ক: প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা , পেইচিংয়ের বৈশিষ্টময় সংগীতের সঙ্গে আমাদের "আজকের পেইচিং" অনুষ্ঠান নিয়ে আবার আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি । আমি আপনাদের বন্ধু শুয়েই ফেই ফেই । আমার সঙ্গে রয়েছেন আবাম ছালাউদ্দিন ।
খ: বন্ধুরা , আপনারা সবাই ভালো আছেন তো ?
ক: হ্যাঁ , ছালাউদ্দিন , আপনি এখন পর্যন্ত পেইচিংয়ে প্রায় দু'বছর কাটিয়েছেন । এ দু'বছরে আপনি পেইচিং সম্পর্কে নিশ্চয়ই অনেক জেনেছেন । তাই না ?
খ: হ্যাঁ, পেইচিংয়ের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও বৈশিষ্টময় সংস্কৃতি আমার কাছে খুব আকর্ষণীয় । পেইচিংয়ের সুগভীর সাংস্কৃতিক সাধারণ জীবনের ভিত্তিও এখন অনুভব করতে পারি ।
ক: তাহলে আমি আপনাকে একটি ছোট্ট পরীক্ষা নিতে চাই । কী বলেন ?
খ: আমি প্রস্তুত ।
ক:পেইচিংর কথা বললে কোন বিষয়টি প্রথমে আপনার মাথায় আসবে ?
খ: এটু ভাবালেন । এ ক্ষেত্রে তো অবশ্যই থিয়েন আন মেন মহাচত্তর ও পেইচিং অপেরার মত বৈশিষ্টময় ঐতিহ্যের কথা । আচ্ছা , পেইচিংয়ের স্ন্যাকসও এখন খুব উল্লেখযোগ্য।
ক: আজ তাহলে আপনাকে সঙ্গে নিয়ে পেইচিংয়ের ঐতিহ্যিক হু থুংয়ে যাবো এবং সত্যিকারের পেইচিং স্ন্যাকস উপভোগ করবো। কেমন ?
খ: তা তো খুব ভালো কথা ।
ক: ছালাউদ্দিন , এখন আমরা এসেছি পেইচিংয়ের খুব বিখ্যাত " চিউ মেন পেইচিং স্ন্যাকস নগরে" । এখানে পেইচিংয়ের প্রাচীনতম স্থান তবে খুব বিখ্যাত ও জনপ্রিয় এমন অনেক স্ন্যাকসের দোকান এখানে আছে । আপনি শুনতে পাচ্ছেন কি , দোকানের তরুণ কর্মচারী ক্রেতাদেরকে নিজেদের দোকানের খাবারের বৈশিষ্টতা জানাচ্ছে । তাদের ফেরি করার আওয়াজ পেইচিং নাগরিকদের কাছে অনেক পরিচিত এবং খুব আন্তরিক মনে হয় ।
খ: ফেই ফেই , আমি তো শুনেছি পেইচিংয়ের থিয়েন আন মেন মহাচত্তরের কাছাকাছির ছিয়ান মেন রাস্তায় পেইচিংয়ের প্রাচীনতম তবে খুব বিখ্যাত সব দোকান রয়েছে । কেন আজ আপনি আমাকে এবং শ্রোতা বন্ধুদের এই "চিউ মেন পেইচিং স্ন্যাকস নগরে নিয়ে এসেছেন ?
ক: আপনি জানেন না যে ? সম্প্রতি ছিয়ান মেন রাস্তার পুণর্নির্মাণ কাজ দ্রুতভাবে চলছে । ছিয়ান মেন এলাকায় দু'এক শো বছর ধরে থাকা এসব পুরোনো দোকান এ সুযোগে পেইচিংয়ের অন্যান্য বিখ্যাত স্ল্যাকস দোকানের সাথে একসঙ্গে এই "চিউ মেন পেইচিং স্ন্যাকস নগরে" এসেছে । এই এলাকাটি পেইচিয়ের একটি হু থুংয়ে অবস্থিত , তার আয়তন ৩ হাজার বর্গমিটার এবং তা একদম প্রাচীন বৈশিষ্ট অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে । এখানে সয়াসস দূধ এবং উই পরিবারের তৈরি পনিরসহ পেইচিংয়ের সবচেয়ে দীর্ঘ ইতিহাসের ১১টি পুরোনো ব্রান্ডের দোকান পুনরায় খুলেছে এবং দেশ বিদেশের অনেক বন্ধুদের আকর্ষণ করেছে ।
খ: আপনার কথা শোনার পর আমি এখনই এসব প্রাচীনকালের স্ন্যাকসের দোকানের থেকে আজকাল এখন পর্যন্ত প্রচলিত খাবার খেতে চাই । আচ্ছা , আমি শুনেছি পেইচিংয়ের স্ন্যাকস অধিকাংশই মুসলিম খাবার , তাই না ?
ক: হ্যাঁ , আপনি ঠিক বলেছেন । মুসলমান বন্ধুদের জন্য পেইচিং স্ন্যাকস খুব ভালো বাছাই । আজ আমি আপনাকেও শ্রোতা বন্ধুদের একজন পেইচিং স্ন্যাকসের উত্তরাধিকারীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো । তাঁর নাম মা কুও ছি । তিনি হলেন পেইচিংয়ের সুবিখ্যাত মুসলিম খাবারের দোকান "ইয়ুয়ে শেং চাই" এর ষষ্ঠ বংশের উত্তরাধিকারী । তার পরিবারের রান্না গরু ও ছাগলের মাংশ খুবই বিখ্যাত । তিনি বলেন :
আমাদের দোকান ১৭৭৫ সালে খোলা হয়। ইয়ুয়ে শেং চাই খোলার সময় ছিল ঠিক মুসলিম ধর্মের রমজান মাস । আমরা ইয়ুয়ে শেং চাই এ নাম রাখার কারণ হল আমরা আশা করি আমাদের ব্যবসা প্রত্যেক মাসেই সমৃদ্ধ হবে ।
ক: ইয়ুয়ে শেং চাই দোকানটির এখন পর্যন্ত দু'শো বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে । তার প্রতিষ্ঠাতা প্রাচীনকালে রাজপ্রাসাদে রাজার বাবুর্চি ছিলেন । রাজপ্রাসাদে তিনি রাজার চিকিত্সকের সাহায্যে খাবারের সসের উন্নয়ন করেন । তার সসের মধ্যে স্বাস্থ্য সহায়ক উপাদান যোগ করা হয় । ফলে তাঁর রান্না করা ছাগলের মাংস সুস্বাদু ছাড়া স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ভালো ।
খ: ফেই ফেই , আপনি জানেন কি , গরু এবং ছাগরের মাংস বাংলাদেশীদের খুব পছন্দ । বলুন না ইয়ুয়ে শেং চাই'র খাবারের বৈশিষ্ট কী?
ক: এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মা কুও ছি'র কথা শুনতে হবে ।
ইয়ুয়ে শেং চাই'র মাংস মুখে আসার পর পরই গলে যায় । বৃদ্ধরাও সহজেই খেতে পারেন । তা ছাড়া , রান্নার সস সবই স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক । চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধের মধ্যে এসব সস অন্তর্ভূক্ত রয়েছে । বলা যায় , এভাবে রান্না হওয়া মাংস জৈব আকাঙ্ক্ষার মেটানোর জন্য অনেক ভালো ।
ক: আমি বুঝেছি যে , বংশের পর বংশ ধরে উন্নয়ন ও পরিবর্তনে পেইচিং স্ন্যাকস এখন পর্যন্ত প্রচলিত খঅবারে পরিণত হয়েছে , এবং তার পুষ্টিও অনেক বেশি । আমি জানি , পেইচিং শহর অস্তিত্ব সৃষ্টির পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার বছর পর হয়ে গেছে । দীর্ঘসময়ের উন্নয়নে পেইচিংয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোক আসতে থাকে , তা ছাড়া পেইচিং অনেক বিদেশি বন্ধুদেরও আকর্ষণ করেছে । ফলে পেইচিংয়ের বৈশিষ্টময় খাবার সংস্কৃতি খুব দ্রুত বিকশিত হয়েছে । পেইচিং খাবারের মধ্যে পেইচিং স্ন্যাকসকে সবচেয়ে বৈশিষ্টময় বলা যায়। এই পেইচিং স্ন্যাকসের ইতিহাস গত বছর আছে ?
ক: এটা বলা খুব কঠিন । আমরা এখন পেইচিংয়ের ঐতিহ্যবাহী স্ন্যাকস সমিটির চেয়ারম্যান হৌ চিয়া'র কথা শুনবো ।
সবচেয়ে পুরোনো পেইচিং স্ন্যাকসের ইতিহাস প্রায় ৪ শো বছরেরও বেশি । চীনের ইতিহাস ৫ হাজার বছরের , পেইচিং চীনের রাজনীতি , অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কেন্দ্র । বলা যায় , পেইচিং স্ন্যাকস ঠিক ডি এন এ'র মত , তা একটি প্রতীক , যদি পেইচিংয়ে ঐতিহ্যিক হু থুং এবং স্ন্যাকস অদৃশ্য হয় , তাহলে পুরো পেইচিং শহরের বৈশিষ্টও হারিয়ে যাবে ।
ক: পেইচিং স্ন্যাকস সুস্বাদ্যু ছাড়াও তার সুগভীর সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে । তাই ইতিহাসের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তা প্রচলিত হয়েছে । এর পাশা পাশি তা আরো বেশি দেশি বিদেশি বন্ধুকেও আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে । এখন অনেকের কাছে পেইচিং স্ন্যাকস খাওয়া পেট ভরার জন্য নয় , তার আরো গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল তারা পেইচিংয়ের খাবারের সংস্কৃতি উপভোগ করতে চায়।
খ:ফেই ফেই , আমার একটি প্রশ্ন । এখন খাবার বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব তুমুল । বিশেষ করে পেইচিংয়ে বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিভিন্ন দেশের খাবার খাওয়া যায় । তাহলে পেইচিং স্ন্যাকস কীভাবে বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে পারবে ? মা কুও ছি'র মত পেইচিং স্ন্যাকসের উত্তরাধিকারীদের প্রযুক্তি বজায় থাকবে ?
ক: পেইচিং স্ন্যাকস সমিতির চেয়ারম্যান হৌ চিয়া এ প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন । আমরা তার কথা শুনি ।
স্ন্যাকস উন্নয়নের জন্য প্রথমে আমরা বিদেশের ফাস্ট ফুড রেস্তরাঁর আধুনিক পরিচালনার অভিজ্ঞতা শিখবো । অদূর ভবিষ্যতে আমরা অনেক চেন স্টোর খুলে বসবো । পেইচিংয়ে হোক , বিদেশে হোক , বন্ধুরা আসল পেইচিং স্বাদ ও গন্ধ অনুভব করতে পারবে । তা ছাড়া , এখন এসব পুরোনো দোকানের উত্তরাধিকারী বেঁচে আছেন । আমরা একটি স্কুল খুলতে চাই , যাতে এসব উত্তরাধিকারী এ স্কুলের মধ্য দিয়ে অন্যকে তাদের প্রযুক্তি শেখাতে পাবে ।
ক: পেইচিং স্ন্যাকস তার সুগভীর ইতিহাসের ভিত্তিতে অর্জিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ফল । প্রতিটি খাবার তৈরি ও খাওয়ার পদ্ধতি থেকে পেইচিং নাগরিদের বৈশিষ্টময় রীতিনীতি বোঝা যায় ।
খ: যদিও আজকের অনুষ্ঠানে আমরা স্ন্যাকস নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি । তবে এই স্ন্যাকসের পিছনে ব্যাপক সাংস্কৃতিক অর্থ রয়েছে । বলা যায় , পেইচিং শহর অনেক বড় , আরো অনেক জিনিস রয়েছে । আমরা তাও উপভোগ করবো । শ্রোতা বন্ধুরা , যদি আপনারা পেইচিংকে সম্পর্কে আরো বেশি উপলব্ধি করতে চান , তাহলে নিয়মিতভাবে আমাদের আজকের পেইচিং অনুষ্ঠান শুনুন , আমরা আপনাদের নিয়ে সারা পেইচিং শহরে ঘুরে বেড়াবো আনন্দের সঙ্গে ।
|