প্রঃ ইলিয়াস সাহেব, প্রথমেই আমি সি আর আইয়ের বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।
উঃ আমিও চীন আন্তর্জাতিক বেতারের পরিচালক মিস ইউ কুয়াং ইয়ুকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি যাওয়ার আগে আমাকে দেশে ফিরে এই সাক্ষাত্কার দেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য।
প্রঃ শ্রোতাবন্ধুরা, বহুদিন ধরে আপনার কণ্ঠ শুনেছেন, কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত পরিচয় পান নি। আজকের এই সুযোগে এই সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
উঃ ধন্যবাদ, ইতোমধ্যে শ্রোতাবন্ধুরা আমার নাম জানতে পেরেছেন। আমি আসলে সাংবাদিকতা শুরু করি দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার হিসেবে ১৯৯২ সালে। এখানে আমি দীর্ঘ দিন কাজ করেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টিং করেছি। এক পর্যায়ে আমার ছাত্র জীবন শেষে ষ্টাফ রিপোর্টারে পদোন্নতি পাই। আমি ১০ বছর কাজ করার পরে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করি এবং ২০০৩ সালে সেখানে আট মাস কাজ করার পর আমি, তখন প্রকাশিতব্য দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট হিসেবে যোগ দেই। এই পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে আমি ২০০৫ সালে জাতিসংঘের খুব গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ পরিষদের ৬০তম অধিবেশন কাভার করি আমাদের প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে। এই ফাঁকে একটু বলে নেই, আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের রিপোর্টার ছিলাম তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম। একই সঙ্গে আমার দেশ পত্রিকায় চাকরিরত অবস্থায় আমি বাংলাদেশের রিপোর্টারদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে। এরপরে আমি আমার দেশ পত্রিকা থেকে চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালে কাজ করতে আসি এবং সহসাই চলে যাচ্ছি।
প্রঃ এই মাত্র আপনি শুধু চাকরী জীবনের কথা বলেছেন। আপনার পরিবার সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
উঃ আমি আসলে আমার স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পরপরই বিয়ে করি। আমি দুই মেয়ের জনক। বড় মেয়ের বয়স ৮ এবং ছোট মেয়ের বয়স ৪ বছর। তারা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন আমি বাংলাদেশে যাবো। আমার বড় মেয়ে একটি ইংরেজী স্কুলে পড়ে। আমার ছোট মেয়েটি এ বছর স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এবং সে খুব আগ্রহ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে।
প্রঃ আমি গতকাল আপনার মেয়ে এবং আপনার স্ত্রীর ছবি দেখেছি। সুন্দর স্ত্রী সন্তানদের বাংলাদেশে রেখে পেইচিং চলে এসেছেন। এর মাধ্যমে আপনার কী কী লাভ হয়েছে আর কী কী কষ্ট পেয়েছেন?
উঃ হ্যাঁ, এ সম্পর্কে বলার আগে আমি একটু বলে নেই যে, আমার বড় মেয়ের স্কুলের জন্যই ওদেরকে আমি পেইচিং নিয়ে আসি নি। কিন্তু আমি দীর্ঘদিন আমার বাচ্চা ও স্ত্রী ছাড়া পৃথিবীর কোথাও থাকি নি। কষ্টতো আছেই আবার অর্জনও আছে , যেমন আপনাদের মত অনেক সহকর্মী পেয়েছি, আপনাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। তো আমি বলবো যে, চীনে আমার বিশাল অর্জন আছে।
প্রঃ চীনে আসার আগে আপনি বাংলাদেশের তথ্য মাধ্যমে চাকরি করতেন। দু'দেশের তথ্য মাধ্যমগুলোর সম্পর্কে আপনার কোন অনুভূতি আছে কি?
উঃ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। রেডিওর বিশাল ভাষাভাষি জনগোষ্ঠির জন্য যে ভাষা প্রচারিত হচ্ছে সেই বাংলা বিভাগের পরিচালক হিসেবে আপনিও খোঁজ রাখছেন যে বাংলাদেশে গণ মাধ্যমের খুব দ্রুত বিকাশ হচ্ছে। যেমন প্রচুর পত্রিকা নতুন নতুন বের হচ্ছে; প্রচুর টেলিভিশন চ্যানেল আসছে এবং একবাক্যে বলা যায় যে, বাংলাদেশের গণ মাধ্যম খুব ফ্রি। এবং যে যা মনে করেন সেটাই প্রকাশ করতে পারছেন বাংলাদেশের গণ মাধ্যমে। চীনেও সে সুযোগ আছে। তবে একটা বিশাল পার্থক্য দেখেছি আমি বাংলাদেশের গণ মাধ্যমগুলোর সঙ্গে আমি আমার দেশের সমালোচনা করছি না। আমি গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র হিসেবে বলছি যে, হয়তো গ্র্যামাটিক্যালি ঠিক আছে যে নেগেটিভ নিউজগুলো বেশি প্রজেক্ট করা হয়। আমি সাংবাদিক হিসেবে বলতে পারি যে, আমরা একটু অতিঞ্চিত করে ফেলি অনেক সময়। কিন্তু চীনে এই বিষয়টি খুব কম। চীনে মানুষকে পজিটিভ নিউজ জানানো হয়। এর ফলে একটা জিনিস খুব ভালো হচ্ছে যে, মানুষের পজিটিভ চিন্তাধারা গড়ে উঠছে। এটা খুব ভালো দিক। চীনেওতো অনেক চ্যানেল আছে নানা প্রদেশের এবং বিভিন্ন শহরেরও। এমনকি বেইজিংয়েই কয়েকটি চ্যানেল আছে। চীনের লোকজন এখন শিক্ষিত হচ্ছে এবং বিশ্বের নানা দিক এবং নানা বিষয় সম্পর্কে জানছে। এখানে রাতে বাসায় ফিরে গিয়ে চীনা ছবি দেখতাম। বিভিন্ন বিদেশী ছবি এখানে ডাবিং করা হচ্ছে। আপনি কী ভাবে নেবেন আমি বলতে পারছি না। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াগুলো শোনা বা দেখার ক্ষেত্রে এখানে একটু কড়াকড়ি আছে কোন কোন ক্ষেত্রে। কিন্তু সেটা কোন বড় বাধা নয়। কারণ অন্যান্য মাধ্যমে সব খবরই এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এটা চীন সরকারের পলিসি, এক অর্থ ভালো, যেমন তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা ওয়েষ্টার্ন মিডিয়া যে ভাবে প্রজেক্ট করে , তারা নিজেদের দেশের সমস্যা তেমন একটা প্রজেক্ট করে না। কাজেই জনগণের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টির যেমন পজিটিভ দিক আছে, তেমন নেগেটিভ দিকও আছে। তবে আমি বলবো যে, এর বেশির ভাগই পজিটিভ দিক। কারণ চীন এতবড় একটি দেশ, একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে নানা পলিসি নিতে হচ্ছে। এবং এই দেশতো আমি এক বছর থাকলাম। বেইজিংয়ের নানা অলিতে গলিতে ঘুরেছি। এত চমত্কার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি । মানুষের জন্য মানুষের সহানুভূতি । এসব জিনিস অর্জন করতে একটা নিয়ন্ত্রণ দরকার আছে। নিয়ন্ত্রণ ছাড়া হয় না আসলে। আমার মনে হয়, চীন সরকার সেই বিষয়টাই করছেন। ওয়েস্টার্ন মিডিয়া সম্পর্কে এখন সবাই বলে যে, তারা যে ভাবে প্রজেক্ট করে বিশ্বের ভাবমূর্তি সে ভাবে গড়ে ওঠে। মাঝে মাঝে কিছু রিপোর্ট হয়েছে আমি দেখেছি বিবিসি ও সি এন এন-এ। তবে এটুকুই আমার অবজাবভেশন যে, গভর্ণমেন্ট যদি কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তা গভর্ণমেন্টের তেমন নেগেটিভ দিক না। এ বিশাল জনগোষ্ঠি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার আছে বলে আমি মনে করি। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|