থাকি। প্রতি দু'দিনে একবার করে আমি ৪৫ মিনিট ধরে দুই বা তিন বার দু'শ মিটার দৌঁড় চর্চা করি। আমার মনে হয়, আমি অলিম্পিক গেমসের শিখা অনির্বান হস্তান্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম। আমি পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণকারী স্বদেশের খেলোয়াড়রা ভালো ফলাফল করবে এই শুভ কামনা করি।
এখনো কাগইয়াইকিন প্রতিদিন শরীর চর্চা করেন। প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার হাঁটেন। কাগইয়াইকিন ক্রীড়া শিল্পের উন্নয়নের ওপরও দৃষ্টি রাখেন। তিনি বলেন, মশাল হস্তান্তর যাত্রা হচ্ছে অলিম্পিক প্রচারের যাত্রা। তিনি আশা করেন, স্বদেশের খেলোয়াড়রা পেইচিং অলিম্পিক গেমসে ভালো ফলাফল করবেন। পেইচিং অলিম্পিক গেমস প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
খবর শুনে শুনে আমি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতি কাজ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমি পেইচিং অলিম্পিক গেমস সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হোক এই কামনা করি। তিনি আশা করেন, পেইচিং অলিম্পিক গেমস ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো ও চমত্কার মহা সম্মিলনীতে পরিণত হবে।
ভারেলি কিমের বয়স এখন ১৭। তিনি হচ্ছেন কাজাখস্তানের সবচেয়ে তরুণ মশাল বাহক। ভারেলি এবং তাঁর মা উভয়েই উত্তর কোরীয় বংশোদ্ভূত। ১৯৯১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি কাজাখস্তানের রাজধানী দুশানবেতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে তাঁর পরিবার আলমাটিতে চলে আসে। বর্তমান তিনি মায়ের সঙ্গে বাস করেন।
ভারেলি হচ্ছেন আলমা-আতার ১৩৪ নম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম গ্রেডের ছাত্র। এই বিদ্যালয়কে আলমাটির সবচেয়ে ভালো বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয়। বিদ্যালয়ে ভারেলি গণিতবিদ্যায় প্রতিভাবান ছাত্র হিসেবে পরিচিত। ২০০৭ সালে তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক গণিত প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এ যাবত কালে এটিই কাজাখস্তানের সবচেয়ে ভালো ফলাফল। এর আগে তিনি আলমা-আতা শহর এবং কাজাখস্তান অলিম্পিক গণিত প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।
অলিম্পিক গেমসের মশাল বাহক হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর ভারেলি সারা বিদ্যালয়ে তারকায় পরিণত হয়েছেন। নিজেকে কাজাখস্তানের সবচেয়ে তরুণ মশাল বাহক হিসেবে মনোনীত হওয়ার খবর শুনে ভারেলি এবং তাঁর মা সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। তখন তাদের মনে হচ্ছিল, তাদের সঙ্গে অন্যান্যরা রসিকতা করছেন। ভারেলি সংবাদদাতাকে বলেন,
মশাল বাহক হওয়ার খবর শুনে আমার মনে হয়েছিল, এটা স্রেফ ঠাট্টা। পরে নিশ্চিত হওয়ার পর আমি খুব গর্ব বোধ করি।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছর তাঁর সবচেয়ে বড় ইচ্ছা হলো মায়ের সঙ্গে পেইচিং অলিম্পিক গেমস দেখতে যাওয়া। (লিলি)
|