১৯৯৬ সালের পর বর্তমান আর্থিক সালে চীনে আবার কঠিন মুদ্রা নীতি ব্যবস্থা চালু হবে । এথেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীন ১৯৯৭ সালে এশিয়ার আর্থিক সংকট দেখাদেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত চালু করা স্থিতিশীল মুদ্রানীতির পরিবর্তন করেছে । ১১ বছর পর চীন কেন আবার কঠিন মুদ্রা নীতি চালু করছে ?
এবারের কঠিন মুদ্রা নীতি চালু করা সম্পর্কে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাও বলেন , বর্তমানে স্থাবর সম্পদে বিনিয়োগের উঠা-নামার চাপ বেশি , অতিরিক্ত মুদ্রার ক্রেটিড ও চলমান দ্বন্দ্ব প্রশমিত হয়নি এবং মূল্যবৃদ্ধির চাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই সব ক্ষেত্রের কথা বিবেচনা করে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা হয়েছে এবং মুদ্রার সরবরাহের পরিমান ও ক্রেটিডের দ্রুত বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে ।
এক সাক্ষাত্কারে জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য . কেন্দ্রীয় অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল বিশেষজ্ঞ হো ছিয়াং বলেন , ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসের আগে চীনের দ্রব্যমূল্য অপেক্ষাকৃত নিম্নমুখি অর্থাত ২ শতাংশের নিচে ছিল । কেউ কেউ বলেন , এটি ছিল চীনে দেশ গঠনের পর সবচেয়ে ভাল সময়। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে । দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠিন মুদ্রা নীতি চালু করেছে ।
প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাও তাঁর সরকারী কার্যবিবরণীতে বলেছেন , ঋণ কাঠামো উন্নয়নের কাজ জোরদার করতে হবে । মধ্য ও দীর্ঘ কালীন ঋণের বৃদ্ধিকেবিশেষ করে বেশি জ্বালানী ব্যবহার , বেশি নিঃসরণ এবং অতিরিক্ত উত্পাদন করে এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঋণকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে । পক্ষান্তরে , গ্রামাঞ্চল, কৃষি ও কৃষক, পরিসেবামূলক শিল্প , মধ্য ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান , স্ব-উদ্ভাবন, জ্বালানী সাশ্রয় , পরিবেশ রক্ষা এবং আঞ্চলিক সুষম উন্নয়ন সহ নানা ক্ষেত্রকে ঋণের দিক থেকে সমর্থন দেবে । চীনের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ লিন ইফু যিনি আগামী মে মাসে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ পদে নিযুক্ত হবেন তিনি এই মতের ওপর তার সমর্থনের কথা জানিয়েছেন । তিনি বলেন , কঠিন মুদ্রা নীতি প্রধানত দুই পদ্ধতিতে বিভক্ত । একটি হল আমানতের রিজার্ভ বাড়ানো , আরেকটা হল সুদের হার বাড়ানো । আমি সুদের হার সম্পর্কিত নীতি প্রয়োগের পক্ষপাতি । কারণ যদি অনবরতভাবে আমনতের রিজার্ভের হার বাড়তে থাকে তাহলে ঋণ দেয়া অর্থ হ্রাস পাওয়ার পর মধ্য ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বপ্রথমেই ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া তালিকা থেকে বাতিল করা হবে । এটা চীনের "যেমন ভাল তেমন দ্রুত"-এর অর্থনীতি উন্নয়ন লক্ষ্যের পরিপন্থী । আর যদি সুদের হার না বেড়ে যায় তাহলে আরও বেশি অর্থ শেয়ার বাজার ও স্থাবর সম্পদের বাজারে প্রবেশ করবে । এটা স্থাবর সম্পদ ও শেয়ার বাজার সুষ্ঠুভাবে বিকাশ লাভ করা সম্পর্কে চীন সরকারের কাক্ষিত নীতির পরিপন্থী । সুতরাং সুদের হার নীতিকে আরও বেশি কাজে লাগানো উচিত ।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহা পরিচালক চৌ সিয়াওছুয়াং বলেন , বিশ্বের অন্যান্য প্রধান প্রধান অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি হ্রাসেরসাথেসাথে বাইরের চাহিদা কমে যায় । চীনের অভ্যন্তরীণ ভোক্তার অভাবসহ নানা উপাদানের প্রভাবে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অত্যন্ত সাবধানের সঙ্গে সুদের হার নীতি ব্যবহার করতে হবে ।
কঠিন মুদ্রা নীতি ব্যাখ্যা করার সময় ওয়েন চিয়াপাও বলেন , বহুজাতিক পূঁজির ব্যবহারকে তত্ত্বাবধান জোরদার করতে হবে এবং স্থিতিশীলভাবে পূঁজির বিনিময় জোরদার করতে হবে । এ সম্পর্কেচীনের জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য লি ত্যসুই মনে করেন , এ থেকে প্রমানিত হয়েছে যে, চীন আন্তর্জাতিক পূঁজি অর্থাত "হট মানি"র ওপর তদারকী জোরদার করবে । তিনি বলেন , যদি " হট মানির" প্রবেশকে কার্যকর রোধ করা না যায় তাহলে চীনের আন্তর্জাতিক আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা বেড়ে যাবে এবং পূঁজির অতিরিক্ত সচলতা আরও তীব্রতর হবে । তাই কোনো মতেই স্বল্পকালীন আন্তর্জাতিক পূঁজির স্বেচ্ছামূলক আসাযাওয়াকে অনুমোদন করা হবে না । এ লক্ষ্যেবিভিন্ন ক্ষেত্রের নিবিড় সহযোগিতা দরকার এবং কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়িত করতে হবে । --চুং শাওলি
|