২০০৪ সালে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে প্রথমবার সমাজতান্ত্রিক সম্প্রীতিময় সমাজ গড় তোলার কথা উল্লেখ করা হয় । গত তিন বছরে সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলা চীনের বিভিন্ন স্তরের সরকারের অন্যতম প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে । বাস্তব ঘটনাগুলো প্রমাণ করেছে যে সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলা শুধু ব্যাপক জনসাধারণের অভিন্ন ইচ্ছাই নয় , এটা চীনের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়তাও বটে । বর্তমানে পেইচিংয়ে অনুষ্ঠানরত পার্টির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেসে সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলার ওপর কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ।
চাও ইয়ু চুন চীনের আনহুই প্রদেশের ছাও হু শহরের একজন প্রতিনিধি । তিনি ছাও হু শহরের আইনী সাহায্য কেন্দ্রের একজন আইনজীবী । আইনী সাহায্য কেন্দ্র হল অসহায় দেশবাসীর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আইনগত সাহায্য দেয়ার একটি সংস্থা । ১৯৯৯ সাল থেকে চাও ইয়ু চুন এ কাজ করতে শুরু করেন । গত আট বছরে তিনি মোট পাঁচ শ'রও বেশি এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তি করেছেন । তিনি বলেন , ছাও হু শহরের এই আইনী সাহায্য কেন্দ্র ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রথম দিকে এ খাতে সরকারী বরাদ্দ খুব কম ছিল । এখন এ খাতে সরকারের অর্থবরাদ্দ অনেক বেড়েছে । কারণ সরকার জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে । নাগরিকদের অনেক সমস্যা সমতা ও ন্যায়পরায়নতার সঙ্গে সম্পর্কিত । এসব সমস্যার নিরসন হলে আমাদের সমাজ আরো সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে ।
প্রতিনিধি চাও ইয়ু চুন যে ন্যায়পরায়নতার সমস্যার উল্লেখ করেছেন , তা' হলো চীনে সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলার অন্যতম কাজ । চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন ও শহরায়নের গতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে । এ প্রক্রিয়ায়বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব ও সমস্যা দেখা দিয়েছে । যেমন শহর ও গ্রামাঞ্চল এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতা , কর্মসংস্থানের চাপ , গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার পশ্চাত্পদ অবস্থা ও সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থার অসম্পূর্ণতা । ঠিক এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চীন সরকার সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে । আমাদের লক্ষ্য হল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব ও সমস্যার নিষ্পত্তিকরা এবং চীনে সমতা ও ন্যায়পরায়নতা সম্পন্ন সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলা ।
প্রতিনিধি সুই কুয়াং কো উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলুনচিয়াং প্রদেশের মুতান চিয়াং শহরের পার্টি কমিটির সম্পাদক । তিনি বলেন , মুতান চিয়ান শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল আঞ্চলিক উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতা । শহর ও শহরের উপকন্ঠ এবং জেলাগুলোর মধ্যে উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতার সমস্যা এখনোপ্রকট। এ সব সমস্যা সমাধানের জন্য মুতান চিয়াং পৌর সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । তিনি বলেন , এ শহরের সুইফেনহো জেলা ও মুলিন জেলা দুটি প্রতিবেশী জেলা । সুইফেনহো রাশিয়ার জন্য উন্মুক্ত একটি স্থলবন্দর। তাই সেখানকার অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে । কিন্তু মুলিন জেলা একটি অনুন্নত জেলা। মুলিন জেলাকে সাহায্য করার জন্য পৌর সরকার মুলিন জেলায় রপ্তানি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রসারের ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভাল ফলও পেয়েছে । একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , ২০০২ সালে মুলিন জেলার মাথাপিছু জি ডিপি ছিল ৭ হাজার ইউয়ান , ২০০৬ সালে মাথাপিছু জি ডি পির পরিমান ১৩ হাজার পাঁচ শ' ইউয়ান দাড়িয়েছে। চার বছরের মধ্যে তা দ্বিগুণ হয়েছে ।
কর্মহীন নাগরিকদের কর্মসংস্থান ও গরীব ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার জন্য সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । চীনের শিক্ষা মন্ত্রী চৌ চি বলেন , বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের সব ফি মৌকুফ করা হয়েছে । গরীব ছাত্রছাত্রীদের ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রতিটি স্কুলবয়সী ছেলেমেয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে ।
|