মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় দালাই গোষ্ঠীর উস্কানি ও সংগঠনে চীনের তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের রাজধানী লাসা শহরের বৌদ্ধমন্দিরগুলোর মুষ্টিমেয় কিছু ভিক্ষু দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে লাসার স্বাভাবিক সামাজিক শৃঙ্খলা বিপন্ন করেছে । এই নৈরাজ্য মোকাবেলার জন্য তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার আইন অনুসারে দুষ্কৃতকারীদের দমন করার ব্যবস্থা নিয়েছে । তিব্বতে সি আর আইয়ের সংবাদদাতা দেখেছেন এখন লাসা শহরের রাস্তায় দোকানপাট ও সুপারমার্কেটগুলো আবার খোলা হয়েছে , ছেলেমেয়েরা আবার স্কুলে যাচ্ছে । লাসা শহরের পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি শান্ত।
২৩ মার্চ আমাদের সংবাদদাতা দেখেছেন , লাসার কেন্দ্রস্থলের প্রধান প্রধান রাস্তায় দু শ'টিরও বেশি দোকান আবার খুলেছে । পার্ক ও ময়দানে অনেক নাগরিক ও বিদেশী পর্যটক দেখা যাচ্ছে । ইতালি থেকে আসা গুজমান বলেন , ১৪ মার্চ তিনি লাসার রাস্তায় দুষ্কৃতকারীদের ভাংচুর ও আগুন জ্বালানো নিজের চোখে দেখেছেন । তখন তিনি কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন । গত কয়েক দিনে লাসার অবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে , এর জন্য আমি আনন্দ বোধ করি । তিনি বলেন , আমি এখন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য বাইরে যাচ্ছি। আজ সকালে আমি বাজার থেকে সবজি কিনেছি , দুপুরে রেস্তোরাঁয় খেয়েছি এবং রাস্তায় একটু হাটাঁহাটি করেছি ।
সুইডেন থেকে আসা ইয়াং ফিস ডেরেক এক মাস আগে সাইকেলে তিব্বত ভ্রমণেগিয়েছেন । তিনি যে হোটেলে থাকেন , সেই হোটেলের কাছেই গুরুতর সহিংস ঘটনা ঘটেছে । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , ১৪ মার্চ বিকেলে তিনি তার ঘর থেকে বাইরে অনেক মানুষের চিত্কার শুনতে পান । জানালা থেকে তিনি কালো ধোঁয়াও দেখেছেন । তিনি ঘর থেকে ছুটে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন এবং অনেক দুষ্কৃতকারীর ভাংচুর , লুটপাট ও আগুন অগ্নি সংযোগের তান্ডবলীলা নিজের চোখে দেখেছেন । এ কয়েক দিন লাসার পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে । লাসা শহর এখনও সুন্দর । তিনি বলেন , ১৫ ও ১৬ মার্চ আমি পুলিশকে রাস্তায় কাজ করতে দেখেছি । এখন দাঙ্গাহাঙ্গামাআর নেই । আপনি যদি সুপারমার্কেটে যান , মনে হবে কোনো কিছুই হয় নি । পরিস্থিতি অতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে ।
এ কয়েক দিনে লাসার কিছু কৃষক - বাজার ও সুপারমার্কেট স্বাভাবিক হয়েছে । আমাদের সংবাদদাতা ' পাই ই ' নামে একটি সুপারমার্কেটে মিস শোংয়ের সঙ্গে আলাপ করেছেন । মিস শোং বলেন , আমি এ মার্কেটের কাছে কাজ করি । এ মার্কেট আমি প্রায়ই আসি । এ কয়েক দিন আমি মনে করি সুপার মার্কেটটিতে ক্রেতার সংখ্যা আগের মতোই বেশি এবং পণ্যের সংখ্যা ও দামের বিশেষ কোনো পার্থক্যনেই ।
লাসা শহরের বেশ কিছু স্কুল দুষ্কৃতকারীদের তান্ডবের শিকার হয়েছে । ১৪ মার্চ দুর্বৃত্তরা লাসার হাই ছেন প্রাথমিক স্কুলের অনেক টেবিল চেয়ার ভেঙে পুড়িয়ে দিয়েছে । ছাত্রদের নিরাপত্তার জন্য এ প্রাথমিক স্কুল তিন দিন বন্ধ ছিল । এখন স্কুলটি আবার খুলেছে । ছাত্রছাত্রীরা মাঠে খেলাধুলা করছে । এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিইমা সেরিং বলেন , আমাদের স্কুলের ৯৮শতাংশ ছাত্রছাত্রী ও সব শিক্ষকআবার স্কুলে ফিরে এসেছেন । ১৪ মার্চ দুষ্কৃতকারীদের ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ফলে লাসা শহরের সাড়ে বারো কিলোমিটার বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল । কিছু স্থানের টেলিফোন ও ইন্টারনেটব্যবস্থা নষ্ট হয়েছিল । সংশ্লিষ্ট বিভাগ জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের পর এখন লাসার প্রায় সব নাগরিক ও দোকানের বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে । এখন লাসার প্রধান প্রধান রাস্তায় ট্যাক্সি ও পরিবহন ব্যবস্থাও স্বাভাবিক হয়েছে। অনেক নাগরিক উপাসনার জন্য পুতালা ভবনে যান । লাসা শহরের মেয়ন দোজে সেদ্রুপ বলেন , আমরা আইন অনুসারে এ সহিংসতায় অংশগ্রহণকারী দুষ্কৃতকারীদের শাস্তি দেবো এবং লাসার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সংকল্পবদ্ধ ।
|