আমি বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু হাসনাত মোহাম্মদ জিয়াউল হক। আমরা এখানে এসেছি ২০ দিনের সফরে, এগ্রো এন্ড বায়ো টেকনোলজীর ওপরে। এ দুই খাতে চীনের যে উন্নয়ন হয়েছে, সেটা আমাদের যারা এগ্রিকালচারে আছেন, যেমন গবেষক ও যারা প্রশাসনে আছেন, তারা এ দেশের নীতিমালা ও গবেষণা বিষয়ে জানতে চায়। আমরা মোটামুটি এ বিষয়ে একটা ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমরা যতদূর দেখেছি কৃষি ক্ষেত্রে চীনের যে প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে সেটা বাংলাদেশে যদি কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমাদের উত্পাদন দ্বিগুন করা সম্ভব। আমাদের এখানে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে , দেশে ফিরে গিয়ে আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো।
প্রঃ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কি কোন সহযোগিতা প্রোগ্রাম হয়েছে?
উঃ না, কোন সহযোগিতার প্রোগ্রাম হয় নি। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে গবেষণা ক্ষেত্রে আমরা কিছু প্রস্তাব করেছি। বায়ো টেকনোলজি ক্ষেত্রে কিছু স্কলারশীপ যদি চীন সরকার দেয়, তাহলে আমাদের যে সব কৃষি প্রতিষ্ঠান আছে, যেমন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিষ্টিটিউট, রাইস রিসার্চ ইনিষ্টিটিউট, গম গবেষণা ইনিষ্টিটিউট-এসব প্রতিষ্ঠানের বায়ো টেকনোলজির ওপরে অথবা টিস্যু কালচারের ওপরে অথবা জিএমও রাইসের ওপরে যদি কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চীন সরকার করে, তাহলে খুব ভালো হয়। আগামী ২৮ তারিখে আমাদের যে ক্লোজিং সেশন আছে, সেখানে চায়নীজ কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অনেক উর্ধতন আকসিয়ালরা আসবেন, তখন ওখানে আমরা এ প্রস্তাবগুলি রাখবো। যাতে আরো বেশি গবেষক এখানে প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করতে পারে।
প্রঃ আর এবারের প্রশিক্ষণে এই বায়ো টেকনোলজি ক্ষেত্রের যে সব তথ্য আপনারা জেনেছেন সেগুলো বলবেন?
উঃ আমরা বেইজিংয়ে আসার পরে যে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল ইনিষ্টিটিউট আছে, ওখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। বায়ো টেকনোলজি আর টিস্যু কালচারের ওপরে। এ ছাড়াও মাশরুমের ওপরে আমরা ট্রেনিং নিয়েছি, তারপরে জিএমও রাইস যেটাকে বলে হাই ব্রিড রাইস। আরো ট্রেনিং নিয়েছি বায়ো টেকনোলজি, বিশেষ করে বায়ো ফার্টিলাটজার, বায়ো পেষ্টি সাইড, বায়ো হারবাল সাইড যা আমাদের দেশে নেই। এটা এখানে এসে প্রথম জানলাম। আরেকটা নতুন জিনিস যেটা জানলাম , সেটা হলো , ক্যামিক্যাল ফার্টিলাইজারের চেয়ে বায়ো ফার্টিলাইজার অনেক বেশি ডীপ এবং মাটির জন্য ভাল। আমরা সাধারণত এগুলি ব্যবহার করতে চাই না। ইউরিয়া সার বা ক্যামিকেল ফার্টিলাইজ্যার বা অর্গানিক ফার্টি লাইজার ব্যবহার করতে চাই। আমরা এখানে এসে দেখলাম যে, যারা চায়নীজ গবেষক , তারা কিন্তু ক্যামিকেল ফার্টিলাইজারের চেয়ে ন্যাচারাল বা অর্গানিক যা মাটির জন্য ক্ষতিকর নয়, তা ব্যবহার করছে। আমরা কয়েকটি ফ্যাক্টরীও ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছি। এসব ফ্যাক্টারি বায়ো ফার্টিলাইজার , বায়ো পেষ্টিসাইড ইত্যাদি তৈরী করছে। আমরা নতুন একটি সীড টেকনোলজি অর্থাত্ বায়ো জিএমও সীড প্রডাকশন করছে এ রকম একটা ফ্যাক্টরীও পরিদর্শন করেছি। আমাদের দেশে যেটা অবহেলিত সেই মাশরুম চীনে ব্যাপক চাষ হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি যে, কয়েকশো কোটি টাকার মাশরুম ইউরোপে রপ্তানী করা হয় চীনের একটা মাত্র ফ্যাক্টরী থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে যে আবহাওয়া তাতে ব্যাপকভাবে মাশরুম চাষ করা সম্ভব। এখানে জি এম ও রাইস, সুপার হাইব্রীড রাইস বা স্বর্ণা ধানের । প্রডাকশন প্রায় ১৪ থেকে ১৫ মেট্রিকটন পার হেক্টর যেখানে আমরা প্রোডাকশন করি ৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন। সুতরাং এ অনুযায়ী প্রডাকশন করতে পারলে আমাদের প্রভাকশন অনেক বেড়ে যাবে।
প্রঃ আপনার মতে কৃষি ক্ষেত্রে চীন আর বাংলাদেশের মধ্যে কী কী মিল আছে?
উঃ মিলের মধ্যে যেটা দেখলাম যে, শহরের মিল কম। এখানে হারভেষ্ট হয় মডার্ণ মেশিন দিয়ে। আমাদের ওখানে কিন্তু আমরা হাতেই কাটি। ম্যানুয়াল ওয়ার্ক বেশি। কিন্তু এখানে মেশিনের ব্যবহার খুব বেশি। এখানে রিসার্চ হয় আইটেম ওয়াইজ। কিন্তু আমাদের রিসার্চ হয় গুটি কয়েক ক্রপের ক্ষেত্রে। এখানে ইন্ডিভিজুয়ালী ছোট ছোট ক্রপের ক্ষেত্রে, ছোট ছোট ডিজিজের ক্ষেত্রে রিসার্চ হচ্ছে, যেটা একটা বিরাট ডিফারেন্স। যেমন আমরা হয়তো রিসার্চ করছি পুরা একটা প্যাথোজোনের ওপরে কিন্তু আপনারা রিসার্চ করছেন স্পেসিফিক প্যাথোজোনের ওপরে। আমরা অতটা স্পেসিকিক না। কারণ আমাদের স্কিল ম্যান পাওয়ার ও আর্থিক প্রবলেম আছে। এটা আমার কাছে বিরাট পার্থক্য মনে হয়েছে। এ জন্যে কৃষি ক্ষেত্রে কিন্তু রিসার্চটা আপনাদের ও আমাদের মধ্যে অনেক ডিফারেন্ট। আপনারা প্রথমে হাইব্রীড রাইস করেছেন, তারপরে সুপার হাইব্রীড রাইস করেছেন জি এম ও রাইস করেছেন। আমরা জি এম ্ও রাইসে কেবল রিসার্চ পর্যায়ে আছি। এ ক্ষেত্রে কিন্তু চীনের সঙ্গে আমাদের কোঅপারেশন হতে পারে। পার্থক্য আমাদের রিসার্চ খুব দুর্বল আমাদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণেও হতে পারে।
|