বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শ্রোতা কে এইচ এম জাকারিয়া তার চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কোন সাল থেকে চালু করা হয়? এখন আপনার এই প্রশ্ন সম্পর্কে কিছু বণর্না করবো। চীনা কমিউনিষ্ট পাটির একাদশ কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূণার্ঙ্গ অধিবেশনের পর চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ শুরু হয়। এই অধিবেশন ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। তখন চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব মাত্র শেষ হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, ১৯৬৬ সালের মে থেকে ১৯৭৬ সালের অক্টোবর পযর্ন্ত চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলছিল। এই 'সাংস্কৃতিক বিপ্লব' রাষ্ট্র ও জনগণের কঠোরতম দুবির্পাক ও প্রচুরক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী ছিল। এ দশ বছরে চীনের অথর্নীতির উন্নতি বিঘ্নিত হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে পিছিয়ে পড়ে। তখন অনেক কারখানা বন্ধু ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধু হয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে চীনের অথর্নীতি ভেঙ্গে যাওয়ার প্রান্তে উন্নীত হবে। এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৮ সালে চীনা কমিউনিষ্ট পাটির একাদশ কমিটির তৃতীয় পূণার্ঙ্গ অধিবেশনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের আহ্বান জানানো হয়। এ অধিবেশনে চীনের তত্কালীণ শীর্ষ নেতা তেং শিয়াও পিং সারা দেশের উদ্দেশ্যে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের কথা ঘোষণা করেন। চীনের গ্রামাঞ্চলে প্রথমে এ সংস্কার শুরু হয়। বাস্তবতা থেকে বোঝা যায়, এ নীতি নির্ভূল। চীনের সংস্কার ও উন্মক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার পরবর্তী বিশ বছরেরও বেশী সময় চীনে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। চীনের অথর্নীতি কয়েক গুণ বেড়েছে। চীনা জনগণের জীবনযাত্রার মানও অনেক উন্নত হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতিওঅজির্ত হয়েছে।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের শ্রোতা জাহিদুল হক তাঁর চিঠিতে চীনের বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এখন এ সন্বন্ধে কিছু বলবো। আনুমানিক খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর কাছাকাছি ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্ম চীন দেশে প্রবেশ করে। বৌদ্ধধর্ম চীনে আসার পর দীঘর্কাল ধরে চীনের কনফুসীয় ও তায়বাদী চিন্তাধারার সংমিশ্রণে ধীরে ধীরে চীনের সামন্তসমাজে শিকড় গেড়ে বসে এবং চীনের বিদ্যাচর্চা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়। বৌদ্ধধর্ম জনসাধারণের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। চীনের দশর্ন, নীতিশাস্ত্র, সাহিত্য ও শিল্পকলাবৌদ্ধধর্ম দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছে।
চীনের বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে বহু বিখ্যাত সন্ন্যাসীর আবির্ভাব হয়েছে। যেমন পূর্ব-চিন রাজবংশের বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ফা সিয়ান ও থাং রাজবংশের বৌদ্ধ সন্ন্যাসী স্যুয়ান চুয়া ভারতবর্ষে বৌদ্ধশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে যান। চীন-ভারত সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাসে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁরা অন্যতম।
বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার শ্রোতা মুসা তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, কোন সালে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তরে বলছি, ১৯৭৫ সালের ৪ অক্টোবর দু'দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও আদান-প্রদান নিবিড় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক , শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি ও সাফল্য অজির্ত হয়েছে। বিশেষ করে সরাসরি বিমান লাইন খোলার পর দু'দেশের মধ্যে যোগাযোগ আরও নিবিড় হয়ে উঠেছে।
|