২০ মার্চ চীনের রাষ্ট্রীয় টেলভিশন কেন্দ্র সিসিটিভিতে ১৪ মার্চ লাসায় ঘটা ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ বলপ্রয়োগমূলক ঘটনা সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র সম্প্রচারিত হয়েছে । এতে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে । প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটিতে লক্ষ্য করা যায় যে, অনেক সাধারণ পথচারী ও নিরিহ জনসাধারণ দুষ্কৃতকারীদের হামলার শিকার হয়েছেন । রাস্তার দুপাশে দোকানপাট ও স্থাপনাগুলো দুষ্কৃতকারীদের দেয়া আগুণে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায় ।
১৪ মার্চ সকালে কিছু সংখ্যক ভিক্ষু লাসার উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিয়াও চাওসি মন্দিরে থেকে পাথর ছুড়ে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনরত পুলিশদের ওপর হামলা চালায় । তারপর কতিপয় দুষ্কৃতকারী রাস্তায় সমবেত হতে শুরু করে । তারা দেশকে বিভক্ত করার শ্লোগান দিয়ে উচ্ছৃঙ্খলভাবে ভাংচুর , লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ নাশকতামুলক তত্পরতা চালায় । ঘটনাটি দ্রুত চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে । লাসা শহরের কেন্দ্রস্থলে দুষ্কৃতকারীরা ভাংচুর , লুটপাট ও অগ্নিসংযোগমূলক কর্মকান্ড চালায় । একটির পর একটি সুপার মার্কেট, দোকানপাট ও রেস্তঁরা তাদের ধরিয়ে আগুণে পুড়ে যায় । আগুণে পুড়ে যাওয়া একটি পোশাকেরদোকানে কর্মরত পাঁচটি যুবতী মেয়ে পালিয়ে যেতে না পারায় আগুণে পুড়ে মারা যায় । চোমা এই দোকানের একমাত্র কর্মী যিনি আগুণ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন । সেই দৃশ্য স্মরণ করে তিনি বলেন , আমাদের দোকানের দরজা কাঁচের । তাদের ভাংচুরে দরজার কাঁচ সম্পূর্ণ চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায় । ভয়ে আমারা কাঁদতে থাকি এবং আমাদের শরীর কাপতে শুরু করে । এমন কি কথা বলতেও পারছিলাম না । আমরা কখনো ভাবতে পারি না যে , সকালে আমরা আনন্দে কাজে আসি , আর হঠাত এমন বিপদে পড়ি । সত্যিই আমি ভাবতে পারিনি । কিন্তু আমি সেই সব দুষ্কৃতকারীদের বলতে চাই যে , তোমমরা কেন এত বেশী নিরিহ মানুষকে হত্যা করেছো ?
বলপ্রয়োগমূলক ঘটনায় দুষ্কৃতকারীরা খুবই নিষ্ঠুর কায়দা ব্যবহার করেছে । দাশ-বারোজন দুষ্কৃতকারী একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে ঘেরাও করে ইট পাথর দিয়ে তার মাথা য় তীব্রভাবে আঘাত হানে । ফলে তার ডান চোখ অন্ধ হয়ে যায় । তার বাঁ কান কেটে নেয় । এমনকি আহতদের চিকিত্সা করার জন্য আসা ডাক্তাররাও তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় । এ সম্পর্কে লাসা শহরের গণ হাসপাতালের ডাক্তার লোসাংছিরেন বলেন , দুষ্কৃতকারীদের মুখোমুখী হলে আমরা তাদের জানালাম যে , আমরা ডাক্তার । কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে সরাসরি আমাদের গাড়ি ভাংচুর এবং আমাদের মারপিট করতে শুরু করে ।
লাসা শহরের বিদ্যুত ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা , ব্যাংক, হাসপাতাল এবং মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল সবই গুরুতরভাবে ধ্বংস হয়ে যায় । দুষ্কৃতকারীরা লাসা শহরের ২নং মাধ্যমিক স্কুলে অনুপ্রবেশ করে স্কুল ভবনে আগুণ ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয় । আগুণ নেভাতে আসা ফায়ারম্যানরাও তাদের হামলার শিকার হয়েছেন । দুটি গাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং চারজন ফায়ারম্যান গুরুতর আহত হয়েছেন । ঘটনার পর তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার সামাজিক শৃঙ্খলা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে পুলিশবাহিনী পাঠায় । দুষ্কৃতকারীরা পাথর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপরও আক্রমণ চালায় ।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , এবারের তান্ডবলীলায় দুষ্কৃতকারীরা মোট ২১৬টি বাড়িঘর, দোকানপাট এবং ৫৬টি গাড়ি ভাংচুরের পর তাতে আগুণ ধরিয়ে দেয় এবং ১৩জন নিরিহ নাগরিককে আগুণে পুড়িয়ে বা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে । তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলসরকারের কর্মকর্তা পাইমাছিলিন বলেন , যথেষ্ট বাস্তব তথ্য প্রমাণ করে যে , লাসার এই নাশকতামূলক কর্মকান্ড দালাই চক্রের সংগঠনে ও চক্রান্তে সৃষ্ট হয় । তিনি বলেন , দালাই চক্র নানা উপায়ের মাধ্যমে তিব্বতের ভেতরের কিছু ভিক্ষুর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের এসব ঘটাতে নির্দেশ দেয় । পাশাপাশি দালাই চক্র নানা পদ্ধতির মাধ্যমে বাস্তবতা অজানা জনসাধারণকে তাদের নাশকতামুলক কর্মকান্ডে অংশ নিতে উস্কানি দেয় ।
তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , ১৯ মার্চ রাত ১০টা পর্যন্ত মোট ১৭০জন দুষ্কৃতকারী আত্মসমর্পন করেছে । এখন লাসার প্রধানপ্রধান রাস্তায় গাড়ি অবাধে চলাফেরা করছে । অধিকাংশ দোকানপাট ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল খুলছে এবং লাসার সামাজিক শৃঙ্খলা মোটামুটি স্বাভাবিক হয়েছে । চুং শাওলি ।
|