চীনা অ্যাথলেট লিউ ছাং ছুন নিজ উদ্যোগে ১৯৩২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত দশম অলিম্পিক গেমসে এককভাবে অংশ নেন। এবার ১৩০ কোটি চীনার সমর্থনে লিউ ছাং ছুনের ছেলে লিউ হোং লিয়াং ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমসের শিখা অনির্বান হস্তান্ত অনুষ্ঠানে মশাল বাহক হিসেবে গ্রীসে যান। ১৯৩২ সালে লিউ ছাং ছুন একা খেলেছিলেন, আর এবার তাঁর ৭৬ বছর বয়সী ছেলে লিউ হোং লিয়াং ১৩০ কোটি মানুষের পক্ষে অলিম্পিক গেমসের মশাল বহন করলেন। অর্থাত্ একজন থেকে ১৩০ মানুষের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ থেকে বোঝা যায় যে, চীনারা তাদের শতবর্ষের অলিম্পিক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে। এখন শুনুন আমাদের সংবাদদাতাদের গ্রীস থেকে পাঠানো খবর।
৭৬ বছর বয়সী লিউ হোং লিয়াং হচ্ছেন চীনের ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমির একজন একাডেমিশিয়ান। চীনের বিখ্যাত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে লিউ হোং লিয়াংকে মশাল বাহক হিসেবে মনোনীত করার কারণ হলো পরিবেশ সংরক্ষণে তাঁর বিপুল অবদান। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো তাঁর বাবা লিউ ছাং ছুন ছিলেন অলিম্পিক গেমসে প্রথম চীনা অংশগ্রহণকারী।
আমাদের সংবাদদাতাদেরকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন,
আমার বাবা প্রথম বারের মতো অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়ে চীনের প্রতিনিধিত্ব করেন। চীনাদের পক্ষে আমার বাবার ভূমিকা কোবার্টিনের আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস উন্মোচিত করার মতোই ঘটনা। তখন আমার বাবা অলিম্পিক গেমসে চীনের ৪৫ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করায় অলিম্পিক গেমসের সঙ্গে আমাদের এবং আমাদের দেশের সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
১৯৩২ সালে চীনে জাপানী আগ্রাসনের সময় ২৩ বছর বয়সী লিউ ছাং ছুন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকল হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে চীনের প্রতিনিধিত্ব করে অলিম্পিক গেমসে অংশ নেন। তিনি অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে মানবজাতির শান্তি, মৈত্রী ও ন্যায্যতার প্রতীক অলিম্পিক বেদিতে পা রাখেন। ৭৬ বছর আগের গ্রীষ্মকালে লস অ্যাঞ্জেলেসে দশম অলিম্পিক গেমসে প্রথম বারের মতো কোনো চীনা খেলোয়াড়ের পা পড়ে। সকল দর্শক লিউ ছাং ছুয়ানের এই দৃঢ় মানসিকতায় অভিভূত হয়ে যান। বাবার অলিম্পিক চেতনা প্রসঙ্গে লিউ হোং লিয়াং সংবাদদাতাকে বলেন,
আমার মনে হয়, তখনকার অবস্থা অনুযায়ী তাঁর সবচেয়ে বড় ইচ্ছা ছিলো অলিম্পিকে অংশগ্রহণ। তিনি মনোযোগ দিয়ে কোবার্টিনের একটি বিখ্যাত বাক্য মনে রেখেছিলেন, সেটি হলো অলিম্পকি চেতনায় জয়ের চেয়ে অংশগ্রহণটাই বড়।
লিউ হোং লিয়াং বলেন, তাঁর বাবা বৃদ্ধ হওয়ার পরও অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আবার ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
১৯৭৯ সালে চীনের অলিম্পিক গেমস কমিটি তার বৈধ অধিকার ফিরে পায়। চীন ১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার জন্য খেলোয়াড় পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এর ঠিক আগের বছর, অর্থাত্ ১৯৮৩ সালে লিউ ছাং ছুন রোগে ভূগে মারা যান এবং তাঁর আবার অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়। লিউ ছাং ছুন মারা যাওয়ার ২৫ বছর পর তাঁর ছেলে লিউ হোং লিয়াং অলিম্পিক গেমসের সূতিকাগার গ্রীসে এসে অলিম্পিক গেমসের শিখা অনির্বান হস্তান্তর করেন। তিনি আবেগের সঙ্গে বলেন,
আমি আমার বাবাকে বলতে চাই, আপনার ছেলে এখানে এসেছে এবং আপনার পক্ষ থেকে আপনার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
লিউ হোং লিয়াং সংবাদদাতাকে বলেন, তাঁর বাবার বড় স্বপ্ন ছিলো চীনের উদ্যোগে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠান। তখন লিউ ছাং ছুন একা একা অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছিলেন। খুব নিঃসঙ্গ ছিলো সেটি। এখন লিউ ছাং ছুয়ানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৩০ কোটি চীনা মানুষ চীনে এবারের অলিম্পিক গেমস আয়োজনের বলিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক। একজন থেকে ১৩০ কোটি মানুষ -- লিউ হোং লিয়াং-এতে ভীষণ আলোড়িত। তিনি বলেন,
এখন আমরা ১৩০ কোটি লোক অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতি কাজে অংশ নিচ্ছি। আমি মনে করি, এটি আমাদের দেশের সমৃদ্ধির প্রতীক। এটি আমাদের বিশ্ব সম্প্রদায়ে যোগদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২৪ মার্চ শিখা অনির্বান অগ্নি প্রজ্বলনকারী "সিয়াং ইউন" মশালে অগ্নি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে পেইচিং ২০০৮ অলিম্পিক গেমসের যাত্রা শুরু হয়েছে। লিউ হোং লিয়াং মশাল বাহক হিসেবে দু'শ মিটার দূরত্বে মশাল হস্তান্তর করে বাবার শেষ ইচ্ছাটাই পূরণ করেন। দু'শ মিটার খুব অল্প দূরত্ব। লিউ হোং লিয়াং খুব আস্তে আস্তে হেঁটে ২০০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেন ১৫ মিনিটে। একই সঙ্গে এ দু'শ মিটার পথ অনেক দীর্ঘ। কারণ ১৯০৮ সালে চীনারা প্রথম চীনে অলিম্পিক গেমসের আয়োজনের আবেদন করেছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চীনাদের মোট এক'শ বছর সময় লেগেছে। (লিলি)
|