আপনি কতদিন ধরে চীন আন্তর্জাতিক বেতার শুনছেন ?
আমি প্রায় দশ বছর যাবত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের একজন শ্রোতা। আমার পরিবারের সবাই বিদেশের ভিন্ন ভিন্ন বেতারের অনুস্ঠান শুনতো । বলতে গেলে সেখান থেকেই আমার বেতার শোনার হাতে খড়ি । আপনার পরিবারের সবাই অন্য কী বেতার শুনতেন ? আমার বাবা বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা শুনতেন। সে সূত্র ধরেই রেডিওর নব ঘুরাতে ঘুরাতে একদিন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সন্ধান পাই। চীন আন্তর্জাতিক বেতার আমার প্রিয় হয়ে উঠে এবং যখন আমি সময় এবং সুযোগ পাই তখনই বেতার শুনে থাকি ।
প্র: আপনি যখন বেতার শুনতে শুরু করেন তখন আপনার বয়স কত ছিল এবং কোন শ্রেণিতে পড়তেন ?
উ: তখন আমি স্কুলে পড়তাম ।
প্র: মি: মাহবুব আপনি জানেন যে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের অনুস্ঠান ছিল তিরিশ মিনিট। এখন এটা বেড়ে এক ঘন্টা হয়েছে, একে আপনি কী ভাবে দেখেন ?
উ: বিশ্বের বহু ভাষা ভিত্তিক বেতার কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চীন আন্তর্জাতিক বেতার বেশি সময় নিয়ে অনুস্ঠান প্রচার করছে, সে জন্য ধন্যবাদ জানাই। যেহেতু চীন আন্তর্জাতিক বেতার সুদীর্ঘ ছত্রিশ বছর যাবত প্রচার করছে । তার ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন যে অনুস্ঠান প্রচারিত হচ্ছে তার মধ্যে শ্রোতাদের চাহিদা অনুযায়ি বাংলাদেশের কিছু সংবাদও সংযোজন করা প্রয়োজন ।
প্র: আপনিতো প্রেসিডেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল রেডিও ফ্যানস ক্লাব , ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট । আপনাদের ক্লাবের সদস্য সংখ্যা কত ?
উ: সদস্য সংখ্যা ২১ জন । ঢাকায় আসলে ক্লাবের কার্যক্রমমফস্বলের মত ঘটা করে পালন করা যায় না । এখানে সবাই ব্যস্ততার মধ্যে থাকে। আমরা মাসে অন্তত একবার সবাই মিলে বসার চেস্টা করি এবং চীন আন্তর্জাতিক বেতার প্রতিদিনই শোনার চেস্টা করি ।
প্র: চীন আন্তর্জাতিক বেতারে সংবাদ ছাড়া প্রতিদিন নান ধরনের অনুস্ঠান প্রচার করে থাকে । এর মধ্যে কোন অনুস্ঠান আপনার ভালো লাগে ?
উ: এর মধ্যে আমার প্রিয় অনুস্ঠান হলো 'এই গ্রাম সেই জীবন' এবং চুং শাওলি পরিবেশিত কন্যা জায়া জননী । তবে অন্যান্য অনুস্ঠানও আমার প্রিয় ।
প্র: আপনার মত অন্যান্য শ্রোতাদেরও এই গ্রাম সেই জীবন অনুস্ঠানটি খুব প্রিয়। কিন্তু কেন ? এটা কি চীনকে জানতে সহায়তা করে না অন্য কোন কারনে ?
উ: আমি মনে করি চীন আন্তর্জাতিক বেতার একটি বিশাল তথ্যের ভান্ডার । এখানে চীনকে আরো গভীরভাবে জানার ক্ষেত্রে এ অনুস্ঠানগুলো শ্রোতাদের চাহিদা মিটিয়ে থাকে । চীনের নানা প্রান্তের গ্রামীন জীবনসহ সকল ধরনের খবরের পাশাপাশি চীনের সাধারন মানুষের জীবন যাত্রারএকটা পরিচ্ছন্ন চালচিত্র আমরা দেখতে পাই ।
প্র: চীন একটি হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহি বিশাল দেশ । প্রায় ১৩৫ কোটি লোক এই দেশটিতে বাস করে । এখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছে আর এই সংস্কৃতির সমন্বয়ে একটি আধুনিক চীন গড়ে তোলা হয়েছে মাও সে তুং-এর নেতৃত্বে । এই যে বিভিন্ন স্হানের বর্ণনা, বিভিন্ন গ্রামের বর্ণনা পাচ্ছেন তা আপনার চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে ?
উ: আসলে আমার রেডিও শোনার কারণ হচ্ছে বিভিন্ন দেশকে জানা । মহা-চীন যেহেতু বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ বিশাল সভ্যতার ক্ষেত্র চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সকর অনুস্ঠানই আমি মনোযোগ দিয়ে শুনতে চেস্টা করি । এ সব অনুস্ঠানের মধ্য দিয়ে আমি কিছু শিক্ষা নিতেও চেস্টা করে থাকি । প্রয়োজনীয় তথ্যাবলীও নোট করে রাখি ।
প্র: একটি গ্রামীন জনগোস্ঠী চীন আন্তর্জাতিক বেতারের শ্রোতা । এর কারন কি ?
উ : আমাদের বাংলাদেশের ৮০% এলাকাই গ্রাম । অনেক এলাকায় এখনো আধূনিক সুযোগ সুবিধা পৌঁছায় নি । অনেক শ্রোতা আছেন যারা পত্র-পত্রিকা পাঠ থেকে বন্চিত, টেলিভিশন দেখা থেকে বন্চিত, সে ক্ষেত্রে তাদের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে রেডিও । আমি মনে করি রেডিও একটি শক্তিশালি গণ-মাধ্যম হিসেবে শ্রোতারা রেডিও থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সহজেই লাভ করে থাকে ।
প্র: চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে চমতকার কুটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে । আপনি কি মনে করেন যে চীন আন্তর্জাতিক বেতার ভাল ভাল ভূমিকা পালন করছে ।
উ: চীন আন্তর্জাতিক বেতার বাংলদেশ এবং মহা -চীনের মধ্যে সেতুর ভুমিকা পালন করছে । এ কারনে দু'দেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পারস্পরিক আদান- প্রদানের মাধ্যমে দু'দেশের ঘনিস্ঠ যোগাযোগ বাড়ছে ।
প্র : আপনি জানেন যে চীন একটি জনবহুল দেশ এবং বাংলাদেশও একটি জনবহুল দেশ । চীনে নারী-পুরুষ সবাই কাজ করছে । কিন্তু বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম এবং উন্নয়নশীল দেশে নারীদের কাজ করার তেমন একটা সুযোগ নেই । কিন্তু চীনের চিত্রটি ভিন্নতর, সেখানে প্রচুর নারী কাজ করছে । এ বিষয়টিকে আপনি কী ভাবে দেখেন ? এ ছাড়াও একটি দেশের উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা কতটুকু বলে আপনি মনে করেন ?
উ : চীনের এই দৃস্টান্ত থেকে আমদের অনেক কিছু শেখার আছে বলে আমি মনে করি । আমাদের দেশের মত অন্যান্য উন্নয়নশীল চীনের এই মডেলকে গ্রহণ করতে পারে । বিশেষ করে আমাদের দেশের তৈরি পোষাক শিল্পে মহিলাদের অংশগ্রহণ কিছুটা বাড়ছে । শুধু তৈরি পোষাক শিল্পের মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকলে চলবেনা, আমদের জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে মহিলাদের আরো ব্যাপকভাবে অংশ গ্রহণ করাতে হবে । চীনের দৃস্টান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমদের সরকারী ও বিভিন্ন নীতি নির্ধারক পর্যায়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে । আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ভেদাভেদ ভুলে ঐকবদ্দ হয়ে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করতে হবে ।
প্র: চীন আন্তর্জাতিক বেতারের একজন নিয়মিত শ্রোতা হিসেবে আপনি জানেন যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নি:শর্ত সমর্থন করে যাচ্ছে । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কনভেনশন হল, চীন বাংলাদেশ মৈত্রি সেতু বিনা ইন্টারেস্টে করে দিয়েছে। আপনি আমর সাথে একমত হবেন যে, একটি দেশ চীন কোন স্বার্থ ছাড়া সাহায্য ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে, তো এই বিষয়টিকে আপনি কী ভাবে দেখেন ?
উ : চীন এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্রে চীন আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র বাংলাদেশ ও চীনের মৈত্রি বন্ধনের একটি অন্যতম প্রতীক। এর পাশাপাশি মৈত্রি সেতু আছে অনেকগুলো ্ । চীনা জনগণের এই অসামান্য উপহার বাংলাদেশের জনগণের জন্য নি:সন্দেহে অকৃত্তিম ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে ।
প্র: চীন আন্তর্জাতিক বেতারে যে সব অনুস্ঠান হচ্ছে সে অনুষ্ঠানের মান নিয়ে আপনি কি সংক্ষেপে কিছু বলবেন ?
উ : বর্তমানে চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে যে সব অনুস্ঠান প্রচার হচ্ছে এবং যে ধরনের শব্দ চয়নের মাধ্যমে অনুস্ঠান পরিবেশিত হচ্ছে তা আধুনিক । বর্তমান বিশ্বের বহু ভাষা ভিত্তিক রেডিওর মধ্যে এক ধরনের নিরব প্রতিযোগতা চলছে, সময়ের প্রেক্ষাপটে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাঙলা বিভাগের নতুন দু'জন বিশেষজ্ঞ আসার পর থেকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের অনুষ্ঠান আরো আধুনিক হয়েছে বলে আমি মনে করি । শব্দ চয়ন ও বাক্য গঠনও উন্নত হয়েছে ।
|