পাকিস্তান চীনের বন্ধু প্রতীম প্রতিবেশী । রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও ক্রীড়া ক্ষেত্রে দুদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্কও রয়েছে । ২০০৮ সালে পেইচিং অলিম্পিক গেমস ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে অলিম্পিক গেমসের ওপর পাকিস্তান প্রতিদিনই গুরুত্ব দিচ্ছে । এ উপলক্ষে আমাদের সংবাদদাতা বিশেষভাবে পাকিস্তানের অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান আরিফ হাসানের একটি সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । সাক্ষাত্কারে তিনি পেইচিংয়ের অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন । তিনি বলেন , ---১--- যদি একটি বাক্য দিয়ে অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজ বর্ণনা করতে বলেন , তাহলে আমি বলব, অতি চমত্কার । চীনারা অত্যন্ত ভাল করেছেন । তাদের প্রস্তুতিমূলক কাজ দেখে আমিও গর্বিত । চীন দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ । তারা এত চমত্কার করেছেন, মনে হয় যেন আমরা নিজেরাই করেছি । তাই আমরা তাদের সাফল্য কামনা করি ।
পাকিস্তান অলিম্পিক কমিটি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনের অলিম্পিক কমিটির সঙ্গে তার দীর্ঘ দিনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে । ২৯তম অলিম্পিক গেমস পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে । এটা দুদেশের অলিম্পিক কমিটির নিবিড় সহযোগিতার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে । দুদেশের অলিম্পিক কমিটির সযোগিতায় মিঃ হাসান অত্যন্ত সন্তুষ্ট । তিনি বলেন , ---২--- পাকিস্তান অলিম্পিক কমিটি ও চীনের অলিম্পিক কমিটি ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছে । পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হওয়ার আগেই এ ধরণের সহযোগিতার সূচনা হয় । চীনা ভাইরা সাঁতার ও টেবিল টেনিস ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেয়াসহ পাকিস্তানের ক্রীড়া ক্ষেত্রের জন্য বহু সাহায্য করেছে । আমাদের মধ্যে এখনো সহযোগিতা চলছে । আসন্ন পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্য আমাদের মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতা হচ্ছে ।
মিঃ হাসান যেমন বলেছেন , দুদেশের অলিম্পিক কমিটি পেইচিং অলিম্পিক গেমসকে ঘিরে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছে । সাক্ষাতের সময় আমাদের প্রতিনিধি মিঃ হাসানের অফিসে লক্ষ্য করেছেন , পাকিস্তানের অলিম্পিক কমিটির কর্মীরা ব্যস্ততার মধ্যে ছিলেন । তারা পেইচিং অলিম্পিক কমিটির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান চিয়াং সিয়াওইয়ুর আসন্ন পাকিস্তান সফরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ।
জানা গেছে, চিয়াং সিয়াওইয়ুর আসন্ন সফরের উদ্দেশ্য হল, পাকিস্তানের অলিম্পিক কমিটির সঙ্গে পাকিস্তানে অলিম্পিকের মশাল রিলে দৌড় সম্পর্কে আলোচনা করা । ইসলামাবাদ অলিম্পিক গেমসের মশাল অতিক্রমের অন্যতম শহর । মশাল রিলে দৌঁড় যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য পাকিস্তান অনেক চেষ্টা চালিয়েছে । এ সম্পর্কে মিঃ হাসান বলেন , ---৩---আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি । যাতে সকলেই উত্সবের মতো আন্তরিকতা অনুভব করতে পারেন । মশাল এখানে পৌঁছানোর আগে এবং পেইচিং অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধারাবাহিক অনুষ্ঠান চালিয়ে যাবো। বিপুল সংখ্যক পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও বেতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অলিম্পিক গেমসের গুরুত্ব বিশেষ করে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের গুরুত্ব প্রকাশ করব ।
পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়ার জন্য পাকিস্তান যে পস্তুতি নিচ্ছে মিঃ হাসান সে সম্পর্কে বলেন , পাকিস্তানের হকি দল পেইচিং অলিম্পিক গেমসে যোগ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে । পাকিস্তানের কুস্তিবাজরা কুস্তির যোগ্যতা লাভ করবেন বলেও তিনি আশা করেন । হকি খেলা পাকিস্তানের একটি শক্তিশালী খেলা । এ খেলায় পাকিস্তান কমপক্ষে রৌপ্যপদক পাবে বলে তিনি আশা রাখেন ।
অনুষ্ঠেয় পেইচিং অলিম্পিক গেমস সম্পর্কে মিঃ হাসান বলেন, ---৪--- পেইচিং অলিম্পিক গেমস বিশ্বের একটি সবচেয়ে চমত্কার অলিম্পিক গেমস হবে বলে আমরা প্রতিক্ষায় আছি । চীন পরিবেশ সংরক্ষণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং মানুষের ওপর খুবই গুরুত্ব দেয় । সুতরাং " সবুজ অলিম্পিক গেমস,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অলিম্পিক গেমস এবং মানুষের অলিম্পিক গেমসের চিন্তাধারার পরিচালনায় পেইচিং অলিম্পিক গেমস অবশ্যই একটি সবচেয়ে সফল অলিম্পিক গেমস হবে ।
অলিম্পিক গেমসের মশাল রিলে দৌঁড় ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে । এ জন্য পাকিস্তানে ৬জন মশালবাহক নির্বাচন করা হয় । ১৬ এপ্রিল অলিম্পিক গেমসের পবিত্র মশাল পাকিস্তানে পৌঁছুবে । এ সম্পর্কে ১১ ফেব্রুয়ারী ইসলাবাদে একটি সংবাদ সম্মেলনে মিঃ হাসান বলেন , ---৫---অলিম্পিক গেমসের মশাল রিলে দৌঁড়ের অন্যতম শহর নির্বাচিত হওয়ায় ইসলামাবাদ গর্বিত । মশালটি পাকিস্তানের অতি অল্প জায়গা অতিক্রম করবে বটে, কিন্তু এ থেকে গোটা পাকিস্তান লাভ বান হবে । আমরা সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালিয়ে মশাল রিলে দৌঁড়টিকে পাকিস্তানের একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত করব । আমাদেরকে এই গৌরব দেয়ার জন্য আমরা পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটি এবং চীনা জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।
পাকিস্তানের নির্বাচিত ৬জন মশালবাহকের মধ্যে তিনজন পরিবেশ সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধি । ইয়াসমিন রশিদ এদের মধ্যে একজন । এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন , ---৬--- মশালবাহক নির্বাচিত হওয়ায় আমি খুবই গর্বিত । গোটা বিশ্বের কাছে অলিম্পিক গেমস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । সকল ক্রীড়াবিদ এবং সকল দেশকে একত্রিত করা ছাড়া গেমসটি একটি অত্যন্ত ভাল ক্ষেত্র । এর মাধ্যমে সবাই জানতে পারবে, কীভাবে ক্রীড়াবিদদের মতো প্রতিযোগিতা করবে, কীভাবে জয়-পরাজয়ের মোকাবেলা করবে । অলিম্পিক গেমসের মশালবাহক হওয়ার জন্য সবাই আমার জন্য ধন্য মনে করেন । পাকিস্তানের ভেতরে মশাল রিলে দৌঁড় যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য পাকিস্তানে চীনা দূতাবাস পুংখানুপুংখভাবে প্রস্তুতির কাজ চালিয়েছে । এ সম্পর্কে চীনের সাংস্কৃতিক কাউন্সিলার সান পাওসিয়াং বলেন, ---৭---পাকিস্তানের অলিম্পিক কমিটি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিষয়টির ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে । বলাবাহুল্য চীনা দূতাবাসও কম কাজ করেনি । দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বাধীন মশাল রিলে দৌঁড় বিষয়ক গ্রুপ গঠিত হয় । গ্রুপটি কয়েক দলে বিভক্ত । এখন দলগুলোর কাজ সার্বিকভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে চলছে । পাকিস্তান এ কাজকে দেশের একটি মহত কাজ হিসেবে গ্রহণ করছে । পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট এর ওপর খুব মনোযোগ দিচ্ছেন । বিশ্বাস করা যায়, পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সহযোগিতায় মশাল রিলে দৌঁড় অবশ্যই সফল হবে ।
|