ইউ কুয়াং ইয়ু : আপনাদেরকে স্বাগত জানাই আমাদের এখানে আসার জন্য। প্রথমে আপনারা নিজেদের একটু পরিচয় দেন।
- জ্বি আসসালামু আলাইকুম, আমার নাম আবু তাহের, আমি তথ্য মণ্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব। আমি দিলদার আহমেদ উপসচিব, তথ্য মণ্ত্রণালয়। আমি রিয়াজউদ্দিন শেখ বাদশা, বাংলাদেশ টেলিভিশন।
ইউ কুয়াং ইয়ু : আচ্ছা,আমি শুনেছি এবার আপনারা পেইচিংয়ের চলচ্চিত্র, বেতার ও টেলিভিশন মেলায় অংশ নেয়ার জন্য এসেছেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে কয়জন সদস্য রয়েছেন ?
আবু তাহের : আমরা বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে তিনজন সদস্য এই মেলায় অংশ গ্রহণ করার জন্য এসেছি। মেলাটি আমাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে এবং ১৬০টি দেশ আমাদের জানা মতে,এখানে পার্টিসিপেট করেছে।এখানে যে ব্যাপক টেকনোলোজিক্যাল পরিবর্তন হয়েছে সেটাও আমরা অনেক মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেছি। অনেক কম্পানির সাথে,মিডিয়া কম্পানির সাথে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে,তাদেরকে আমরা ইনভাইট করেছি টু ভিজিট দি বাংলাদেশ, বাংলাদেশকে দেখার জন্য এবং বাংলাদেশের কি কি সম্ভাবনা আছে সেগুলি আলাপ করার জন্য।
ইউ কুয়াং ইয়ু : এই ধরনের মেলার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে চলচ্চিত্র,টেলিভিশন বা বেতার সম্পর্কে যে মতবিনিময় এবং অনুষ্ঠান বিনিময়ের সুযোগ দেয়া হচ্ছে তাতে বাংলাদেশ আর চীনের সম্পর্কে অনুষ্ঠান বিনিময়ের ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি হয়েছে কি ?
দিলদার আহমেদ : ধন্যবাদ, আমি প্রথমেই বলবো যে আসলে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সংস্কৃতির এক্সচেঞ্জ শুরু হয়েছে রেডিও পিকিং-এর মাধ্যমে বহু বছর আগে। এবং সত্যি কথা বলতে কি আপনারাই এটার অগ্রদূত। আমরা এখন এসেছি কারণ ধীরে ধীরে প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে। আগে যে জিনিসটা রেডিওর মাধ্যমে হতো সেটি এখন টেলিভিশনের মাধ্যমে এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আরো ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করছে । আমরা আজকে সকালে যে মেলাতে গিয়েছিলাম সেখানে ১৬০টির ওপরে স্টল রয়েছে । তারা বিভিন্ন প্রযুক্তিতে এ বিষয়গুলো তাদের যে মিডিয়া ক্লাব আছে বা মিডিয়া প্রতিষ্ঠান আছে তার মাধ্যমে তারা চেষ্টা করছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন যে আন্তরিক সহযোগিতা আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে এটা অনেক বাড়বে, কারণ চীন এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেএবং চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার একটি দেশ। আমাদেরও লোকজন ধীরে ধীরে চীনে অনেক বেশি আসতে শুরু করেছে। অনেকে পড়াশুনার জন্য আসছে অনেকে উন্নত প্রযুক্তি শেখার জন্য আসছে। চীন বাংলাদেশের খুব নিকটেরই একটা দেশ, খুব দূরে নয়, যাতাযাতেরও সুবিধা। আমার বিশ্বাস যে অদূর ভবিষ্যতে যখন মানুষের আদান প্রদান বেড়ে যাবে তখন মিডিয়ার আদান প্রদানও বাড়বে। অনুভূতির আদান প্রদান বাড়বে, চলচ্চিত্রের আদান প্রদান, টেলিভিশন রেডিও সব বেড়ে যাবে। সেই উপলক্ষে আজকে আমরা বড় মাপের একটি দল বাংলাদেশ থেকে এসেছি, আমরা চিহ্নিত করতে এসেছি কোন কোন সেক্টরে আমরা কাজ করতে পারি। আমার ভালো লেগেছে আপনাদের এখানে এসে এতক্ষণকাজ করে । রেডিও সেক্টরে যদিও আমাদের রিলেশন আছে, কিন্তু এটা আরো বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। আপনারা যদি আপনাদের এখান থেকে কর্মী আমাদের ওখানে ট্রেনিং-এর জন্য পাঠান আমরা অবশ্যই চেষ্টা করবো, কারণ এটা আমাদের তথ্য মণ্ত্রণালয়ের নিজস্ব কার্যক্রমের ভিতরেই পড়ে। ধন্যবাদ।
ইউ কুয়াং ইয়ু : আপনার কথা শুনে খুব খুশি হলাম। আমি জানতে চাই, আগামী ২০০৮ সালের যে অলিম্পিক গেমস হবে তার জন্য চীন সরকার নানা ক্ষেত্রে প্রস্তুতির কাজ করছে, বাংলাদেশের মিডিয়ার অলিম্পিক গেমসের জন্য কোন বিশেষ পরিকল্পনা আছে?
রিয়াজউদ্দিন শেখ বাদশা : আপনি যেটা বললেন সামনের বছর যে অলিম্পিক গেমস হচ্ছে সেটা অবশ্যই বাংলাদেশ টেলিভিশন অর্থাত্গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান, ওপেনিং ক্লোজিংতো সরাসরি সম্প্রচার করবেই, তারপর প্রতিদিন হাইলাইটস দেখানো হবে। তাছাড়া ভালো ভালো ইভেন্টগুলোও দেখানো হবে। আপনারা জানেন যে সরকারের অধীনে যতগুলো স্পোর্টস হয় সেগুলো বাংলাদেশ টেলিভিশন সবসময় সরাসরি দেখিয়ে থাকে এবং বাংলাদেশের দর্শক অধীর আগ্রহে বসে থাকে যে কোন খেলা দেখার জন্য। তথ্য মন্ত্রণালয় সেইসাথে রেডিও টেলিভিশনকে নিয়ে আমাদের একটি টিম হয় , সেই টিমের মাধ্যমে আমরা এগুলো প্রচার করে থাকি।
ইউ কুয়াং ইয়ু : আরেকটা বিষয় আমি জানতে চাই, বিশ ত্রিশ আগে একসময় পাকিস্তানের চলচ্চিত্র আমাদের দেশে খুব চলতো। তখন অনেকেই এগুলোকে খুব জনপ্রিয় বলতো। কিন্তু মাঝখানে বেশ কিছুদিন-মনে হয় আমাদের চোখের সামনে থেকে সেগুলো হারিয়ে গেছে। গত বছর থেকে ভারতের কিছু টেলিভিশন নাটক আমাদের টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে। অনেকের কাছে এটা ভালো লাগছে। বাংলাদেশের নাটক বা চলচ্চিত্র চীনে বাজার পাওয়ার জন্য আপনাদের কি পরিকল্পনা আছে ?
আবু তাহের : এ প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা ইতিমধ্যেই একটা কমিটি গঠন করেছি। আমাদের যারা ফিল্ম তৈরি করে সেই তৈরি ফিল্ম আমরা বিভিন্ন দেশে পাঠাতে চাই। কিছু রপ্তাণিগত প্রক্রিয়ার কারণে সেটা অনেকদিন ধরে বন্ধ আছে। আমরা আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কোন মিডিয়া কম্পানিকে যারা ফিল্ম, সিডি, ডিভিডি তৈরি করে তাদেরকে পারমিশন দিতে পারিনা।ইতোমধ্যে সরকার একটা কমিটি গঠন করেছে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি, এই কমিটির মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন দেশে আমাদের নাটক সিনেমা পাঠানোর পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করি আমরা আগামী এক বছরের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠাতে পারব। এতে বিভিন্ন দেশে যারা বাঙালি শ্রোতা তারাতো উপকৃত হবেনই,পাশাপাশি যাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে আগ্রহ আছে এমন বিদেশীরাও উপকৃত হবেন। এ ব্যাপারে সরকার খুব সক্রিয় আছে। আশা করি আমরা সিডি-ডিভিডি ফর্মে আমাদের চলচ্চিত্র,গান , নাটক আমরা পাঠাতে পারব।
ইউ কুয়াং ইয়ু : আমাদের দেশের টেলিভিশন অনুষ্ঠানে যদি বাংলাদেশের নাটক দেখা যায় তাহলে আমরা খুব খুশি হবো। আপনিও বলেছেন এখন দিনে দিনে নতুন প্রযুক্তি বের হচ্ছে, বিশেষ করে বেতার বা টেলিভিশন ক্ষেত্রে। এবারের মেলায় আপনারা কি বিশেষ কোন নতুন প্রযুক্তি লক্ষ্য করেছেন যা বাংলাদেশে কাজে লাগানো যায়?
দিলদার আহমেদ : আজকেই আসলে এই মেলা শুরু হলো। আমরা আরো তিন দিন দেখবো। আপাতত আজকের সকালের সেশনে আমরা যে জিনিসটা লক্ষ্য করেছি সেটি হলো এখানে টেলিভিশনের কিছু চ্যানেল আছে যারা ন্যাচারাল জিনিস নিয়ে কাজ করছে, যেমন গাছপালা, জীবজন্তু, নদী। আমাদের বাংলাদেশে অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে, এই ন্যাচারাল বিউটিটাকে যাতে উপস্থাপন করা যায় ভবিষ্যতে, মানুষ যেন এই জিনিসগুলো খেয়াল করে এবং হৃদয়ঙ্গম করতে পারে সেটা আমরা চেষ্টা করবো।
ইউ কুয়াং ইয়ু : এটাই আপনাদের প্রথম চীন সফর নাকি?
রিয়াজউদ্দিন শেখ বাদশা : জ্বি আমার এটাই প্রথম চীন সফর
ইউ কুয়াং ইয়ু : পেইচিং কেমন লাগছে ?
রিয়াজউদ্দিন শেখ বাদশা : এক কথায়তো বোঝাতে পারব না। তবে সত্যিকার অর্থে রাস্তাঘাট গাড়ি নিয়মকানুন আমার ভালো লেগেছে। ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে শুরু করে সবাই যে লেখাপড়া জানে, কমপক্ষে নিজের মাতৃভাষাটা তারা যে লিখতে পড়তে পারে এটা একটা অসাধারণ ব্যাপার। অনেক দেশে দেখা যায় যে বলতে পারে কিন্তু লিখতে পারে না। এখানে একটা ট্যাক্সি ড্রাইভারকে একটা চাইনিজ ভাষা লিখে দিলেই হলো, সে ঠিক জায়গামতো পৌছে দেয়। আটটি জেলা এবং আট কোটি মানুষের বিশাল শহর এই পেইচিং, এখানে কত হোটেল কত রাস্তা কত জায়গা তারপরও একটা ট্যাক্সি ড্রাইভারকে চাইনিজ ভাষায় ঠিকানাটা দেখালে জায়গামতো পৌছে দেয়। আমরা রাত দুইটার সময় এসেছি এয়ারপোর্ট থেকে , আমাদের আসতে কোন অসুবিধা হয়নি,আমরা ড্রাইভারকে শুধু কার্ডটা দেখিয়েছি , ওখানে চাইনিজ ভাষা ছিল । এটা শিক্ষা, নিয়মকানুন , আইন শৃংখলা আর আচার ব্যবহারের ফসল। ভালো আচার ব্যবহারতো আপনাদের ঐতিহ্য। সবসময় নমনীয় ব্যবহার, সুন্দর হাসি আমাদের চোখ কেড়েছে। এক কথায় বলবো সত্যিই ভালো লেগেছে।
আবু তাহের : আমি একটু বলতে চাই কনফুসিয়াসের দেশ চীন মাও সেতুং-এর দেশ চীন গত দশ বছরে সেই চীনের যে বিশাল উন্নয়ন হয়েছে সেটা ঈর্ষনীয়। আমার মনে হয় এখন অর্থনৈতিক শক্তির দিক দিয়ে চীন তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে তাতে আশা করি সহসাই চীন প্রথম স্থানে চলে যাবে ।
চীনে এসে আমাদের যে সমস্যা হয়েছে, সব বিদেশীদেরই হয় সেটা ভাষার সমস্যা। আমি মনে করি চীনাদের একটু বেশি করে ইংরেজি শেখা দরকার । ইংরেজির প্রতি একটু যত্নবান হলে পেইচিং একটি মাল্টিন্যাশনাল সিটিতে রূপ নেবে। চীন সরকারের এ দিকটা দেখা উচিত। তবে চীন একটা চমত্কার দেশ, একটা সুশৃংখল দেশ। আমরা আশা করি চীন তার অর্থনৈতিক সাফল্য অব্যাহত রাখুক। আমরা এও আশা করি যে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে সেই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো অনেক জোরদার হবে।
দিলদার আহমেদ : আমি সময় স্বল্পতার জন্য এটুকুই বলবো, আমি চাই চীনের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাক এবং চীনের অনেক লোক বাংলা শিখুক।
ইউ কুয়াং ইয়ু : আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।
আবু তাহের : আমাদের পক্ষ থেকেও আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
|