v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-04 15:13:06    
ধান বিশেষজ্ঞ সুই ই রোং

cri

    সুই ইরোং বরাবরই উত্তর চীনের নিম্ন-তাপমাত্রাসম্পন্ন অঞ্চলে ধান চাষের ওপর গবেষণা করে আসছেন। এর ফলে চীনের উত্তরাঞ্চলের কয়েক লাখ কৃষকের প্রতি বছর খাদ্যশস্যের উত্পাদন পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই তাঁকে "শীত অঞ্চলের ধান পিতা" বলে গন্য করা হয়।

    তা সত্ত্বেও তিনি বরাবরই বলেন, আমি বিশেষজ্ঞ নই, আমি শুধু একজন চাষী।

    দুটি বিষয়ে সাধারণ কৃষকদের চেয়ে আমার কিছুটা ভাল জ্ঞান রয়েছে। প্রথমতঃ আমার ধান চাষের সময় অনেক দিনের। ১৯৫১ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমি ধানের চাষ করে যাচ্ছি। দ্বিতীয়তঃ আমার বিশেষ জ্ঞান আছে। কিন্তু কৃষকদের চেয়ে ধান চাষে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা কম।

    এখন ৮৩ বছর বয়সী সুই ইরোং-এর চুল সাদা হয়েছে। কিন্তু তাঁর দৃষ্টি এখনো খুব শক্তিশালী। যারা তার পরিচিত, তারা সবাই জানেন, সুই ই রোং-এর সবচেয়ে যাওয়ার আগ্রহী জায়গা হচ্ছে মাঠ এবং তাঁর সবচেয়ে বেশি গল্প করার বিষয় হলো ধান। তিনি সবসময় মাঠে কৃষকদের সঙ্গে ধান নিয়ে কথা বলেন। তিনি কখনও নিজেকে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনে করেন না।

    ধানের গবেষণার প্রতি সুই ই রোং-এর মায়া মমতা তাঁর জবীনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৯২৪ সালে সুই ইরোং উত্তর-পূর্ব চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের পেইনিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্কুলসময় জাপানের চীনকে আগ্রাসন করার যুগ ছিল। তাঁর জীবন খুব কষ্টকর ছিল। ভাত খাওয়া ছিল এক ধরণের বিলাসী ইচ্ছা। সুই ই রোং সেই স্মৃতির কথা মনে করে বলেন,

    তখন জাপানী আগ্রাসনকারী বাহিনীর চোখে আমরা চীনারা ভাত খেতে পারতাম না। তারা মনে করে, চীনাদের ভাত খাওয়ার যোগ্যতা ছিল না। তাই উত্সবের সময় লুকিয়ে ভাত খেতাম।

    তখন থেকে সকল চীনা জনগণের ভাত খাওয়ার চাহিদা পূরণ করার আকংক্ষা সুই ই রোং-এর মনে বদ্ধমূল হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল চীনের তীব্রশীত মন্ডলে অবস্থিত বলে ধান উত্পাদনের পরিমাণ খুব কম। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর পরই বিশ্ব-বিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়া সুই ইরোং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হে লোংচিয়াং প্রদেশের একটি খামার গিয়ে প্রধানত শীতমন্ডলীয় ধান চাষের ওপর গবেষণা শুরু করেন।

    কিন্তু গবেষণার প্রক্রিয়ায় কিছু ঐতিহাসিক কারণে সুই ইরোং তাঁর গবেষণা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হন। এরপর তিনি একটি দরিদ্র গ্রামে গেলেন। তাঁর নির্দেশনায় সেই গ্রামে ধানের উত্পাদন পরিমাণ দিগুন বৃদ্ধি পায়। গ্রামবাসীদের চোখে অন্য জায়গা থেকে আসা এই অতিথি সত্যিই একজন দক্ষলোক। তাই তারা সবাই তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেন।

    দশ বারো বছর পর সুই ই রোং তার আগের প্রাদেশিক ধান গবেষণা গারে আবার ফিরে যান। তখন তার বয়স ৬০ বছর এবং তিনি অবসর-প্রাপ্ত হতে যাচ্ছেন। কিন্তু সুই ইরোং-এর জন্য ধান তাঁর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। শীতমন্ডলীয় অঞ্চলে ধান চাষের সমস্যা সমাধানের আগে তিনি ধানকে পরিত্যাগ করবেন না। অব্যাহতভাবে ধান গবেষণা করা হচ্ছে তাঁর জীবনের একমাত্র সাধনা।

    আমি বরাবরাই ধানের ওপর গবেষণা করে আসছি। ধান ও আমার মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য ভাবানুভূতি কাজ করে। একদিন যদি ধান না দেখতে পাই তাহলে আমার মন বিষন্ন হয়ে যায়।

    দশ বারো বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর অবশেষে তিনি শীমন্ডলীয় অঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ধান চাষ করার প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন।

    গবেষণার সাফল্যের পর পরই সুই ই রোং অবিলম্বে এ প্রযুক্তিকে স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে পৌঁছে দেন এবং খামারে তা জনপ্রিয় করে তুলার কাজ পরিচালনা করেন। স্থানীয় কৃষকরা তাঁর প্রযুক্তি অনুযায়ী ধান চাষ করায় প্রচুর ফলন পেয়েছেন এবং ধাপে ধাপে ধনী হচ্ছেন।

    ধানের স্থিতিশীল ও প্রচুর ফলন সুনিশ্চিত করার জন্য সুই ই রোং ধানের আগাছা ও কীট পতংগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেন। কৃষক ছুই চোংকুই তাঁর এই উপায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,

    সুই ই রোং আমার ধানের চারা পরিচর্যা মাঠে আসেন। তিনি একটি ছুরি দিয়ে একটি চারার অস্ত্রপোচার করেন। কি আশ্চর্য। আমরা সবাই জানি, ডাক্তার রোগীদের অস্ত্রপোচার করেন। কিন্তু কখনও শুনিনি ধানের চারারও অস্ত্রপোচারকরা যায়।

    ধান গবেষণার কারণে সু ই রোং তার জীবনের অধিকাংশ সময় বাড়িতে সময় দিতে পারেন না। তার ছেলেমেয়েরাও বড় হওয়ার পর অন্যান্য জায়গায় চাকরি করছেন। তাই সুই ই রোং-এর স্ত্রী খাং চিংইউনকে সবসময় একা একা বাসায় থাকতে হয়।

    একবার সুই ই রোং অনেক লম্বা সময়ের জন্য বাইরে গেলেন। আমি তাকে বলি, তুমি শিগগিরি বাসায় ফিরে না আসলে আমি চীনা ভাষা বলা ভুলে যাবো। তা সত্ত্বেও স্ত্রী সুই ই রোং-এর কাজকে সমর্থন করেন। চীনা কৃষকদেরকে স্বচ্ছল জীবনযাপন করানো হচ্ছে সুই ই রোং-এর একান্ত কামনা।

    কৃষকদের বেতন যত বেশী ততই ভাল। এ বছর এক'শ ইউয়ান রেনমিনপি বৃদ্ধি পেলে আগামী বছর দু'শ ইউয়ান রেনমিনপি বৃদ্ধি পাওয়া আরো ভাল হবে। (লিলি)