চলমান চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন ও গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের বার্ষিক অধিবেশন দেশি-বিদেশি তথ্য মাধ্যমগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। তাদের মধ্যে দু'জন ভারতীয় সংবাদদাতাও রয়েছেন। তারা হলেন 'টাইমস অব ইন্ডিয়া' এর চীন শাখা অফিসের প্রতিনিধি শৈবাল দাসগুপ্ত ও ভারতের পি টি আই বার্তা সংস্থার চীন শাখা অফিসের প্রতিনিধি রাঘভেন্দ্র। আজ আমি এই দু'জন ভারতীয় সংবাদদাতার বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে আপনাদের চীনের দুটি অধিবেশন সম্পর্কে জানাবো।
'আমি ভারতের পি টি আই বার্তা সংস্থার সংবাদদাতা। এখন পেইচিংয়ে কাজ করছি। গত কয়েক দিন ধরে আমি চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস ও গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের অধিবেশন সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরী ও পাঠাতে ব্যস্ত। আমি জাতীয় গণ কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে ওয়েন চিয়া পাওয়ের সরকারী কার্য বিবরণী শুনেছি।'
বন্ধুরা, এই মাত্র আপনারা ভারতের পি টি আই বার্তা সংস্থার সংবাদদাতা রাঘভেন্দ্র'র কথা শুনলেন। রাঘভেন্দ্র গত বছর আগস্ট মাসে পেইচিং এসেছেন। তিনি এই প্রথমবার চীনের দু'টি অধিবেশনের সাক্ষাত্কার নেন। ৫ মার্চ সকালে তিনি মহা গণ ভবনে মনোযোগ সহকারে প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাওয়ের সরকারী কার্য বিবরণী শুনেছেন। তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, 'সরকারী কার্য বিবরণীতে জনগণের সাধারণ জীবন সম্পর্কিত বিষযগুলোকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গ্রামাঞ্চলের বুনিয়াদী ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো এবং কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া হবে। যাতে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়।'
তিনি বলেন, চীন ও ভারত হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ। সর্বোচ্চ হিমালয় পর্বত দু'দেশকে বিভক্ত করেছে। চীন ও ভারত উভয়েই উন্নয়নশীল ও জনবহুল দেশ। মোট জনসংখ্যার মধ্যে কৃষকের সংখ্যাই অপেক্ষাকৃত বেশি। ফলে গ্রামীন সমস্যার ব্যাপারে এ দুটি দেশের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। এ সম্পর্কে 'টাইমস অব ইন্ডিয়া' এর সংবাদদাতা শৈবাল দাসগুপ্তরও একই মত। তিনি বলেন, 'গ্রামীন সমস্যায় চীন ও ভারতের অনেক মিল আছে। চীনের কাছ থেকে ভারতের শেখার অনেক কিছুই আছে। চীনের অর্থনীতি ও সমাজের বাস্তব পরিবর্তন হচ্ছে সারা বিশ্বের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু, অবশ্য তা ভারতেরও দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু। ভারত ও চীনের সম্পর্ক এবং চীনের পরিবর্তন আমি ভারতের পাঠকদের জানাতে চাই।'
শৈবাল দাসগুপ্ত তিন বছর আগে চীনে এসেছেন। তিনি এবার নিয়ে দ্বিতীয় বার দু'টি অধিবেশনের সাক্ষাত্কার নেয়ার সুযোগ পান। তিনি মনে করেন, 'এবারের চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি ও গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্যরা বয়সের দিক থেকে আরো তরুণ ও তারুণ্যে ভরপুর এবং আরো জ্ঞানী। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। বর্তমানে চীনের প্রভাব বলয় দিন দিন বাড়ছে। সারা বিশ্ব চীনের পরিবর্তনের ওপর নজর রাখছে।'
রাঘভেন্দ্র চীনে বেশি দিন না থাকলেও চীনকে পছন্দ করেছেন। ইতোমধ্যে তার তিব্বত সফরের সুযোগ হয়েছে। তিনি বলেন, তিব্বত তাঁর কল্পনার মতো নয়। তিব্বতের উন্নয়ন কাজ খুব লক্ষণীয়। বহু পশুপালক ও কৃষকরা এখন আরামদায়ক বহুতল ভবনে থাকেন। সেখানে প্রশস্ত সড়ক আছে। বিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়া যায়। নিয়ামত বিদ্যুত সরবরাহ হয়। তিব্বত ভ্রমণের মাধ্যমে রাঘভেন্দ্র চীনের কৃষি ও সীমান্ত অঞ্চল উন্নয়নের প্রয়াসকে উপলব্ধি করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তিব্বত উন্নয়নের ভবিষ্যত্ সম্ভাবনা আরো সমুজ্জ্বল হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ভারতের সম্পর্ক নিরন্তরভাবে গরম হয়ে যাচ্ছে। ২০০৫ সালের এপ্রিলে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও ভারত সফর করেন। চীন ও ভারতের যৌথ বিবৃতিতে দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ২০০৬ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ভারত সফর করেছেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আনুষ্ঠানিকভাবে চীন সফর করেন। দু'দেশ 'একবিংশ শতাব্দীর অভিন্ন প্রত্যাশা' ঘোষণা করেছে। রাঘভেন্দ্র বলেন, চীন ও ভারতের নেতৃবৃন্দ ও উর্ধতন কর্মকর্তা পর্যায়ের ঘন ঘন পারস্পরিক সফর দু'দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিনিময়কে ত্বরান্বিত করেছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|