৩৪ বছর বয়সী হু সিয়াওইয়েন দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের একজন কৃষক ছিলেন । ১০ বছর আগে তিনি জন্মভূমি ত্যাগ করে চীনের অন্যতম শিল্পোন্নত প্রদেশ কুয়াংতুং প্রদেশে মজুরি করতে যান । হয়তো তিনি স্বপ্নে ভাবতেও পারেননি যে , তিনি এবং অন্য দুজন কৃষি শ্রমিক কুয়াংতুং প্রদেশের জাতীয় গণ কংগ্রসের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে চীনের পাঁচ বছর মেয়াদী নতুন সর্বোচ্চ ক্ষমতা সংস্থার একজন সদস্য হতে পারেন । বলা যায় , এটা চীনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।
বিংশ শতাব্দীর সত্তর দশকের শেষ দিক থেকে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি চালু হওয়ার পর চীনের অর্থনীতিরদ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে । শিল্প কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের পাশাপাশি অধিক থেকে অধিকতর কৃষক জমি ত্যাগ করে শহরে মজুরী করতে যাচ্ছে । তাদেরকে " কৃষি শ্রমিক" বলা হয় । এক অসমাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে চীনের কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা ১৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে । তাঁরা প্রধানত নির্মাণ শিল্প, তৈরী শিল্প এবং পরিবহন শিল্পেনিয়োজিত রয়েছেন। চীনের শিল্প শ্রমিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিশেষ হিসেবে তাঁরা শহরের নির্মাণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখছেন । বহু বছর ধরে চীন বিশ্বের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি। তাই বলা যায় , চীনের কৃষি শ্রমিক বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য অবদান রেখেছেন ।
কিন্তু চীনে শহর ও গ্রামাঞ্চলের নাগরিকদের ভিন্ননিবন্ধন ব্যবস্থা কার্যকর করার কারণে কৃষি শ্রমিক বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বল । শহুরে নাগরিকদের তুলনায় শিক্ষা , চিকিত্সা , আবাসন , সামাজিক নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানে তারা অপেক্ষাকৃত বেশী অসুবিধার সম্মুখীন । এছাড়াও শিক্ষার মান নিচু এবং আইনগত চেতনা দুর্বল বলে তাদের বেশ কয়েকটি বৈধ অধিকার ও স্বার্থ তাদের কর্মরত ইউনিটের কাছ থেকে পায় না । যার কুফল সমাজের ন্যায্য অধিকারেরওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের , চীন সরকারের এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ।
তিনজন কৃষি শ্রমিক চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি হয়েছেন । তারা সংবিধান অনুযায়ী সরাসরি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নীতি প্রণয়ণে অংশ নিয়েছেন । যাতে কৃষি শ্রমিক শ্রেণীরস্বার্থ ও অধিকার উচ্চ স্তরে রক্ষা করা যায় । এথেকে সার্বিকভাবে জাতীয় গণ কংগ্রেস ব্যবস্থার গণতন্ত্রতত্ত্বপ্রমাণিত হলো।
তিনজন কৃষি শ্রমিকেরজাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি হওয়াটা জাতীয় গণ কংগ্রেসের এবারের বার্ষিক অধিবেশনের একমাত্র নতুন বৈশিষ্ট্য তা নয় । এবারের বার্ষিক অধিবেশনে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে । বুনিয়াদী স্তরের কৃষক প্রতিনিধির সংখ্যা ৭০ শতাংশ বেড়েছে । এটা চীনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক জীবনের বিরাট পরিবর্তনের পরিচায়ক ।
উল্লেখ্য যে, চীনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক জীবনের অগ্রগতি আজকে শুরু হয়নি । ব্যক্তিগত অর্থনীতি পুনরুত্থানের সাথেসাথে বহু ব্যক্তিগত শিল্পপতি দশ বারো বছর আগেই জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি হয়েছেন । ২০০২ সালে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির ১৬তম কংগ্রেসে বেশ কিছু ব্যক্তিগত শিল্পপতি পার্টির জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি হয়েছেন । ২০০৫ সালে ৩০জন ব্যক্তিগত শিল্পপতি ও ২৩জন কৃষি শ্রমিক প্রথমবারের মতো " জাতীয় শ্রেষ্ঠ শ্রমিক"-এর প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন । ২০০৭ সালে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য নন এমন ব্যক্তি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন । এটা কয়েক দশকের নিয়ম ভাঙ্গল । এথেকে স্পষ্টভাবে চীনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক জীবনের স্থিতিশীল প্রক্রিয়ার বিষয়টি যায় ।
অব্যাহতভাবে চিন্তাধারা মুক্তকরণ করা , সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পথে অটল থাকা , বিজ্ঞান উন্নয়ন জোরদার করা এবং সমাজের সুষমতা তরান্বিত করার পথ বেয়ে চীনের সমাজতান্ত্রের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নির্মাণ অবশ্যই আদর্শময় পর্যায়ে উন্নীত হবে । পারদর্শী ব্যক্তিরা মনে করেন , সরকারের সংস্কারকে প্রধান বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে চীনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নির্মাণকাজ সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির উন্নতব্যবস্থা, সুষম সমাজ গড়ে তোলা এবং দুর্নীতি দমন ও সরল সরকার গঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলভাবে অগ্রগতি লাভ করবে ।
অনুমাণ করা যাচ্ছে , পরবর্তীকালে কৃষি শ্রমিক প্রতিনিধির সংখ্যা আরও বাড়বে । নিঃসন্দেহে , অর্থনৈতিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হওয়ার সাথেসাথে চীন জাতীয় গণ কংগ্রেস , রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন, পার্টির ভেতর ও বুনিয়াদী স্তর সহ বিভিন্ন স্তরের গণতান্ত্রিকনির্মাণ কাজ জোরদার করবে । চীন নিজের রাষ্ট্রীয় অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সৃষ্টি করতে পারবে । ---চুং শাওলি
|